20161207yinyue.mp3
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এখন বেইজিংয়ের শীতকাল শুরু হয়েছে। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে আপনাদের শীতকাল নিয়ে কয়েকটি গান শোনাবো। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন 'বেইজিংয়ের শীতকাল' নামে একটি গান। গেয়েছেন লাও লাং। তিনি গেয়েছেন, 'বেইজিংয়ের শীতকালে ঠোঁট শুকিয়ে যায়। এসময় কেউ কেউ বন্ধুদের খুব মিস করে। শীতের বাতাস শুরু হলে যাযাবর পাখি দক্ষিণ চীনে চলে যায়। আমাদের প্রেম অসীম প্রত্যাশায় রূপান্তর হয়েছে। বেইজিংয়ে শীতকালে তুষার পড়ে। দূরের শহরে কেউ হয়তো আমার মতো জানালার পাশে দাঁড়িয়ে প্রেমিকার কথা কল্পনা করছে।"
বেইজিংয়ের শীতকাল বললেই প্রথমে তুষার পড়ার দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তুষার পড়া শুধু বাচ্চাদের জন্য মজার বিষয় নয়, বড়দের জন্যও আনন্দের। কারণ চীন এক বিশাল বড় দেশ। দক্ষিণ চীনে হয়তো কোনো দিন তুষার পড়ে না। সেখানকার অধিবাসীরা শীতকালে তুষার দেখার জন্য উত্তর চীন আসেন। উত্তর চীনের হেইলোংচিং প্রদেশের রাজধানী হারবিনে প্রতি বছর শীতকালে বরফ ভাস্কর্য প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়। শীতকালে হারবিনের দিনের তাপমাত্রা সাধারণত মাইনাস ১০ ডিগ্রি থাকে। রাতে হয় মাইনাস ২৫ ডিগ্রি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৩০ ডিগ্রির নিচে। সেখানে তুষার পড়ে এক ফুট গভীরও হতে পারে।
প্রিয় বন্ধুরা, এখন আপনারা 'তোমার ওখানে তুষার পড়েছে কিনা' নামের গানটি শুনছেন। গেয়েছেন চৌ লিয়াং। গানটি ১৯৯৫ সালে প্রথম প্রচারিত হয়। সে বছর শীতকালের সবচেয়ে উষ্ণ সুর নামে গানটি সারা চীনে বেশ জনপ্রিয় হয়।
এ গানের কথা এমন, 'তোমার ওখানে তুষার পড়েছে? শীতে তোমার কষ্ট হচ্ছে? তোমার হাত গরম করার মত আগুন আছে কি?
শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা প্রায় সবাই গরম পরিবেশে বড় হয়েছেন। জীবনে বহুবার বৃষ্টি পড়া দেখেছেন এবং বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনেছেন। কিন্তু আপনি জানেন, তুষার পড়ার সময়ও হালকা আওয়াজ হয়। সেটা এতো হালকা যে, মনোযোগ না দিলে শোনা যায় না।
বন্ধুরা, এবার শুনুন থান ওয়েই ওয়েইয়ের কণ্ঠে 'তুষারের শব্দ' নামে একটি গান।
চীনে বছরে চার ঋতু। প্রতিটি ঋতুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন বসন্তকালে নতুন ভরসা থাকে। গ্রীষ্মকালে উষ্ণতা। শরতকাল ফসল পাওয়ার সময়। কিন্তু শীতকালে যেহেতু তাপমাত্রা অনেক কম। লোকজনের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে কম থাকে।
