সুর ও বাণী : কুংফু রাজা জ্যাকি চ্যান
  2016-11-20 15:10:50  cri


প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী 'সুর ও বাণী' আসর' শোনার জন্য আপনাদের স্বাগত জানাই। ১৩ নভেম্বর বিশ্ববিখ্যাত কুংফু তারকা জ্যাকি চ্যান মার্কিন ফিল্ম আর্ট এবং বিজ্ঞান একাডেমির দেওয়া 'অস্কার আজীবন সাফল্যের অনারারি পুরস্কার' পেয়েছেন। তিনি এ গৌরব অর্জনকারী প্রথম চীনা ব্যক্তি। বিদেশী বন্ধুরা সাধারণত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জ্যাকি চ্যানকে জেনেছেন। তিনি অনেক গান গেয়েছেন এবং রেকর্ড করেছেন তা হয়তো অনেকই জানেন না। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে আপনাদের জ্যাকি চ্যানের গানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো। তার কণ্ঠে গান শোনাবো।

জ্যাকি চ্যান

বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন 'জীবন বা মৃত্যু, আমরা কখনো বিচ্ছিন্ন হবো না' নামের একটি গান। ২০০৮ সালে সিছুয়ানের ওয়েনছুন ভূমিকম্পের পর নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করে প্রার্থণা করার জন্য এ গানটি রচিত হয়। জ্যাকি চ্যান গানটি গাওয়ার পর চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্রে প্রচার হয় গানটি। প্রচারের পর লাখ লাখ দর্শকের মন জয় করেন তিনি। এ গানটি চীনের 'সপ্তম সোনালী মোরগ ও শত ফুল চলচ্চিত্র উত্সবের' সমাপনী অনুষ্ঠানের গান ছিল।

গানের কথাও বেশ প্রাণস্পর্শী। 'তোমাকে না দেখলে আমি অস্থির হয়ে যাই। আমি সময় গুণতে গুণতে তোমার খবরের অপেক্ষা করি। আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করি। তুমি যে কোনো জায়গায় থাকলেও আমি তোমাকে খুঁজবো। রক্ত দিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করা যায়। বেঁচে থেকে হোক, অথবা মরে গিয়ে হোক, আমরা বিচ্ছিন্ন হবো না। দুঃখ-কষ্ট হলেও কাঁদবে না। আমার হাতে তোমার বাসায় ফেরার পথ নির্মিত হবে।'

জ্যাকি চ্যানের চীনা নাম চেং লোং। তিনি ১৯৫৪ সালের ৭ এপ্রিল হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একই সঙ্গে চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, নাট্যকার এবং গায়ক। অভিনেতা হিসেবে জ্যাকি চ্যান হংকং চলচ্চিত্রে সাফলতার সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করছেন। সারা বিশ্বে তার জনপ্রিয়তা ও প্রভাব রয়েছে। চীনের কুংফু চলচ্চিত্রের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি হলিউডে চীনের ঐতিহাসিক সংস্কৃতিকে বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বে চীনের সংস্কৃতি জানানোর এক ধরনের জানালা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। জ্যাকি চীনা চলচ্চিত্র উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রেখেছেন।

জ্যাকি চ্যান আর রিউ ইউয়ান ইউয়ান

প্রিয় বন্ধুরা, এখন শুনছেন ২০০৯ সালে জ্যাকি চ্যানের রেকর্ডিং করা 'দেশ' নামের গানটি। তার সঙ্গে গেয়েছেন লিউ ইউয়ান ইউয়ান। এটি একটি দেশাত্মবোধক গান। ২০১২ সালে ১২তম আধ্যাত্মিক সভ্যতা নির্মাণ বিষয়ক পুরস্কার পেয়েছে গানটি। এ গানে দেশের এবং পরিবারের শান্তিপূর্ণ ও সম্প্রীতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দেশ ও পরিবারের প্রতি গভীর আবেগ ও ভালোবাসা ফুটে উঠেছে।

ইন্টারনেটে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। 'ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং জ্যাকি চ্যানকে সৃষ্টি করেছেন।' এ কথা শুনে অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়। কিন্তু এ কথার সামঞ্জস্যপূর্ণ কারণও আছে। জ্যাকি চ্যান এক সাধারণ পরিবারের সন্তান। তার কোনো বিশিষ্ট পারিবারিক পটভূমি নেই। চলচ্চিত্রে উন্নতি করার জন্য জ্যাকির শক্তিশালী সমর্থনও ছিল না। বহু বছর ধরে অন্যের দেওয়া অসহ্য কষ্ট ও ব্যথা বেদনা সহ্য করে, দুঃসাহস নিয়ে চলচ্চিত্র জগতে একের পর এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে তার অভিনিত চলচ্চিত্রের আয় ২২০ কোটি মার্কিন ডলার। তিনি ১৭বার চীনা চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার আয় এখন ২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এ রেকর্ড কে ভাঙ্গতে পারে সন্দেহ আছে!

