টোকিওতে জনপ্রিয় দিবসে পরিণত পশ্চিমা হ্যালোইন
  2016-11-08 14:39:16  cri
সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি'। আর এ অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু ওয়াং ছুই ইয়াং জিনিয়া।

প্রথমে একটি সাংস্কৃতিক খবর।

৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত লুও চাও হুই ও তার স্ত্রী দূতাবাসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দিওয়ালি উত্সব উদযাপন করেন। তারা ভারতীয় কর্মকর্তাদের এ উত্সবের শুভেচ্ছা জানান। দিওয়ালি উত্সব অনেকটা চীনের বসন্ত উত্সবের মত, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উত্সব।

রাষ্ট্রদূত লুও বলেন, চীনা দূতাবাসের প্রতি আপনাদের কয়েক প্রজন্মের সমর্থন ও অবদানের জন্য চীন ধন্যবাদ জানায়। আপনারা দূতাবাস পরিবারের সদস্য। ৮০'র দশকে আমি এখানে কাজ শুরু করি। আপনারা তখনও আমার সহকর্মী ছিলেন। অনেক বছর পার হয়েছে, আমার তখনকার সহকর্মীর ছেলেমেয়েরা এখন দূতাবাসে আমার নতুন সহকর্মী হয়েছেন। আমি অনেক মুগ্ধ। আশা করি সবাই খুব সুন্দরভাবে দিওয়ালি উত্সব উদযাপন করছেন। যদি দৈনন্দিন জীবনে বা কাজে কোনো কষ্ট থাকে, অবশ্যই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

দীপাবলী বা দিওয়ালি সনাতনধর্মীদের বা হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উত্সব। শুধু বাঙালি হিন্দুদেরই নয় বরং এই ধর্মীয় উত্সবটি মহা আড়ম্বরে পালন করে থাকে সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। দুর্গা পূজোর এক মাসের মধ্যেই এই পূজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এটি দিওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও অভিহিত হয়। দুর্গা পূজোর সময় মহালয়ায় শ্রাদ্ধ গ্রহণের জন্য যমলোক ছেড়ে যে পিতৃপুরুষগণ মর্ত্যে আগমন করেন তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে মূলত দীপাবলীতে উল্কা জ্বালানো হয়। আর এই কারণে দেওয়ালির দিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয়। কেউ কেউ রাত্রিতে নিজগৃহে দরজা-জানালায় মোমবাতি জ্বালায়। কেউ কেউ বা লম্বা বাঁশের মাথায় কাগজের তৈরি ছোট ঘরে প্রদীপ জ্বালায়, একে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় আকাশ প্রদীপ। দীপাবলি মানে আলোর উত্সব। প্রতি বিজয়ার ভাসানে- পাঁচদিনের আনন্দ-বিদায়ে অবচেতনে হলেও যে বিয়োগ-বিধুর চেতনায় আবিষ্ট হয় মন, সেই মন দীপাবলিকে সামনে রেখেই আবার আনন্দের স্বপ্ন দেখে।

দীপাবলী মূলত পাঁচদিন ব্যাপী উত্সব। দীপাবলীর আগের দিনের চতুর্দশীকে (এই দিনকে দীপাবলি উত্সবের প্রথম দিন বলা হয়) বলা হয় 'নরকা চতুর্দশী'। এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর স্ত্রী সত্যভামা নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। চতুর্দশী পরের অমাবস্যা তিথি দীপাবলী উত্সবের দ্বিতীয় দিন, কিন্তু এই দিনই মূল হিসেবে উদযাপিত হয়। এই দিন রাতে শাক্ত ধর্মের অনুসারীগণ শক্তি দেবী কালীর পূজা করেন। তা ছাড়া, এই দিনে লক্ষ্মীপূজাও করা হয়, কথিত আছে এই দিনে ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী বরধাত্রী রূপে ভক্তের মনোকামনা পূর্ণ করেন। চতুর্থ দিন হচ্ছে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া, একে যম দ্বিতীয়াও বলা হয়। এই দিন বোনেরা ভাইকে নিমন্তণ করে, কপালে ফোটা দেয়, হাতে রাখী বেঁধে দেয়।

