চীনের হাই নান মিয়াও জাতির গ্রাম: উন্নয়নের গল্প
  2016-12-03 15:36:07  cri
‘এখানে ওয়ানছুয়ান নদী আছে, এখানে ঘন বন আছে, এখানে লি ও মিয়াও জাতির লোক আছে ....’ একটি অপরিচিত ছোট থানা এখন পর্যটকদের জন্য পরিণত হয়েছে আকর্ষণীয় স্থানে। হুশান থানা ছিয়ংহাই শহরের সর্ব পশ্চিমে অবস্থিত। থানাটি ছিয়ংহাই শহরের একমাত্র সংখ্যালঘু থানা। এ থানায় হাইনান প্রদেশের মিয়াও জাতির লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি। থানার লোকসংখ্যা ৮ হাজারের কিছু বেশি, যাদের ৭৮ শতাংশই মিয়াও জাতির মানুষ। হুইশান থানায় লি ও মিয়াও জাতির বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এখানে আছে সুন্দর ওয়ানছুয়ান নদী, সবুজ রাবার বাগান, সুগন্ধী চা, পাঁচ রঙের ভাত, মিয়াও জাতির সূচিকর্ম, রহস্যময় মিয়াও জাতির গ্রাম ইত্যাদি। এখানে সংখ্যালঘু জাতির বৈশিষ্ট্যময় সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। থানাটির মেয়র লিউ জুন বলেন, প্রতি মাসে দু’বার এখানে পর্যটন মেলা আয়োজিত হয়। মেলায় মিয়াও জাতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যময় পণ্যদ্রব্য পাওয়া যায় এবং মিয়াও জাতির নাচ ও গান পরিবেশিত হয়। তিনি বলেন, “পর্যটন মেলা আমাদের পর্যটন খাতের প্রচারের একটি পদ্ধতি। আমরা পর্যটনকে একটি পণ্য হিসেবে তুলে ধরছি। এখন প্রতি মাসের ১ ও ১৫ তারিখ হুইশান থানায় পর্যটন মেলা আয়োজন করা হয়। আমরা মিয়াও জাতির সূচিকর্মসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যময় পণ্য ও সেবা মেলায় তুলে ধরি। এ ছাড়াও আছে পারিবারিক হোটেল এবং কৃষিকাজের প্রদর্শনী। মেলায় আমরা জাতীয় বৈশিষ্ট্যময় পণ্যদ্রব্যও বিক্রি করি। আমরা আশা করি, এভাবে এখানে পর্যটন খাত আরও বিকশিত হবে।” থানার কেন্দ্র থেকে জিয়ানাও গ্রামে যেতে দশ মিনিট লাগে। জিয়ানাও মিয়াও জাতির গ্রাম। ওয়ানছুয়ান নদীর দু’টি প্রধান উপনদী গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। গ্রামে গাছপালা সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখানকার বনভূমি মোট ভূ-ভাগের ৭৫ শতাংশেরও বেশি। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ সুন্দর। গ্রামের প্রধান ছে গাও জেং একজন সুদর্শন মিয়াও জাতির লোক। তিনি নাচতে ও গাইতে পারেন। তাঁর নেতৃত্বে গ্রামের পর্যটনশিল্প দিন দিন উন্নত হচ্ছে। এখন আর গ্রামবাসী রাবার ও সুপারি চাষের ওপর নির্ভরশীল নয়। জিয়ানাও গ্রাম ‘চীনা পর্যটন আদর্শ গ্রাম’-এর মর্যাদা লাভ করেছে। এ সম্পর্কে ছেন গাও জেং বলেন, “আগে আমাদের গ্রামের অবকাঠামো ভালো ছিল না। তা ছাড়া, গ্রামটি অনেক নোংরাও ছিল। কিন্তু সুন্দর পর্যটন গ্রাম গড়ার প্রক্রিয়ায় সকল আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে, নির্মিত হয়ে উন্নত সড়ক। আমরা এখন রাবার ও সুপারি চাষের পাশাপাশি পর্যটন খাতকেও অনেক গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের গ্রামের প্রতি পর্যটকরা আজকাল ক্রমবর্ধমান হারে আকৃষ্ট হচ্ছেন।” গ্রামের বাসিন্দা লি জিয়া ছুয়ানের পারিবারিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ আছে। তার রেস্তোরাঁয় মিয়াও জাতির অনেক জনপ্রিয় খাদ্য পাওয়া যায়। যেমন, পাঁচ রঙের ভাত। পাঁচ রঙের চাল দিয়ে যা রান্না করা হয়। এটি মিয়াও জাতির উত্সব ও পুজার সময়কার ঐহিত্যবাহী খাবার। পর্যটন লি জিয়া ছুয়ানের জীবন উন্নত করেছে। তিনি বলেন, “আগে আমাদের গ্রামে এতো হোটেল ও রেস্তোরাঁ ছিল না। প্রায় গোটা গ্রামই রাবার ও সুপারি চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এখন পর্যটনশিল্প উন্নয়নের ফলে আমাদের পরিবারের প্রতি মাসের আয় বহুগুণ বেড়েছে। গ্রামের বাইরে যে সকল লোক কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন, তারাও এখন ফিরে এসেছেন। আমি ভবিষ্যতে একটি সবজি বাগান গড়ে তুলতে চাই। এ বাগানে এসে পর্যটকরা নিজেদের পছন্দমতো সবজি তুলবেন এবং সেগুলো তাদের রান্না করে খাওয়ানো হবে।” মিয়াও জাতির সূচিকর্ম খুবই সুন্দর ও জটিল। মিয়াও জাতির মেয়েরা সুম্পূর্ণ দক্ষতার সাথে এ কর্মটি করতে পারেন। স্থানীয় সরকার শিল্পী ছেন স্যিউ লানের জন্য মিয়াও জাতির সংস্কৃতিকেন্দ্রে সূচিকর্ম চিত্রশালা খুলেছে। এখন সূচিকর্ম বিক্রি হল তাঁর প্রধান আয়ের উত্স। তিনি জানান, আগে অন্য গ্রামে গিয়ে নিজের সূচিকর্ম বিক্রি করতেন। আয়ও ছিল খুবই কম। চিত্রশালা খোলার পর তাঁর চিত্র সারা চীনে ছড়িয়ে পড়েছে। তার আয়ও বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, “এ চিত্রশালা সরকার আমাকে দিয়েছে। এখন আর আমাকে অন্য গ্রামে যেতে হয় না। আমি এখানে পর্যটকদের কাছে পণ্য বিক্রি করি এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও বিক্রি করি। এই চিত্রশালা আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে। আমার আয় আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।”
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040