শ্রোতাবন্ধুরা, জ্যাকি চ্যানের অনেক বন্ধু আছে। তার বন্ধুরা, সবাই তাকে 'বড় ভাই' ডাকেন। এখন শুনুন তার গাওয়া 'আমার বন্ধু' নামের একটি গান।

জ্যাকি চ্যান বিশ্ববিখ্যাত কুংফু তারকা হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো তিনি সবসময় পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। তিনি উসু এবং অভিনয়কে একসঙ্গে যোগ করেছেন। চলচ্চিত্রে কুংফু প্রদর্শনের পাশাপাশি রক্তাক্ত সহিংসতা এড়িয়ে যান তিনি। জ্যাকি চ্যানই প্রথম মার্শাল আর্ট কমেডির সূচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, তার লক্ষ্য প্রতিটি পরিবারের সব সদস্য যাতে একসাথে বসে তার চলচ্চিত্র দেখতে পারেন এবং উপভোগ করেন। তিনি সত্যি সফল হয়েছেন। জ্যাকি চ্যান কুংফু চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সময় কখনো 'স্টান্টম্যান' ব্যবহার করেন না। যত কঠিন ও ঝুঁকির কাজই হোক না কেনো তিনি সবসময় নিজেই তা করেন। এটা তার আরেকটি বৈশিষ্ট্য।

বন্ধুরা, এবার শুনুন জ্যাকি চ্যান এবং ফান সিয়াও শুয়ানের গাওয়া একটি প্রেমের গান। গানের নাম 'অনৈচ্ছিক'।

আসলেও জ্যাকি চ্যান সাধারণ মানুষ নন। এক সময় তিনি নানা রকম চাপের সম্মুখীন ছিলেন। তিনি ব্রুস লি'র উজ্জ্বল সফলতা অতিক্রম করে আধুনিক কুংফু চলচ্চিত্রে নতুন যুগের প্রবর্তন করেছেন। তিনি রক্ত ও ঘাম দিয়ে এক একটি দুর্জয় শিখর সৃষ্টি করেছেন। এখন তার বয়স ৬০ বছরের বেশি। এ বয়সেও তিনি প্রতি বছর অনুরাগীদের নানা চমক দিচ্ছেন।

এক অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জ্যাকি চ্যান ২৯ বার গুরুতর আহত হয়েছে। হালকাভাবে আহত হওয়ার সংখ্যার হিসাব না-ই করলাম। তার মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত কোনো জায়গা রেহাই পায় নি আঘাত থেকে। বিশেষ করে তার নাকের হাড়, গলা এবং পাঁজর বার বার আহত হয়েছে। তিনি বলেন, 'শরীরের ক্ষত হচ্ছে পুরুষের পদক। চলচ্চিত্র আমার স্বপ্ন। তার জন্য আমি মরে যেতে পারি।'

জ্যাকি চ্যান সব সময় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বের দর্শকদের জন্য একটি সুন্দর পৌরাণিক কাহিনী তুলে ধরেন। শুনুন এমন একটি গান।

'রাশ আওয়ার" চলচ্চিত্রের অভিনেতা ক্রিস টাকার জ্যাকি চ্যানের হাতে 'অস্কার' তুলে দেন। এ সময় জ্যাকি বলেন, 'একজন চীনা হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। হলিউডকে ধন্যবাদ। আমার স্ত্রী লি ফেং চিয়াও এবং ছেলে ফাং জু মিংকেও ধন্যবাদ। যারা আমার সঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। সবসময় আমাকে সমর্থন করা বিশ্বের সব অনুরাগীকে ধন্যবাদ জানাই।"

তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে চীনেও অস্কারের মতো একটি সার্বিক চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তন করা হবে। বিদেশীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।

অভিনয় ছাড়া জ্যাকি চ্যান সমাজসেবার কাজে মনোযোগ দিয়েছেন। ২০০৪ সালে তিনি জাতিসংঘ শিশু তহবিলের শুভেচ্ছা দূত হন। ২০০৬ সালে তিনি ফোর্বস পত্রিকার নির্বাচিত 'সেরা দশজন দাতব্য তারকা' হন।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, এবার শুনুন 'উঠে দাঁড়াও' নামের গানটি। 'একজনের অলিম্পিক' নামের চলচ্চিত্রের থিম সং এটি।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা বিখ্যাত তারকা জ্যাকি চ্যানের কণ্ঠে কয়েকটি গান শুনলেন। তিনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বের দর্শকদের অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত দিয়েছেন। আশা করি, ভবিষ্যতে তিনি আরো নতুন বিস্ময় সৃষ্টি করবেন।

বন্ধুরা, 'সুর ও বাণী' আসর আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040