চীনের প্রথম 'পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন'
  2016-12-24 09:08:11  cri
বন্ধুরা, আমরা আগের অনুষ্ঠানে বছরের শ্রেষ্ঠ ফেসবুক ফ্রেন্ডজ নির্বাচন করার কথা বলেছিলাম। আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমি এ বছরে আমাদের পাঁচ জন শ্রেষ্ঠ ফ্রেন্ডজের নাম ঘোষণা করবো। তাঁরা হলেন: বিধান চন্দ্র স্যানাল, মানিক মাহমুদ, অনাথ বন্ধু দেবনাথ, সিরাজ মাস্টার এবং শান্তা মারিয়া। আমরা এ পাঁচ জন ফ্রেন্ডকে অভিন্দন জানাই। আমরা আপনাদেরকে উপহার পাঠাবো। ধন্যবাদ। "যে-কোনো ধরনের সহিংসতা নারী ও শিশুদের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং সার্বিকভাবে একটি গোটা জনগোষ্ঠীও তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ চ্যালেন্ঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমি ২০০৮ সালে জাতিসংঘে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব তুলেছিলাম।"

আপনারা শুনছিলেন ২০১৩ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধবিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবসে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুনের ভাষণের অংশবিশেষ। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং নারী ও শিশু'র অধিকার সুরক্ষার দায়িত্ব বর্তায় সকল দেশ ও জাতির ওপর। চীনও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০১৬ সালের পয়লা মার্চ চীনে প্রথম 'পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন' আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। এর মাধ্যমে চীনে পারিবারিক সহিংসতা 'পরিবারের সমস্যা' থেকে 'রাষ্ট্রীয় সমস্যায়' উন্নীত হয়। কিন্তু এই আইনটি প্রণয়ন থেকে শুরু করে কার্যকর পর্যন্ত—গোটা প্রক্রিয়াটি কিন্তু সহজ ছিল না। "'পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন' প্রমাণ করে যে, চীন মানবাধিকার সুরক্ষায় সংকল্পবদ্ধ। চীন দৃঢ়ভাবে সব ধরনের পাররিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে। এখন পারিবারিক সহিংসতা শুধু পরিবারের বিষয় থাকবে না। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্র, সমাজ ও প্রতিটি নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।"

চীনা জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিশনের আইনগত কর্ম-কমিটির সামাজিক আইন কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ছেন জিয়া লিন এ কথাগুলো বলেন। তিনি 'পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন'-এর খসড়া প্রণয়ন, যাচাই ও কার্যকরের প্রতিটি স্তরে অংশ নেন।

২০১০ সালে চীনা গণ কংগ্রেসের আইনগত কর্ম-কমিটি সামাজিক আইন কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করে নারী ও শিশু অধিকার সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করে। তখন থেকে 'পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন' প্রণয়নের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এ সম্পর্কে ছেন জিয়া লিন বলেন, "বিগত পাঁচ বছরে আমি সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নারী ফেডারেশনের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমরা হুনান, ফুজিয়ান, কুয়াংদং ও জিয়াংসু প্রদেশের স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। পাশাপাশি আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিদেশি আইন মহলের বিশেষজ্ঞদের মতামতও নিয়েছি।"

এ ছাড়া, সারা চীনে বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরের প্রায় ২০ বছরের পারিবারিক সহিংসতাসম্পর্কিত কাজকর্ম আইনটি প্রণয়নে সাহায্য করেছে। এ সম্পর্কে ছেন জিয়া লিন বলেন, "অধিংকাশ এলাকায় পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আমরা এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি। যেমন, হুনান প্রদেশ এ ক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য অর্জন পেয়েছে। আমরা প্রদেশের অভিজ্ঞতাকে আমলে নিয়েছি।"

আসলে হুনান-ই হচ্ছে চীনের প্রথম প্রদেশ যেখানে সবচেয়ে সফলভাবে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ করা গেছে। গত শতাব্দীর ৯০-এর দশক থেকে এ সমস্যা মোকাবিলা শুরু করে হুনান প্রদেশ।

