20161211yinyue.mp3
|
সবাই বলেন, সংগীতের রাষ্ট্রীয় সীমারেখা নেই। সংগীতের মাধ্যমে ভাষার বাধাও অতিক্রম করা যায়। কারণ সুর দিয়ে মানবজাতির অভিন্ন আবেগ প্রকাশ করা যায়। আজকে আপনাদের শোনাবো এমন কয়েকটি গান। চীনা শিল্পীরা অন্য দেশের জনপ্রিয় কিছু গান নির্বাচন করেন। আবার এসব গান চীনা ভাষায় রূপান্তর করে দেশে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন মার্কিন লোকসংগীত শিল্পী স্কিটির ডেভিসের বিখ্যাত গান 'দ্য এন্ড অফ দ্য ওয়াল্ড'। ১৯৬৩ সালে তিনি এ গানের মাধ্যমে সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়কা নির্বাচিত হন। এরপর অনেক শিল্পী এ গান গেয়েছেন। কিন্তু কেউ তাকে অতিক্রম করতে পারেন নি। ২০০৯ সালে চলচ্চিত্র 'অ্যান আমেরিকান অ্যাফেয়ার'-এ এই গানটি সমাপ্ত সংগীত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ গান মানুষের মনের গভীরে প্রবেশ করে।
২০১৪ সালে চীনা লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হান হান 'দ্য কন্টিন্যান্ট'নামে সিনেমার জন্য 'দ্য এন্ড অফ দ্য ওয়াল্ড' নামের জনপ্রিয় একটি গানের চীনা ভাষায় রূপান্তর করেন। সুর আগের মতোই ছিলো। কিন্তু ভাষা ভিন্ন। চীনের গায়িকা তেং চি ছি এ গানে কণ্ঠ দেন। এ গানে বলা হয়েছে, 'একটি জাহাজ সমুদ্রে ডুবে গেছে। একজন লোক বিলীণ হয়েছে। তুমি জানো না, তারা কেন চলে গেছে। সে 'আবার দেখা হবে' বললেও আর দেখা হবে না। আমি জানি না, আমি জানতেও চাই না। আমি ঘুম থেকে জেগে উঠে রাতের স্বপ্ন ভুলে গেছি। যারা হারিয়েছে, তারা হারিয়েই গেছে, আর ফিরে আসবে না।'
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে থাইল্যান্ডের টেলিভিশন নাটক ও পপ সংগীত চীনের যুবক-যুবতীদের মন জয় করেছে। আমিও থাইল্যান্ডের কয়েকটি টেলিভিশন নাটক দেখেছি। সত্যি কথা বলতে কি, আমারও ভালো লাগেছে। থাই ভাষার গান খুব নরম ও রোমান্টিক। প্রিয় বন্ধুরা, এবার শুনুন থাইল্যান্ডের ইয়ার্ক রোং দুন্ক দুন্কের গান 'পালমি'। এ নামের অর্থ হলো 'উচ্চ কণ্ঠে গান গাইতে চাই'। এ গানটির ডিস্ক থাইল্যান্ডে টানা ৪৬ সপ্তাহ ধরে বিক্রিতে এক নম্বরে ছিল। মোট ১৪ লাখ ডিস্ক বিক্রি হয়েছে। 'পালমি' নামের গানটি জনপ্রিয়তা লাভের পর হংকং, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা গাইতে চেয়েছেন। ২০১২ সালে চীনের চেচিয়াং প্রদেশের টেলিভিশন কেন্দ্রের 'চীনের ভালো কন্ঠস্বর' নামে সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে ডিং ডিং নামে এক মেয়ে এ গানটি নতুন করে পরিবেশন করেন। দর্শকদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। চীনা ভাষার এ গানের কথা লিখেছেন শু ছাং দে।
ডিং ডিং
