পহেলা ডিসেম্বর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রেমলিন ভবনে রুশ ফেডারেল কংগ্রেসে ২০১৬ সালের 'স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন' ভাষণ দেন। তিনি সামাজিক জীবিকা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও পররাষ্ট্রনীতি এ তিনটি বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন। ভ্লাদিমির পুতিনের তিন বারের প্রেসিডেন্টের কার্যমেয়াদে এটি ত্রয়োদশ 'স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন' ভাষণ।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
স্টেট অফ দ্য ইউনিয়নে সর্বপ্রথম তিনি রুশ অর্থনীতি, সমাজ ও অভ্যন্তরীণ সমস্যার ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। অতীতের তুলনায় ২০১৬ সালের স্টেট অফ দ্য ইউনিয়নকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন তিনি। তিনি প্রশংসা করে বলেন, রাশিয়ার জনগণ 'দেশের স্বার্থ রক্ষা করা এবং জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার' ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে এবং সংহতি ও সচেতন দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা দেখেছি, দেশের মানুষ একসঙ্গে আছে। এজন্য আমাদের জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। এখন দেশাত্মবোধ জাগ্রত হচ্ছে, তবে জনগণ কিন্তু সবকিছুর ওপর সন্তুষ্ট নয়। এখনও অনেক সমস্যা রয়েছে। তবে জনগণ এর কারণ জানে এবং বিশ্বাস করে যে, একজোট হয়ে থাকলেই কেবল এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব।"
২০১৭ সালে রাশিয়ার ফেব্রুয়ারি বিপ্লব ও অক্টোবর বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তি হবে। এবারের 'স্টেট অফ দ্য ইউনিয়নে' পুতিন ইতিহাসকে সম্মান করার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এখন ইতিহাসকে স্মরণ করার ভালো সুযোগ। বিদগ্ধ সমাজ আর গোটা রাশিয়ার উচিত বাস্তব, আন্তরিক ও গভীরভাবে ঐতিহাসিক ঘটনা গবেষণা করা, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া, সমাজ, রাজনীতি ও জনগণের সম্প্রীতিময় বসবাসকে সুসংবদ্ধ করা।
রাশিয়ার বর্তমান অর্থনীতি প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। বাস্তব অর্থনীতির পতন রোধ হয়েছে এবং প্রবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের শেষ দিকে মুদ্রাস্ফীতির হার ৬ শতাংশের নিচে নেমে প্রায় ৫.৮ শতাংশ হবে। আগামী বছর তা ৪ শতাংশ হতে পারে।
২০১৫ সালে রাশিয়ার জিডিপিতে ৩.৭ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। চলতি বছর তা পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৬ সালের প্রথম দশ মাসে শিল্প খাতে উত্পাদন বৃদ্ধির হার ছিল ০.৩ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ প্রবণতা বজায় থাকবে।
পুতিন বলেন, "আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, স্থিতিশীল হলেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বৃদ্ধির হার পরিবর্তন হবে না। যদি আমরা রাশিয়ার অর্থনীতির মৌলিক সমস্যার সমাধান না করি, নতুন প্রবৃদ্ধির উপাদানে যথাযথ ভূমিকা না রাখি, তাহলে পরবর্তী কয়েক বছর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি শূন্য হতে পারে।"
প্রতি বছরের 'স্টেট অফ দ্য ইউনিয়নে' দুর্নীতিদমন এক অনির্বায বিষয়। সম্প্রতি রাশিয়ায় বেশ কয়েকটি বড় দুর্নীতির মামলা হয়েছে। এ দুর্নীতিতে কিছু উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছে। দুর্নীতিদমন শুধু 'লোক দেখানো' বিষয় নয় উল্লেখ করে পুতিন বলেন, "দুর্নীতিদমনে পেশাগত মর্ম, আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ দরকার। কেবল এভাবে কাজ করলে সামাজিক স্বীকৃতি ও ব্যাপক সমর্থন পাওয়া যায়।"
ভ্লাদিমির পুতিন বিশেষভাবে চীন-রাশিয়া সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান জটিল পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও চীনের সার্বিক কৌশলগত সমন্বয় অংশীদারিত্বের সম্পর্ক বিশ্ব ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, (রেকর্ডিং-৪)
'বর্তমানে চীন হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্ত্বা। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি ও উচ্চ প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে বড় প্রকল্পগুলো প্রতি বছর দুই দেশের পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতার নতুন সুযোগ এনে দিচ্ছে।"
(ইয়ু/তৌহিদ)