সুর ও বাণী: শাংহাই এবং শাংহাইয়ের গান
  2016-12-14 20:03:30  cri


আমি কিছুদিন আগে দক্ষিণ চীনের মহানগর এবং চীনের অর্থনৈতিক, পরিবহন, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কেন্দ্র শাংহাই ঘুরে এসেছি। এটি ছিল শাংহাইয়ে আমার তৃতীয় সফর। যখনই আমি শাংহাই গিয়েছি, নতুন কিছু-না-কিছু আবিস্কার করেছি এবং সেখান থেকে ফিরে এসেছি কিছু নতুন ধারণা ও সুন্দর স্মৃতি নিয়ে। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে আমি আপনাদের শাংহাই-এর গান শোনাবো এবং পাশাপাশি তুলে ধরবো এই মহানগরসম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য।

বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন হংকংয়ের গায়িকা ইয়ে লি ই'র গাওয়া "শাংহাই বান্দ" । এ গানটি ছিল ১৯৮০ সালে প্রচারিত এবং চৌ রুই ফা ও চাও ইয়া জি অভিনীত টেলিভিশন নাটকের থিম সং। গানটি ক্যান্টোনিজ ভাষার পপ সংগীতের ক্লাসিক উদাহরণ। ছোট বেলায় এ গান শুনে শুনে আমরা পুরোনো শাংহাই কল্পনা করতাম।

'শাংহাই' সম্পর্কে অনেকের মনে দুই রকম ধারণা আছে। একটা তো আজকের আধুনিক শাংহাই। আর অন্যটা চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগের পুরাতন শাংহাই। তখন শাংহাই ছিল দূরপ্রাচ্যের প্রথম আর্থিক কেন্দ্র। তখন শাংহাই ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিময়কেন্দ্র, বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণ বিনিময়কেন্দ্র, ‌এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরা বিনিময়কেন্দ্র। সে সময়ের কাহিনীর ভিত্তিতে অনেক চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটক নির্মিত হয়েছে। এসব চলচ্চিত্র ও নাটকের মাধ্যমে আমরা দেখেছি তখনকার সমৃদ্ধ শাংহাইকে।

বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন 'রাতের শাংহাই' শীর্ষক গান। অতীতে শাংহাইয়ের নাইট-ক্লাবগুলোতে প্রায়ই এ গান বাজতো। এ গান পুরাতন শাংহাইয়ের সংগীতের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

১৯৫৬ সালে শাংহাইয়ের সরকারি ও বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো একীভূত হবার পর শহরটির সকল পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮৭ সালে শহরে পরিবহন ব্যাংক আবার ব্যবসা শুরু করে এবং ১৯৯০ সালে শাংহাইয়ের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়কেন্দ্র আবার প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর শাংহাইয়ের আর্থিক বাজার আবার পুনরুদ্ধার হয়েছে। এখন শাংহাই হচ্ছে চীনের আর্থিক কেন্দ্র। চীনের আর্থিক বাজারের সব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান শাংহাইয়ে রয়েছে। ২০১০ সালে শাংহাইয়ে বিশ্ব বাণিজ্য মেলা আয়োজিত হয়। তখন গোটা বিশ্বের মানুষ এ শহরটিকে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ পায়।

বন্ধুরা, এবার শুনুন শাংহাই বিশ্ব বাণিজ্য মেলার থিম সং 'তোমার অপেক্ষায়, শাংহাই'। গেয়েছেন চাং চিয়ে।

শাংহাইবাসীদের মুখে আঞ্চলিক ভাষা অবশ্যই আপনাদের মনে বিশেষ ছাপ ফেলবে। শাংহাইবাসীর আঞ্চলিক ভাষা আর বেইজিংবাসীর ম্যান্ডারিনে আছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আমি শাংহাইয়ের আঞ্চলিক ভাষা বুঝি না। তবে আমি লক্ষ্য করেছি, এখন শহরের বিভিন্ন দোকানপাট, হোটেল, রেস্তোরাঁয় কর্মরত স্থানীয় কর্মীরা মোটামুটি ম্যান্ডারিন বলতে পারেন। এতে আমার মতো বাইরের লোকদের সুবিধা হয়েছে।