১৯৮৬ সালে তাইওয়ানের গায়ক ছি ছিন তার প্রেমিকা ওয়াং জু সিয়ানের জন্য 'প্রায় শীতকাল' নামে একটি গান তৈরি করেন। এ গান প্রচারের পর দ্রুত চীনাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। গানটি ছি ছিনের প্রতিনিধিত্বশীল কাজে পরিণত হয়েছে। তিনি গেয়েছেন, 'আমি চলে যাচ্ছি। তোমার চোখের জল মুছে ফেলো। দীর্ঘ রাতে প্রিয় তুমি আমার জন্য কেঁদো না। যদিও সামনে পথ স্পষ্ট নয়, তবু তুমি হাসিমুখে আমার জন্য শুভ কামনা করো। বৃষ্টি হোক, বাতাস হোক, আমি সবসময় তোমাকে মিস করি। তোমার অনুপস্থিতিতে আমি নিজের আরো যত্ন নেবো। তুমি জিজ্ঞাসা করো, আমি কবে ফিরে যাবো। আমিও নিজেকে একই প্রশ্ন করি। আমিও ঠিক জানি না। হয়তো শীতকালে ফিরে আসবো।'
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা কখনো শীতকালে তুষার পড়ার পর বাইরে গিয়ে তুষারমানব বানিয়েছেন? এমন মজার ব্যাপার একবার করলে আর ভুলা যাবে না। তবে হালকা তুষার পড়লে তুষারমানব বানানো যায় না। তুষার যত বেশি পড়ে, তত বেশি মজা হয়। বন্ধুরা, এখন শুনুন ওয়াং লি হোং এবং ফান সিয়াও শুয়েনের গাওয়া 'তুষারমানব' নামের গানটি।
বন্ধুরা, আমি জানি, বাঙালি বন্ধুরা শীতকালে বেইজিংয়ে এলে শীতে অনেক কষ্ট পান। কারণ এমন নিম্ন তাপমাত্রায় আপনাদের অভ্যাস নেই। তাই অনেকে গ্রীষ্মকাল বা শরত্কালে বেইজিংয়ে আসতে চান। কিন্তু বেইজিংবাসীদের জন্য বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য শীতকাল তেমন খারাপ সময় নয়। শীতকালে বেইজিংয়ের সব ঘরবাড়ি, অফিসে ও পাবলিক স্থানে গরম করার ব্যবস্থা আছে। রুমে থাকলে কোন অসুবিধা নেই। বাইরে গেলে ঠাণ্ডা লাগলে রেস্তোরাঁয় গিয়ে সুস্বাদু হটপট খেয়ে শীত কাটানো যায়। তা ছাড়া চীনাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্সব বসন্ত উত্সবও শীতকালের শেষ দিকে হয়। ফলে শীতকাল আমাদের কাছে আনন্দময়।
বন্ধুরা, এখন শুনুন গায়িকা লি ইয়ু ছুনের গাওয়া 'শীতকালের আনন্দ' নামে একটি গান। এ গানটি তার অনুরাগীদের দেওয়া বড়দিনের উপহার। এ গানটি বাজারে আসে ঠিক বড়দিনের আগে। এ গানের সিডি খুব ভালো বিক্রি হয়েছে। গানটি শুনে বোঝা যায়, গান গাওয়া সত্যি আনন্দদায়ক কাজ।
১৯৮৭ সালে বসন্ত উত্সব উদযাপনের সময় চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাইওয়ানের শিল্পী ফেই সিয়াং প্রথমবারের মতো 'শীতকালের অগ্নি' নামে একটি গান পরিবেশন করেন। এ গান পরিবেশনের পর এক রাতেই সারা চীনে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। এ গানটি ১৯৮৭ সালের বসন্ত উত্সবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রতীকে পরিণত হয়। গানটি শুনে সবাই শিল্পীর সঙ্গে নাচতে চান। বন্ধুরা, এখন শুনুন 'শীতকালের অগ্নি' নামের গানটি।
বন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের 'সুর ও বাণী' আসর শুনছেন। আজকে আপনাদের শীতকাল নিয়ে কয়েকটি গান শুনিয়েছি। 'সুর ও বাণী' আসর আজকের মতো এ পর্যন্তই। অনুষ্ঠানটি শোনার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। এবার আমি বিদায় নিই। সবাই ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)