1118china
|
রাজধানী পেইচিংয়ে অবস্থিত স্বর্গ মন্দিরের আয়তন ২৭.৩ লাখ বর্গমিটার, এটি নিষিদ্ধ নগরী বা ফরবিডেন সিটির দ্বিগুণ আয়তনের। এটি হলো, প্রাচীন বিশ্বের স্বর্গ পূজার বৃহত্তম স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। স্বর্গ পূজার স্থান এ মন্দিরটি 'আকাশের' সুউচ্চ মর্যাদা তুলে ধরার জন্য বিশেষভাবে নির্মিত। এর গঠনশৈলী দিয়ে আকাশের সীমাহীনতা ও উচ্চতা প্রকাশ করা হয়েছে। তাই মন্দিরের দেয়ালের দক্ষিণ দিকটি তৈরি হয়েছে গোলাকারভাবে। আর উত্তর দিকটি বর্গাকৃতির। প্রাচীনকালের লোকেরা মনে করত, স্বর্গ গোলাকার আর পৃথিবী বর্গাকৃতির। স্বর্গ মন্দিরের গঠন এমনই চিন্তাধারার প্রতিফলন। স্বর্গ মন্দিরের গঠন ও নির্মাণ অনেক সুন্দর ও প্রশংসনীয়। সবচেয়ে আশ্চর্য হলো এর প্রতিধ্বনির বিষয়টি। মন্দিরে রয়েছে প্রতিধ্বনি সৃষ্টিকারী দেয়াল বা ইকো দেয়াল। এ দেয়ালের গঠনটি এমনভাবে করা হয়েছে যে, মানুষ একদিকে দাঁড়িয়ে কথা বললে, তার কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়ে দেয়ালের আরেক প্রান্ত থেকে স্পষ্টভাবে শোনা যায়।
এর মূল কারণ কি? আসলে মন্দিরের দেয়ালটি গোলাকার এবং এর পৃষ্ঠতল অনেক মসৃণ। তাই এর একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কথা বললে, কথাগুলো দেয়ালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অন্য প্রান্ত দিয়ে শোনা যায়, যা প্রতিধ্বনি সৃষ্টির মূল কারণ।
'ধ্বনি প্রতিফলন দেয়ালটি' গোলাকার। এ দেয়ালের পৃষ্ঠতল অনেক মসৃণ হওয়ায় শব্দতরঙ্গ খুব তাড়াতাড়ি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যখন শব্দতরঙ্গ দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে প্রতিফলিত হয়, তখন তা মূল শব্দের সঙ্গে মিলে বড় ধ্বনি সৃষ্টি করে। তাই অতীতে যখনই সম্রাটরা এখানে স্বর্গের পূজা করতেন, তখন তাদের মুখের কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হয়ে বড় ধরনের আওয়াজ তৈরি করত। মনে হত যেনো, স্বর্গ থেকে নির্দেশনা আসছে। সে সময় এটা অনেক রহস্যময় ব্যাপার ছিল। আর এখন পর্যটকরা ধ্বনি প্রতিফলন দেয়ালের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে সাধারণত কিছু কথা বলে অথবা একটা হুংকার ছাড়ে। এভাবে প্রাচীন সভ্যতার রহস্যময়তা খানিকটা উপভোগ করা যায়।
পেইচিংয়ের স্বর্গ মন্দিরটি দর্শনশাস্ত্র, ইতিহাস, গণিতবিদ্যা, বলবিদ্যা, সৌন্দর্যবিজ্ঞান ও বাস্তুবিদ্যার সমন্বয়ে প্রাচীনকালের এক শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য। এটি প্রাচীন চীনাদের উচ্চ মানের বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের প্রতিনিধিত্ব করছে। যা আজও মানুষকে বিস্মিত করে দেয়।