হ্যালো চায়না:৫১. সেনা ও ঘোড়ার টেরাকোটা
  2016-12-02 20:09:21  cri

প্রাচীনকালে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জীবন্ত কবর দেয়ার মতো নিষ্ঠুর প্রথা প্রচলিত ছিল। কিন্তু চীনের প্রথম সামন্ততান্ত্রিক ছিন রাজবংশের টেরাকোটায় জীবিত মানুষের পরিবর্তে তার অবয়বে তৈরি মূর্তি সমাধিস্থ করা হয়। যা ঐতিহাসিক টেরাকোটা নামে পরিচিত। টেরাকোটা হলো মৃৎশিল্প, কাদামাটি ও কাঠ দিয়ে তৈরি মানুষ ও জীবযন্তুর মূর্তি। জীবিত মানুষের পরিবর্তে এসব মূর্তি মাটিচাপা দেয়া হয়। ছিন রাজবংশের শিল্পীরা প্রথমে সিরামিকের ছাঁচ তৈরি করে, তারপর ছাঁচের বাইরে পাতলা কাদার আবরণ দেয়। এরপর তার ওপর আঁকা ও শুকানোর কাজটি করা হয়। এভাবে গড়ে ওঠে একেকটি মূর্তি।

ছিন রাজবংশের এ টেরাকোটায় রয়েছে মানুষ ও ঘোড়ার মূর্তি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, চীনের প্রথম সম্রাট ছিন শি হুয়াং-এর সমাধিক্ষেত্র। সমাধিক্ষেত্রটিতে সত্যিকারের মানুষের মতো মূর্তি, যুদ্ধসাজে সজ্জিত অসংখ্য ঘোড়াসহ আট হাজারেরও বেশি মূর্তি রয়েছে এবং কয়েক হাজার সত্যিকারের অস্ত্র রয়েছে। সেনা মূর্তিগুলো দেখতে একদম মানুষের মতো। প্রতিটি মূর্তির চেহারা, শারীরিক গঠন, মুখের ভাব ও বয়স ভিন্ন। মূর্তিগুলোর বিন্যাস ও ছিন রাজবংশে সেনাবাহিনীর বিন্যাসের মধ্যে রয়েছে দারুণ মিল। এতে গাড়ি সেনাবাহিনী, পদাতিক বাহিনী এবং অশ্বারোহী সেনা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'কপার ঘোড়ার গাড়ি'। কপার ঘোড়ার গাড়িতে প্রচুর যন্ত্রাংশ রয়েছে। গাড়িটির প্রধান উপাদান হলো ব্রোঞ্জ। এছাড়া রয়েছে রুপা ও স্বর্ণ। আশ্চর্যের বিষয় হলো, বর্তমানের আধুনিক প্রকৌশলীরাও কিন্তু ছিন রাজবংশের কপার ঘোড়ার গাড়ির মতো কোনো বাহন তৈরি করতে পারেনি। সবগুলো মূর্তির হাতে রয়েছে যুদ্ধাস্ত্র। অস্ত্রগুলো সবই ব্রোঞ্জের তৈরি। এগুলোতে মরিচা নিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাই দুই হাজার বছর পরও অস্ত্রগুলো নতুনের মতো ঝকঝকে ও ধারাল।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন সম্রাট ছিন শি হুয়াং বিশাল আকারের টেরাকোটা তৈরি করেছিলেন। কারণ, তার বিশ্বাস ছিল, মৃত্যুর পর তাকে রক্ষার জন্য এসবের প্রয়োজন হবে। আর এ বিশ্বাস থেকেই গড়ে ওঠে ছিন শি হুয়াংয়ের সেনা ও ঘোড়ার টেরাকোটা। যা বিশ্বের বৃহত্তম ভূগর্ভস্থ সামরিক যাদুঘর।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040