সুর ও বাণী: কুয়াংতুং সঙ্গীত
  2016-12-04 13:34:28  cri


বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চীনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র 'কাওহু' দিয়ে বাজানো সুর 'বৃষ্টি পড়ছে কলা পাতার ওপর'। এটা হচ্ছে কুয়াংতুং প্রদেশের লোকসংগীতের একটি বিখ্যাত সুর। সুরের তালে তালে গ্রীষ্মকালে কলা পাতার ওপর বৃষ্টি পড়ার শব্দ বর্ণিত হয়েছে এতে। সুরটি শুনে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বৃষ্টির তালে তালে কলা পাতা নড়াচড়ার দৃশ্য। দীর্ঘ দিন পর বৃষ্টি দেখে মানুষের আনন্দঘন আবেগের প্রতিফলন প্রকাশিত হয় এ সুরের মাঝে। (শেষ)

কাওহু দেখতে আরহু'র মতো, তবে সুর আরহু'র চেয়ে আরো উচ্চ ও উদাত্ত, অনেকটা মেয়েদের উচ্চকণ্ঠের মত। কাওহু হচ্ছে দক্ষিণ চীনের কুয়াংতুং সংগীতের প্রধান বাদ্যযন্ত্র। কাওহু'র বৈশিষ্ট্য এবং নিচু ধরনের মসৃণ সুরের কারণে বাদ্যযন্ত্রের দলে তার স্থান উল্লেখযোগ্য। এ কারণে চীনের তার টানা বাদ্যযন্ত্রের দলে কাওহু'র বিশেষ স্থান রয়েছে। তাছাড়া, কাওহু'র প্রকাশ ভঙ্গি অত্যন্ত শক্তিশালী বলে তা আবেগপূর্ণ, প্রাণবন্ত আর সুউজ্জ্বল ছন্দ বাজানোর উপযোগী। তাই বাদ্যযন্ত্রের দলে কাওহু সবসময় সংগীতের প্রধান ছন্দের সহযোগীর ভূমিকা পালন করে।

বন্ধুরা, এবার শুনুন কাওহু দিয়ে বাজানো সুর 'মসৃণ হ্রদের চাঁদ'।

'মসৃণ হ্রদের চাঁদ' হচ্ছে কুয়াংতুং সংগীতের বিখ্যাত সুরকার লিই ওয়েন চেংয়ের পুনর্সৃজন সুর। এ সুর হচ্ছে ব্যাপক প্রচলিত কুয়াংতুং সঙ্গীত। এ সুরে দক্ষিণ চীনের একটি হ্রদের প্রাকৃতিক দৃশ্য ফুটে উঠেছে। সুরকার এ সুর দিয়ে প্রকৃতির প্রতি নিজের অনুভূতি ও ভালোবাসা প্রকাশ করেন।

কুয়াংতুং সঙ্গীত হচ্ছে চীনের কুয়াংতুং প্রদেশে প্রচলিত এক রকম লোকসঙ্গীত অভিনয়ের পদ্ধতি। স্থানীয় অপেরা ও লোকসংগীতের সূত্র থেকে কুয়াংতুং সংগীতের উদ্ভব হয়। ১৯ শতাব্দীর শেষে ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কুয়াংতুং প্রদেশের চুচিয়াং বদ্বীপে প্রচলিত 'পাইনহুই'আর ইয়ুন অপেরার ভিত্তিতে ধাপে ধাপে গঠিত হয়েছে কুয়াংতু সঙ্গীত। ২০০৬ সালের ২০ মে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ কুয়াংতুং সঙ্গীতকে প্রথম কিস্তি জাতীয় পর্যায়ের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের খেতাব দিয়েছে।

বন্ধুরা, এবার শুনুন কুয়াংতুং সংগীতের আরেকটি প্রতিনিধিত্ব সুর 'গ্রীষ্মকালের বজ্রধ্বনি'।

'গ্রীষ্মকালের বজ্রধ্বনি'- এর প্রধান বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে পিপা। পিপা হচ্ছে চীনের ঐতিহ্যবাহী তারের বাদ্যযন্ত্র, এর দু'হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। চীনের যুব বাদ্যযন্ত্র শিল্পী মিউ সিয়াও চাং এ সুর বাজিয়েছেন। তিনি ছোট বেলা থেকে বাবা-মার কাছ থেকে পিপা ও লিউছিন  শেখেন। ১৯৯০ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ ফলাফল নিয়ে সাংহাই সঙ্গীত ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন। লেখাপড়ার সময় সিঙ্গাপুরে তাঁর ব্যক্তিগত অ্যালবাম মুক্তি হয়। ১৯৯৪ সালে স্নাতক পাসের পর তিনি কুয়াংতুং প্রদেশের নৃত্যগীতি দলে যোগ দেন এবং পিপা বাদক হন।

বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন মিউ সিয়াও চেনের বাজানো 'বেল নাড়ে ক্ষুধার্ত ঘোড়া'। এ সুরও কুয়াংতুং সংগীতের প্রতিনিধিত্ব সুর। প্রাচীনকালের এক যুদ্ধকৌশলের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। বাদ্যযন্ত্র দিয়ে ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনির মত শব্দ হয়, যা শুনে মনে হয়, মাঠে চলছে তুমুল লড়াই।

অনুষ্ঠান শুনছেন। এতক্ষণ আপনাদের কয়েকটি চীনের কুয়াংতুং সঙ্গীত শুনালাম। কিন্তু চীনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র দিয়ে শুধুমাত্র চীনের সঙ্গীত বাজানো যায়- তা নয়, বরং ভারতের সঙ্গীতও বাজানো যায়। এবার শুনুন বাদ্যযন্ত্র শিল্পী মিউ শিয়াও চাংয়ের বাজানো 'ভারতের পিপার আত্মা' নামের সুরটি।

বন্ধুরা, আমরা চীনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র পিপা দিয়ে বাজানো কয়েকটি কুয়াংতুং সঙ্গীত শোনার পর এবার চুইহু  দিয়ে বাজানো সঙ্গীত শুনবো। চুইহু হচ্ছে চীনের 'হু' জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের অন্যতম। প্রধানত হোনান প্রদেশের স্থানীয় অপেরা হোনান পাংচির  যন্ত্রসঙ্গীত করা হয়। এর সুরে বেশ রসিকতাও থাকে। হোনান প্রদেশের অধিবাসীদের উন্মুক্ত চরিত্র প্রতিফলিত হয় এতে।

বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চীনের বিখ্যাত যন্ত্রশিল্পী সোং ফেই এর বাজানো 'হোনানের ছোট্ট সুর'। সোং ফেই হুচিন , গুচিন  ও পিপা সহ ১৩ রকম তন্ত্রী বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন। তাঁকে 'লোক সংগীতের বাদ্যযন্ত্রের রাণী' বলা হয়। তাঁর বাদ্যযন্ত্র বাজানোর কৌশল খুবই চমৎকার। তার মনের ভাব প্রকাশের শক্তিও প্রবল।

বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন বিখ্যাত যন্ত্রশিল্পী সোং ফেইয়ের বাজানো 'চিরকালের সুন্দরী সিশি' নামক সুর। (ইয়ু/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040