পুবের জানালা: একটি নবজাতককে বাঁচানোর গল্প
  2016-12-28 15:52:02  cri

 



২২ ডিসেম্বর ২০১৬। সকাল সাড়ে ৭টা। একটি অ্যাম্বুলেন্স চীন সিন চিয়াং স্বায়ত্বশাসিত প্রদেশের রাজধানী উরুমুছিতে পৌঁছেছে। অ্যাম্বুলেন্সে আছে একটি নবজাতক। উরুমুছি শিশু হাসপাতালের ডাক্তার এ নবজাতককে তাত্ক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় চিকিত্সা দিলেন।

হাসপাতালে পৌঁছার আগে নবজাতককে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি ১৪ ঘন্টায় অতিক্রম করে ১৪২০ কিলোমিটার পথ। আজকের 'পুবের জানালা' অনুষ্ঠানে আমরা এই অবিস্মরণীয় গল্পই শুনবো।

২০ ডিসেম্বর ২০১৬। হে থিয়ান শহরের মো ইউয়ু জেলার একজন নবজাতকের শরীরে gastroschisis রোগের লক্ষণ দেখা গেল। তবে স্থানীয় হাসপাতালে এ রোগের চিকিত্সা নেই। তাকে নিয়ে যেতে হবে রাজধানী উরুমুছির বড় হাসপাতালে। ওই দিন দিবাগত রাত থেকে চিকিত্সার জন্য শিশুটির দীর্ঘ যাত্রা শুরু হয়। তাকে যথাসম্ভব দ্রুত উরুমুছির হাসপাতালে পাঠাতে সিন চিয়াং হাইওয়ে পুলিশ বিভাগ সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

রাতের পর ভোর; তারপর আবারও রাত এলো। চীনের বৃহত্তম মরুভূমি তাক্‌লিমাকান এবং থিয়ান পাহাড় অতিক্রম করে দক্ষিণ থেকে উত্তরে সিন চিয়াংয়ের ৫টি শহর অতিক্রম করেছে গাড়িটি। ৫টি শহরেই হাইওয়ে পুলিশ এ গাড়িটির জন্য গ্রিন চ্যানেল খুলে দেয়, যাতে কোথাও গাড়িটিকে থামতে না-হয়।

২১ ডিসেম্বর ২০১৬। রাত ১১টা। আ খ্য সু এলাকার পুলিশ আই খে পাই এ্য'র পাহারায় অ্যাম্বুলেন্সটি ১৪০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। পথে তিনি ও তার সহকর্মীরা অ্যাম্বুলেন্সে ওই শিশুর স্বজনদের জন্য কিছু পানীয় ও খাবার সরবরাহ করেন। যখন তার কতর্ব্য শেষ হয় তখন ২২ ডিসেম্বর রাত একটা।

হাইওয়েতে খু এ্য ছু নামক একটি জায়গায় ঘন কুয়াশা পড়েছে। হাইওয়ে পুলিশ এ সমস্যা সমাধানে দু'টি অতিরিক্ত গাড়ি নিয়োগ করে। গাড়ি দু'টি অ্যাম্বুলেন্সের সামনে ও পেছনে পাহারায় নিয়োজিত হয়। এভাবে অ্যাম্বুলেন্সটি অতিক্রম করে আরও খানিকটা পথ।

সময় জীবনের মতো মূল্যবান। সময় কাটছিল এবং গাড়িটিও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গন্তব্যের দিকে এগুচ্ছিল। অ্যাম্বুলেন্সটি যে এলাকায় যায়, সে এলাকার পুলিশ সেটিকে গাইড করে নিয়ে যায়। একটি শিশুকে বাঁচাতে সবার এ এক সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

২২ ডিসেম্বর ২০১৬। সকাল সাড়ে ৭টা। অবশেষে অ্যাম্বুলেন্সটি পৌঁছায় উরুমুছি শিশু হাসপাতালে। ৯টায় শুরু হয় সার্জারি।

নবজাতকের পিতা জানালেন, হে থিয়ান থেকে উরুমুছি আসাটা অনেক কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু সবার সাহায্য ও সহযোগিতায় এ কঠিন পথ অতিক্রম করা গেছে। তিনি জানালেন, তিনি অভিভূত ও কৃতজ্ঞ।

ঘটনাটি ইন্টারনেটে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা নিজ নিজ মন্তব্য প্রকাশ করেন। তারাও অভিভূত। তাদের ভাষ্য, গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়ে দেশের বিভিন্ন জাতির মানুষ এক পরিবারের মতো আচরণ করেছে। এটা যেন একটি ভালোবাসার র‍্যালি। তাদের প্রত্যাশা, নবজাতকটি দ্রুত সেরে উঠবে এবং দীর্ঘজীবন লাভ করবে।

২২ ডিসেম্বর ২০১৬। দুপুর ১২টা। দু'ঘন্টার সার্জারি শেষ। উরুমুছি শিশু হাসপাতালের উপ-প্রধান জানালেন, সার্জারি সফল হয়েছে। আর কোনো ভয় নেই। নবজাতকটি দ্রুত সেরে উঠবে।

জনকল্যাণ সংস্থা ইউয়ু থু তহবিলের দায়িত্বশীল ব্যাক্তি নবজাতকের এ গল্প উই চ্যাটে শেয়ার করেন এবং একটি তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, সিন চিয়াংয়ের একটি কোম্পানি শিশুর চিকিত্সাব্যয় বহন করেছে এবং অ্যাম্বুলেন্সের ফি পরিশোধ করেছে।

অ্যাম্বুলেন্সটি যখন দীর্ঘ পথ অতিক্রম করছিল, তখনও উরুমুছি হাসপাতাল এবং হে থিয়ান মো ইউয়ু হাসপাতালের ডাক্তারদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। অ্যাম্বুলেন্সটি গন্তব্যে পৌঁছার আগেই উরুমুছি শিশু হাসপাতাল চিকিত্সকদের একটি বোর্ড গঠন করে। সেই বোর্ড শিশুটির শরীরে সার্জারির সার্বিক প্রস্তুতিও আগেভাগেই গ্রহণ করে ফেলে।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ এ ঘটনাকে 'সিন চিয়াংয়ের ভালোবাসা' নাম দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এ গল্পটি শীতের তীব্র ঠাণ্ডায় যেন আরামদায়ক উষ্ণতার মতো। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040