যে কারণে পরাজয় হিলারির
  2016-11-13 14:36:12  cri

সকল জরিপের ফল আর পূর্বাভাস বলছিলো এবারের নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হতে পারেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। কিন্ত শেষ পর্যন্ত মার্কিনিদের রায়ে ধরাশায়ী হয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হয়েছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু কেন হিলারি এমন হোঁচট খেলেন। তা নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে চলছে চুরচেরা বিশ্লেষণ।

সিএনএন'র এক প্রতিবেদনে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত বলা হয়েছে, আফ্রিকান-আমেরিকান, লাতিন এবং তরুণ ভোটারদের ভোট উল্লেখযোগ্য হারে পাননি হিলারি ক্লিনটন। কিছু দিন আগেই রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো, হিলারি জরিপে বারবার এগিয়ে থাকার কারণে তার অনেক সমর্থক ও ডেমোক্র্যাটরা ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী নাও হতে পারেন। তারা ভাবতে পারেন হিলারি ক্লিনটন এমনিতেই জয়ী হবেন। এ নিয়ে হিলারি শিবির একটু শঙ্কিত ছিলো। শেষ পর্যন্ত ভোটের ফল সেই শঙ্কাকে সত্যি করেছে।

নির্বাচনে দেখা গেল আফ্রো-আমেরিকানদের নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য সত্ত্বেও তাদের টানতে পারলেন না হিলারি। ৮৮ শতাংশ আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটারের ভোট পেয়েছেন হিলারি। অন্যদিকে ট্রাম্প পেয়েছেন ৮ শতাংশ ভোট। যেখানে ২০১২ সালে বারাক ওবামা ৯৩ শতাংশ ও মিট রমনি ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। এ কারণে হিলারির জন্য নিরাপদ উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যেও হারতে হয়েছে। পেনসিলভেনিয়া ও মিশিগানের মতো রাজ্যেও তিনি পিছিয়ে পড়েন। আফ্রো-আমেরিকান ভোট টানতে প্রেসিডেন্ট ওবামাও বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে হিলারির হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু তার কথা কানে তুলেনি কৃষ্ণাঙ্গরা।

লাতিনদের বেশি সংখ্যায় আকৃষ্ট করতে পারেননি হিলারি। ৬৫ শতাংশ লাতিনের ভোট পেয়েছেন তিনি। যেখানে ২৯ শতাংশ লাতিন ভোটার ভোট দিয়েছেন ট্রাম্পকে। ২০১২ সালে ওবামা ৭১ শতাংশ লাতিন ভোটারের ভোট পেয়েছিলেন। কার প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রমনি পেয়েছিলেন ২৭ শতাংশ হিস্প্যানিক ভোট। একইসঙ্গে হিলারি তরুণ ভোটারদের কাছে পৌঁছাতেও ব্যর্থ হয়েছেন। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি। ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৭ শতাংশ। অথচ ওবামা পেয়েছিলেন ৬০ শতাংশ ভোট। শ্বেতাঙ্গ ভোটারের কাছে হিলারি ওবামার মতো জনপ্রিয় নন। তিনি মাত্র ৩৭ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ভোট পেয়েছেন। যেখানে ওবামা পেয়েছিলেন ৩৯ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ভোট। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৫৮ শতাংশ শ্বেতাঙ্গদের ভোট। এ বছর ৭০ শতাংশ ইলেকটোরেট নির্বাচিত হয়েছে শ্বেতাঙ্গদের ভোটে।

এশিয়ান ভোটারাও হিলারিকে কম সমর্থন করেছে। এশিয়ান ভোটারদের কাছে ওবামার চেয়ে তার জনপ্রিয়তা কম। ৬৫ শতাংশ এশিয়ান এবার তাকে ভোট দিয়েছে। অথচ ২০১২ সালে ৭৩ শতাংশ এশিয়ান ভোটার তাকে ভোট দিয়েছিলো। নারী ভোটারদের দিকে তাকালে দেখা যাবে হিলারি ৫৪ শতাংশ নারী ভোটারের ভোট পেয়েছেন। সেখানে ট্রাম্প পেয়েছেন ৪২ শতাংশ নারী ভোটারের ভোট। যদিও ৭০ শতাংশ নারী বলেছিলেন, মহিলাদের নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যে তারা বিরক্ত। ২০১২ সালে ওবামা ৫৫ শতাংশ নারী ভোট পেয়েছিলেন।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে হিলারির হারের পেছনে আরো কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন দল টানা তিনবার ক্ষমতায় আসার নজির খুব কম। রোনাল্ড রেগানের পর জর্জ এইচডব্লিউ বুশের ক্ষমতায় আসাটা ছিলো ব্যতিক্রমী ঘটনা। তবে এটাই হিলারির হারার কারণ তা নয়।

বিশ্বমন্দার পর ওবামা অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার বিষয়টি মার্কিনিদের কাছে তুলে ধরতে পেরেছিলেন। কিন্তু অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা বিষয়ে হিলারির পরিকল্পনাকে ইতিবাচক হিসেবে নেয়নি ভোটাররা। অন্যদিকে ট্রাম্প ভোটারদের বোঝাতে পেরেছেন যে, মার্কিন অর্থনীতি খারাপ হওয়ার পেছনে বাজে বাণিজ্যিক চুক্তি ও প্রতারণা ব্যবস্থা দায়ী।

আস্থার সংকটও হিলারির হারের আরেকটি কারণ হিসেবে দেখছে গার্ডিয়ান। হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারি, এফবিআই'র তদন্তের দাবি শেষ পর্যন্ত হিলারির প্রতি ভোটারদের আস্থাহীনতার জন্ম দিয়েছে।

দৃঢ় বার্তার অভাবও অন্যতম কারণ হিলারির হারের। বিভিন্ন প্রচারাভিযানে হিলারি নিজেকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তিনি সত্যিই অনেক বেশি যোগ্য। ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা করলে এটা অনেক খানি সত্য। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে তার কর্মপরিকল্পনার কথা সামনে আনা হয়নি। তার প্রচারণার স্লোগানও চিন্তাশূন্য। ওবামার 'হোপ এন্ড চেঞ্জ' স্লোগান যেভাবে ভোটারদের আকৃষ্ট করেছে হিলারির 'স্ট্রংগার টুগেদার' তেমনটা টানতে পারেনি। বরং ট্রাম্পের স্লোগান অনেক বেশি ভোটারদের আকৃষ্ট করেছে।

নির্বাচনী জরিপও হিলারির জন্য কাল হয়েছে। প্রায় প্রতিটি জরিপে হিলারি এগিয়ে ছিলেন। জরিপের ফলাফলে বলা হচ্ছিলো অনায়াসে জিততে চলেছেন হিলারি। যে কারণে ভোটারদের কাছে প্রত্যক্ষভাবে পৌঁছানোর চেষ্টাও ডেমোক্র্যাটদের কম ছিলো। ল্যান্ডফোন বা মোবাইলে ভোটাদের কাছে ভোট চাওয়ার চেষ্টা কম হয়েছে। আর সর্বশেষ বিংশ শতকের জরিপের পদ্ধতি বিপজ্জনকভাবে ভুল তথ্য সামনে নিয়ে এসেছে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040