ডাক্তার হে ই উ ২০১৬ সালের প্রথম দিকে হুয়াদা জিনে যোগ নেন। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিল গেটস ফাউন্ডেশানে প্রায় আট বছর কাজ করেন। তিনি ফাউন্ডেশানের নবায়ন ও উদ্ভাবন বিভাগের উপ-পরিচালক ও উচ্চ পর্যায়ের পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতেন। বিল গেটস্ ফাউন্ডেশানে তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞদের সাথে যৌথভাবে এইচআইভি নিয়ে গবেষণা, মৌলিক প্রযুক্তি উন্নয়ন, অকাল জন্ম, ডাইসপ্লেসিয়া (dysplasia) ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করেছেন। জৈবচিকিত্সা প্রযুক্তি বিষয়ে তার প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের দু'টি বড় দেশ। এ দুটি দেশে জাতীয়ভাবে নির্ভুল চিকিত্সাপদ্ধতি চালু করা সম্ভব। তিনি বলেন, "২০১৫ সালের প্রথম দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নির্ভুল চিকিত্সা পরিকল্পনা প্রণয়ন করার প্রস্তাব করেন। নির্ভুল চিকিত্সা মানে ব্যক্তির পরিস্থিতি, জিন ও বসবাসের স্থান অনুযায়ী যথাযথ চিকিত্সাপদ্ধতি প্রয়োগ করা। মার্কিন সরকার শুরুতে ক্যান্সার গবেষণায় ২০ কোটি ডলার বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, বর্তমান ক্যান্সার হল মানবজাতির জন্য বৃহত্তম চ্যালেন্ঞ্জ।"
ডাক্তার হে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নির্ভুল চিকিত্সা পরিকল্পনা প্রকাশ করার পর চীনও পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। নির্ভুল চিকিত্সা 'চীনের স্বাস্থ্য, ২০৩০' পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "'চীনের স্বাস্থ্য, ২০৩০'-এর লক্ষ্য অনেক বিস্তৃত। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ চীনা নাগরিকের গড় বয়স হবে ৭৯ বছর। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় চীনা নাগরিকদের স্বাস্থ্যমানও অনেক উন্নত হবে।"
হে ই উ বলেন, বর্তমানে নির্ভুল চিকিত্সাপদ্ধতি মূলত ক্যান্সারের মতো কঠিন ও বিরল রোগের চিকিত্সা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যেমন, ফুসফুসের ক্যান্সার। আসলে নানা ধরণের ফুসফুসের রোগ রয়েছে। বিভিন্ন রোগের জন্য বিভিন্ন ওষুধ ও চিকিত্সা গ্রহণ করা উচিত। নির্ভুল চিকিত্সার ধারণা চিকিত্সার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতির কথা বলে। এ পদ্ধতিতে জন্মের পূর্ব থেকেই মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। শিশু মৃত্যুর হার ও যুবক বয়সে মৃত্যুর হার যদি কমিয়ে আনা যায়, তবে নাগরিকদের গড় বয়স এমনিতেই অনেক বেড়ে যাবে।
হে ই উ আরও বলেন, বর্তমানে বড় শহরগুলোতে নাগরিকদের গড় বয়সের ক্ষেত্রে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে যুবক বয়সে মৃত্যুর হার চীনের চেয়ে বেশি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে নির্ভুল চিকিত্সাপদ্ধতি চীনের অনেক আগেই শুরু হয়েছে; এতে সাফল্যও অর্জিত হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "ক্যান্সার চিকিত্সায় চীন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারের কথা উল্লেখ করা যায়। মোদ্দাকথা, ক্যান্সারের চিকিত্সায় যুক্তরাষ্ট্রের চিকিত্সাপদ্ধতি চীনের চেয়ে অনেক সফল। এ ক্ষেত্রে ব্যবধান অনেক বেশি।"
গত ২২ সেপ্টেম্বর চীনের শেনচেনে জাতীয় জিন ব্যাংক চালু হয়। এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম জাতীয় জিন ব্যাংক। হুয়াদা জিন এ জিন ব্যাংক পরিচালনা করে। ব্যাংকটির ভবিষ্যত সম্পর্কে হে ই উ বলেন, "বিল গেটস ফাউন্ডেশান জিন প্রযুক্তি উন্নয়নে হুয়াদা জিনের সাথে সহযোগিতা করছে। আমি হুয়াদা গ্রুপে যোগ দিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা নিয়েছি এবং শিখেছি। আমার মনে হয়, গ্রুপের ভবিষ্যত উজ্জ্বল। চীন সরকার নবায়ন ও উদ্ভাবন এবং জীববিজ্ঞান খাতের উন্নয়নে উত্সাহ ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এ খাতে চীনের সুপ্তশক্তি প্রবল।"