1125china
|
প্রাচীনকালে সি আন শহরকে 'ছাং আন' বলা হত। এ নামের অর্থ হলো, 'চিরস্থায়ী প্রশান্তি এবং নিরাপত্তা'। চীনের দীর্ঘ ইতিহাসে সি আন শহরকে সবচেয়ে বেশিবার রাজধানী হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। রাজধানী হিসেবে সি আনের স্থায়িত্বও সবচেয়ে বেশি সময়ের। সি আন শহরটি হলো, বিখ্যাত রেশমি পথের সূচনাস্থল। এ শহরটি তখনকার পূর্ব সভ্যতার কেন্দ্র, তাই ইতিহাসে 'পশ্চিমে রোম, পূর্বে ছাং আন' এমন কথা প্রচলিত আছে।
বর্তমানে সি আন শহরে বিখ্যাত 'ঘণ্টা টাওয়ার' ও 'মহান বন্য হংসী বৌদ্ধ মন্দির'সহ (Great Wild Goose Pagoda) অনেক প্রাচীন স্থাপনা সংরক্ষিত আছে। মিং রাজবংশের সময় সি আনে 'ঘণ্টা টাওয়ার' তৈরি হয়। এটি হলো প্রাচীন চীনের সবচেয়ে বড় আকারের এবং সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত ঘণ্টা টাওয়ার। জানা গেছে, মিং রাজবংশের সময় সান সি প্রদেশের কেন্দ্রে কুয়ানচুং এলাকায় বার বার ভূমিকম্প হত। লোককথায় আছে, সে সময় একটি ড্রাগন বার বার ফিরে আসতো। এজন্য সম্রাট অনেক ভয় পেতেন। কেউ কেউ বলেন, ঘণ্টা হলো স্বর্গ ও মাটির ধ্বনি, এটি অশুভ ড্রাগনকে দমন করতে পারে। তাই সম্রাট শহরের কেন্দ্রস্থলে এই ঘণ্টা টাওয়ার নির্মাণের নির্দেশ দেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ঘণ্টা টাওয়ারটি নির্মাণ করতে একটি লোহার পেরেকও ব্যবহার করা হয় নি। অথচ, তারপর চারবার রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে এ টাওয়ারটির কোনো ক্ষতি হয়নি। টাওয়ারটির গঠন স্থাপত্যবিদদের জন্য একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা।
অন্যদিকে, গ্রেট ওয়াইল্ড গুজ প্যাগোডাকে সি আনের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেখানে বিশেষভাবে থাং রাজবংশের মহা বৌদ্ধভিক্ষু হিউয়েন সাং-এর ভারত থেকে সংগ্রহ করা বৌদ্ধগ্রন্থ রাখা হয়েছে। এ টাওয়ারের সবচেয়ে উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে প্রাচীন সি আন নগরীর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
সি আন শহরের খাবারগুলোও অনেক বিখ্যাত। চাইনিজ হ্যামবার্গার, সিদ্ধ গোশত, ঠাণ্ডা নুডুলস একবার খেলে তার স্বাদ ভুলতে পারবেন না আপনি। আগ্রহ থাকলে আপনি সান সি প্রদেশের প্রাচীন স্থানীয় অপেরা-ছিনছিয়াং অপেরা দেখতে পারেন। ছিনছিয়াং অপেরার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, গর্জন বা উচ্চস্বরে চিত্কার, এর গানগুলো গাইলে মন পরিষ্কার হয়ে যায়, এগুলো অনেক সহজবোধ্য, যা সি আনবাসীর জন্য উপযোগী। ছিনছিয়াং ছাড়া সি আনবাসীর চলে না ! খাবার শেষ হলে বা সময় পেলেই তারা কিছুক্ষণ গান গাইবে। সুযোগ পেলে আপনিও সেখানে গিয়ে উপভোগ করতে পারেন এ সৌন্দর্য।