শাংহাইয়ের ভাষা আমি না-বুঝলেও, শুনে বেশ মজা পাই। যেমন, 'আমি' শব্দটির ম্যান্ডারিন হলো 'উও', শাংহাইয়ের আঞ্চলিক ভাষায় 'আমি' হচ্ছে 'আরা'। 'তুমি' শব্দটির ম্যান্ডারিন হলো 'নি', আর শাংহাইয়ের আঞ্চলিক ভাষায় 'তুমি' হচ্ছে 'নোং।

বন্ধুরা, এবার শুনুন শাংহাইয়ের আঞ্চলিক ভাষার একটি গান। গানের নাম 'তোমাকে ভালোবাসি'।

শাংহাইয়ের আঞ্চলিক ভাষায় স্থানীয় অপেরাও পরিবেশিত হয়। এ অপেরাকে 'হু জু'  বলা হয়। কারণ, শাংহাইয়ের সংক্ষিপ্ত নাম হলো 'হু'। শাংহাই অবস্থিত চেচিয়াং ও চিয়াংসু প্রদেশের খুব কাছে। ফলে এ দুটি প্রদেশের আঞ্চলিক ভাষার সাথে শাংহাইয়ের আঞ্চলিক ভাষার অনেক মিল রয়েছে; মিল রয়েছে পরস্পরের সংস্কৃতির মধ্যেও। ফলে সুচৌয়ের স্থানীয় অপেরা পিংথান  শাংহাইয়ে খুব জনপ্রিয়। বন্ধুরা, এবার শুনুন 'সুচৌর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য' শীর্ষক পিংথানয়ের অংশবিশেষ।

এবার আমি শাংহাইয়ের চলচ্চিত্র সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। চীনা চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু শাংহাই থেকে। ১৮৯৬ থেকে ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত একজন মার্কিন ব্যবসায়ী শাংহাইয়ের ফুচিয়ান বেইলুর শুই ইউয়ান থিয়ান হুয়া টি হাউস ইত্যাদি জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখাতেন। ১৯৩১ সালে হুয়া কুয়াং পিয়া শাং সিনেমা কোম্পানি জাপানে চীনের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র 'বৃষ্টির পর সূর্যালোক আসে' নির্মাণ করে। আর বর্তমানে শাংহাই চলচ্চিত্র গোষ্ঠী হচ্ছে চীনে সবচেয়ে বেশি মুনাফা অর্জনকারী চলচ্চিত্র কোম্পানিগুলোর অন্যতম। ২০০১ সালে চীনের প্রথম আইম্যাক্স সিনেমা হল শাংহাইয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। বন্ধুরা, এখন শুনুন 'সামুদ্রিক ফল' শীর্ষক চলচ্চিত্রের গান।

শাংহাই শহরে অনেক পুরাতন ভবন ও গলি রয়েছে। এগুলোর প্রায় প্রতিটিই কোনো-না-কোনো ঐতিহাসিক গল্পের সাথে সম্পর্কিত। শাংহাইয়ে অনেক আধুনিক অট্টালিকাও আছে, যা দেখে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শাংহাইয়ের দ্রুত বিকশিত হবার চিত্র কল্পনা করা যায়। শাংহাইয়ের রাস্তাগুলোর নামকরণ করা হয়েছে মূলত চীনের অন্য শহরের নামে। যেমন, বেইজিং রোড, নানচিং রোড ইত্যাদি। বন্ধুরা, এবার শুনুন 'আবার দেখা হবে ওয়েন হুই সড়ক' নামক গানটি। হ্যা, ঠিকই ধরেছেন, ওয়েন হুই হচ্ছে শাংহাইয়ের একটি সড়কের নাম।

১৯৭৩ সালে শাংহাই এবং জাপানের ইউকোহামার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এর পর ধাপে ধাপে বিশ্বের ৫৩টি দেশের ৭৫টি শহরের সাথে শাংহাইয়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া, এ পর্যন্ত ৬২টি দেশ শাংহাইয়ে কনস্যুলেট স্থাপন করেছে। শাংহাই হাসিমুখে সারা বিশ্বের বন্ধুদের স্বাগত জানায়।

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে সংগীতেরতালে তালে চীনের কেন্দ্রশাসিত মহানগর শাংহাইয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ও আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। আশা করি, অনুষ্ঠানটি আপনাদের ভালো লেগেছে। 'সুর ও বাণী' আজ এ পর্যন্তই। আমি বিদায় নিই। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে।

(ইয়ু/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040