অথচ কয়েক দশক আগে বোয়াও ছিল একটি অখ্যাত ছোট থানা। এমনকি অধিকাংশ চীনা মানুষও থানাটি সম্পর্কে আলাদাভাবে কিছু জানতো না। বোয়াও'র নাগরিক লু ইয়েমিন এ সম্পর্কে বলেন, 'আগে থানায় মাত্র কয়েকটি গাড়ি ছিল। কোন ভাল সড়ক ছিল না। আমরা প্রধানত কৃষকাজ করতাম ও মাছ ধরতাম। জীপনমান ছিল অনুন্নত।'
২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম বার বোয়াও এশীয় ফোরাম আয়োজনের পর থেকে থানাটি দ্রুতগতিতে উন্নত হতে শুরু করে। থানাটির অবকাঠামো উন্নত হয়। বোয়াও থানার নানছিয়াং গ্রামে বাসিন্দা মো চেহাই বলেন, 'বোয়াও এশীয় ফোরামের স্থায়ী ভ্যেনু হিসেবে নির্ধারিত হওয়ার পর এখানে সড়ক, পরিবহন, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।'
২০১২ সালের শেষ দিকে ছিয়ংহাই শহরে 'গ্রামের মধ্যে শহর ও সুখী ছিয়ংহাই' পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে শুরু করে। শহরটি 'গাছ না-কাটা, গৃহ ভেঙ্গে না-দেয়া, জমি অধিগ্রহণ না-করা এবং সঙ্কটাপন্ন নগরায়ন' পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বোওয়া থানার ভাইস মেয়র ফেং ফেই বলেন, 'বোয়াও এশীয় ফোরাম আয়োজন করার পর থানাটির নগরায়ন প্রক্রিয়ায় গতি আসে। আমরা থানাটিতে বৈশিষ্ট্যময় উন্নয়ন ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেই। সেজন্য আমরা উন্নয়নের ধারায় স্থানীয় সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়েছি। এখন পর্যটকরা বোয়াও-এর সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। আমরা থানার প্রাকৃতিক দৃশ্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।'
এর ফলে বোয়াও আরো বেশি দৃষ্টি আকর্ষক হয়েছে। এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। বোয়াও থানায় স্থানীয় ও আধুনিক সংস্কৃতির মিশেল দেখা যায়। সড়কের দুই পাশে হাইনান প্রদেশের বৈশিষ্ট্যময় চায়ের দোকান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কফি শপ, এবং পশ্চিমা ধাচের মদের বার আছে।
এ ছাড়া, বোয়াও থানার কাছাকাছি দালুপো, নানছিয়াং ও মেইয়া অঞ্চলগুলোও উন্নত হয়েছে। এ সব অঞ্চলে গ্রামের বৈশিষ্ট্যময় সম্পদ ও প্রাকৃতিক দৃশ্য সুরক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শহরের অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। এ সম্পর্কে ফেং ফেই বলেন, 'আমরা নগর ও থানা ছাড়াও ব্যাপকভাবে গ্রামে অবকাঠামো ও সেবার মান উন্নত করেছি। গ্রামবাসীরা নিজ নিজ বাড়ি ত্যাগ না-করেও নগরের সব সেবা পাচ্ছেন।'
বোয়াওয়ের গ্রামবাসীরা পারিবারিক পর্যটনের দিকেও ঝুঁকছেন। স্থানীয় নাগরিক মো চেহাই গ্রামবাসীদেরকে নিয়ে গ্রাম পর্যটন কোম্পানি খুলেছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমাদের গ্রামে ১৮ জন নাগরিক আমার সঙ্গে কোম্পানিটি খুলেছেন। প্রতি মাসে তাদের জনপ্রতি বেতন ৩৫০০ ইউয়ান এবং সাধারণ কর্মীর বেতন ২০০০ ইউয়ান। এ ছাড়া, লভ্যাংশ তো আছেই। গত বছর প্রত্যেকে ৫০০০ ইউয়ান করে লভ্যাংশ পেয়েছেন।'
বোয়াও থানার 'গ্রামের মধ্যে শহর' ধারণা নাগরিকদের জীবন যাপন পদ্ধতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। মো চে হাই বলেন, 'গ্রামের মধ্যে শহর' ধারণা বোয়াওয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সুযোগ সৃষ্ট করেছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'প্রত্যেকের জন্য এখানে কাজ আছে। সড়ক যোগাযোগ উন্নত হয়েছে, পরিবেশও ভালো। নিরাপত্তা আছে। কৃষকদের জীবনমান উন্নত হয়েছে। তাঁরা এখন নিজ নিজ শিশু-সন্তানের শিক্ষার দিকে বেশি নজর দিতে পারছে।'
বোয়াও বিমানবন্দরও চালু হয়েছে। বোয়াও আন্তর্জাতিক চিকিত্সা পর্যটনকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীকেন্দ্রসহ অন্যান্য স্থাপনাও এখানে নির্মিত হবে। মোদ্দাকথা, বোয়াও এশীয় ফোরামের হাত ধরে বোয়াও থানাতে আমুন পরিবর্তন এসেছে এবং দিন দিন থানাটি আরও উন্নত হচ্ছে।