১৯৯৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন বেইজিংয়ে আয়োজিত হয়। সম্মেলনে 'বেইজিং ঘোষণা' গৃহীত হয়। ঘোষণায় পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সামজের মনোভাব ও সংকল্প প্রতিফলিত হয়। তখন চীনও কেন্দ্রীয়ভাবে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধের গুরুত্ব বুঝতে পারে। বিশ্ব নারী সম্মেলন শেষ হওয়ার পর হুনান প্রদেশের নারী ফেডারেশন অধিকার বিভাগের পরিচালক রং স্যিউ ছিন প্রদেশটির গণ কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ এবং বিচারিক বিষয়ক কমিশনে 'স্থানীয় পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন' প্রণয়নের আহ্বান জানান। তিনি তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে প্রদেশের ২৫৪টি পরিবারিক সহিংসতার ঘটনা নিয়ে মতবিনিময় করেন এবং 'পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে স্থানীয় আইন প্রণয়ন প্রয়োজন' শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "প্রতিবেদনটি আমি প্রদেশের গণ কংগ্রেসের ৬০ জনেরও বেশি স্থায়ী সদস্যকে পাঠিয়েছি। ২০০০ সালের মার্চ মাসের শেষ দিকে হুনান প্রদেশের নবম গণ কংগ্রেসের ১৪তম সম্মেলনে 'পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন' গৃহীত হয়।"

পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে এটিই ছিল চীনে প্রথম আইন।

আইনটি প্রকাশিত হওয়ার পর হুনান প্রদেশের উচ্চ আদালত, গণ নিরাপত্তা ব্যুরো আলাদাভাবে আইনের খুঁটিনাটি প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে প্রদেশটিতে নেওয়া হয় পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা।

এরপর বেশ কয়েকটি প্রদেশ হুনান প্রদেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং স্থানীয় পর্যায়ে আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত সারা চীনের ২৯টি প্রদেশ, অঞ্চল ও শহরে পারিবারিক সহিংসতা বিরোধী আইন প্রণীত হয়। পাশাপাশি 'ব্যক্তিগত বিষয় সুরক্ষা আইন'-ও চীনের ২শ'রও বেশি আদালতে ব্যবহৃত হয়।

পাশাপাশি চিয়াংসু প্রদেশের নারী ফেডারেশন ও গণ অধিকার সংস্থা যৌথভাবে 'পারিবারিক সহিংসতা সতর্কপত্র' প্রদানের ব্যবস্থাও নেয়। চীনা গণ কংগ্রেসের আইনগত কর্ম কমিশনের সামাজিক আইন কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ছেন জিয়া লিন বলেন, এটি হল চীনের বৈশিষ্ট্যময় ব্যবস্থা। তিনি আর‌ও বলেন, "এ ব্যবস্থার লক্ষ্য হচ্ছে, ছোট-খাটো পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় অভিযুক্তকে সতর্ক করে দেওয়া। এই সতর্কপত্র আদালতেও প্রমাণ হিসেবে দাখিল করা হবে।"

চীনা সর্বোচ্চ আদালতের উপ-সভাপতি হুয়াং এর মেই বলেন, "আইনগত পদ্ধতিতে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ করা দেশের দায়িত্ব।"

আইনটি প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় নারী ফেডারেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০০৮ সালে জাতীয় নারী ফেডারেশন বেসামরিক মন্ত্রণালয় ও গণ নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়সহ আটটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছে 'পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে প্রস্তাব' পেশ করে। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার দায়িত্ব বর্ণনা করা হয়। এরপর জাতীয় নারী ফেডারেশন টানা ছয় বারের মত চীনের দু'টি অধিবেশনে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে 'পারিবারিক সহিংসতা বিরোধী' আইন প্রণয়নের প্রস্তাব উত্থাপন করে। ২০১৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে 'পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন' প্রণয়নের কাজকে পাঁচসালা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর জাতীয় নারী ফেডারেশন আইনের খসড়া প্রণয়ন করে। জাতীয় নারী ফেডারেশনের অধিকার বিভাগের পরিচালক গাও শা ওয়েই বলেন, "আইনটির প্রণয়নকাজ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তির পর জাতীয় নারী ফেডারেশন জাতীয় গণ কংগ্রেস, জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন ও রাষ্ট্রীয় পরিষদকে আইন প্রণয়নকাজে সহায়তা দিয়ে গেছে।"

সাধারণত জাতীয় গণ কংগ্রেস তিনবার যাচাই করার পর একটি আইন কার্যকর করে। কিন্তু যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকায়, এ আইনটি দুই বার যাচাইয়ের পরই গৃহীত হয় এবং ২০১৬ সালের পয়লা মার্চ চীনের 'পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন' আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়।

ছেন জিয়া লিন বলেন, এটি শেষ নয়, বরং শুরু। তিনি বলেন, "আইনটি কার্যকরের পর বৃহত্তম চ্যালেন্ঞ্জ হচ্ছে প্রচার ও প্রশিক্ষণকাজ। আমাদের উচিত যথেষ্ট প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের বিভাগকে আইনটি বুঝতে সাহায্য করা। বিশেষ করে, গণ নিরাপত্তা, পুলিশ, নারী ফেডারেশন, গ্রামের কমিশন, পাড়া কমিটি ও সামাজিক সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।"

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040