চীনা ভাষার গানটিতে বলা হয়েছে, 'আজ রাতের জ্যোত্স্না খুব উজ্জ্বল। আমাদের কথাবার্তা সাদামাটা। তুমি একদম উত্তেজিত হও না। যদিও সত্যনিষ্ঠ হওয়া একটু কঠিন। তবে তুমি একদম নিঁখুত হলেও আমার কাছে তা ভান করার মতো। আমি বিশ্বাস করি না। ভালোবাসলে আন্তরিকভাবে জানাবে। এ বিশ্বে শতভাগ রোমান্টিকতা নেই। মানুষের প্রতিশ্রুতির মধ্যে সত্যি কথা খুব কম। তুমি ভালো হলেই যথেষ্ট।
গত শতাব্দীর ৮০ ও ৯০'র দশকে জাপানের পপ সংগীত হংকংয়ের পপ সংগীতের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। অনেক শিল্পী জাপানের পপ সংগীত চীনা ভাষায় রূপান্তর করেন। আমরা সে গানগুলো শুনে তখন জানতাম না, এ গানগুলোর আসল সুরকার কোন দেশের। তখন শিল্পীরা নিজেই এ ব্যাপারটা বলতেন না। এখন ইন্টারনেটের সুবিধায় সব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
লি খ্য ছিন
বন্ধুরা, এখন শুনুন জাপানের ইভেন্টস ম্যান নামের একটি ব্যান্ডের গান। ১৯৯১ সালের ২৫ অগাস্ট এ ব্যান্ডের প্রধান গায়ক টোশিইয়ুকি তাছিখাওয়া এ গানটি সৃষ্টি করেন। এ ব্যান্ড এ গানটি গেয়ে অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৯২ সালে হংকংয়ের কণ্ঠশিল্পী লি খ্য ছিন জাপানী ভাষার এ গান চীনা ভাষায় রূপান্তর করেন। এ গানটি টিভিবি'র 'সে স্বর্গ থেকে এসেছে' নামে টেলিভিশন নাটকের থিম সং ছিল। গানটি আজও জনপ্রিয়। সে সময় এ গানে যুবকদের নানা বাধা-বিপদ অতিক্রম করার সাহস ও উত্সাহ যুগিয়েছে। কোনও সমস্যার সম্মুখীন হলে চোখের জল না ফেলে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে বলা হয়েছে এ গানে। গানটির সুর খুব দ্রুত এবং কথাও অনেক বেশি। কিন্তু লি খ্য ছিয়াং স্পষ্টভাবে সব শব্দ গাইতে পেড়েছেন। শুনে বেশ অবাক লাগে। এ গানের চীনা নাম দেওয়া হয়েছে 'লাল সূর্য'। শুনুন বন্ধুরা।
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের 'সুর ও বাণী' আসর শুনছেন। আজ আপনাদের শুনিয়েছি একই সুরে ভিন্ন ভাষার সংগীত। বন্ধুরা, এবার আপনারা শুনছেন নেদারল্যান্ডসের গায়িকা লরা ফয়গির গাওয়া 'হিস্টোরিয়া ডো উন আমোর' নামে একটি গান। এ গানটি ১৯৫৫ সালে পানামার কালর্স এলিটা আলমারান (Carlos Eleta Almarán) সৃষ্টি করেন। তখন তার ভাইয়ের স্ত্রী মারা গেছেন। ভাইয়ের দুঃখ অনুভব করে তিনি এ গানটি লেখেন।
লি ইয়ু ছুন
গত শতাব্দীর ৬০'র দশকে চীনের গীতিকার চেন টিয়ে ই 'হিস্টোরিয়া ডো উন আমোর' গানটি চীনা ভাষায় লেখেন। এরপর চীনা অনেক শিল্পী এ গানটি গেয়েছেন। চীনা গানের নাম দেওয়া হয়েছে 'আমার মনে শুধু তুমি আছো, সে নেই'। বন্ধুরা, তাহলে শুনুন লি ইয়ু ছুনের কণ্ঠে এ গান।
প্রিয় বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা চীনসহ বিদেশী কয়েকজন শিল্পীর কণ্ঠে বেশ কিছু জরপ্রিয় গান শুনলেন। কেমন লেগেছে? আমাকে জানালে খুশি হবো। আজকের 'সুর ও বাণী' আসর এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)