দীপাবলি- শুধু সনাতনধর্মীদের নয়, শিখ এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদেরও অনুষ্ঠান। ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে দীপাবলীতে কালী পূজা হয়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এই দিনে গণেশ পূজা এবং লক্ষ্মী পূজাও করা হয় । দুর্গাপূজোর বিজয়ার পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে হয় লক্ষ্মী পূজো আর অমাবস্যা তিথিতে হয়ে থাকে কালীপূজো ও দীপাবলীর আয়োজন। দীপাবলীর রাতেই অনুষ্ঠিত হয় শ্যামা কালী পূজো। অশুভ শক্তির হাত থেকে প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে রক্ষা করতে, অমাবস্যা রজনীর সমস্ত অন্ধকার দূর করে পৃথিবীকে আলোকিত করার অভিপ্রায়ে এই প্রদীপ প্রজ্বলন।

বন্ধুরা, এখন'টোকিওতে জনপ্রিয় দিবসে পরিণত পশ্চিমা হ্যালোইন' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ।

৩১ অক্টোবর হলো পশ্চিমা ঐতিহ্যবাহী হ্যালোইন দিবস। অনেক পশ্চিমা লোক জাপানে এ দিবসটি অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করেন। কেন জাপানে হ্যালোইন এত আকর্ষণীয়? কেন পশ্চিমা ভালোবাসা দিবসের চেয়ে জাপানে হ্যালোইন আরো জনপ্রিয়, আর জাপান কি এ জন্য বেশি টাকা আয় করতে পারে? এ সব তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো আজকের অনুষ্ঠানে।

গত সপ্তাহে সারা টোকিওতে বিশাল 'হ্যালোইন পার্টি' চলে। শহরের প্রায় প্রতিটি কফিশপ ও মিষ্টির দোকানে বিশেষ হ্যালোইন মেনু প্রচার করা হয়। অধিকাংশ দোকানকে হ্যালোইনের বৈশিষ্ট্যময় সাজে সাজানো হয়। যেমন মিষ্টি কুমড়া ও কঙ্কাল ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

শিবুয়া, শিনজুকু ও ও ইকেবুকুরোসহ জাপানের বিভিন্ন অঞ্চলে দেশটির তরুণ-তরুণীদের ঘুরে বেড়াতে ভাল লাগে। সেজন্য জাপানিরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এ তিনটি শহরে এসে হ্যালোইন দিবস উদযাপন করেন। এখানে অনেক পশ্চিমা লোক থাকেন। তারা বলেন, হ্যালোইন দিবস বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোতে শিশু বা তরুণ-তরুণীদের দিবস, কিন্তু জাপানে বিভিন্ন বয়সের লোকেরা দিবসটি এক সঙ্গে উদযাপন করেন, এ কারণে তারা খুবই খুশি।

সবচেয়ে সরগরম একটি অঞ্চল হলো শিবুয়া। হাজার হাজার লোক বিশেষ পোশাক পরে রাস্তায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করেন। আর নিরাপদে দিবসটি উদযাপনের জন্য বিপুল পরিমাণে পুলিশও নিয়োজিত থাকে।

এবার উত্সবের দিনটিতে সন্ধ্যায় টোকিও'র তাপমাত্রা নিম্ন হলেও রাস্তা ছিলো খুবই সরগরম। লোকজন রাত বারোটার পর পর্যন্তও উত্সবের আমেজে নিজেদেরকে যুক্ত রাখেন।

এক বিশ্লেষণ বলা হয়েছে, জাপানের সমাজে কাজের উচ্চ চাপ থাকায় দেশটিতে হ্যালোইন দিবস এত জনপ্রিয়। যদিও লোকজন মনে করেন, জাপানিরা দৈনন্দিনে জীবনে নিজের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে চলেন। তবে এদিন দিবসটি উদযাপন অনুষ্ঠানে তারা উচ্চস্বরে চিত্কার করেন, নৃত্য করেন। সত্যিই এদিন একধরনের ভ্রাম্যমাণ আনন্দমেলায় পরিণত হয় জাপানের বিভিন্ন অঞ্চল।

গত বছর হ্যালোইন উদযাপনী অনুষ্ঠানের সময় শিবুয়ার রাস্তা যেন যুদ্ধের অবস্থায় পরিণত হয়েছিলো। অনুষ্ঠানের কাছাকাছি বাসিন্দারা অনেক অভিযোগ করেছিলেন। সেজন্য চলতি বছর সরকার সবাইকে শৃঙ্খলা ও পরিবেশ রক্ষার আহবান জানায়। চলতি বছর শিবুয়ার রাস্তায় কয়েক মিটারের মধ্যে এক একটি আবর্জনার ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়। অনেক স্বেচ্ছাসেবকও শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত করা হয়।

হ্যালোইন দিবসটি জাপানে অর্থনৈতিক সুবিধাও বয়ে আনে। উত্সব উপলক্ষ্যে টোকিও'র প্রায় প্রতিটি দোকানে হ্যালোইনসম্পর্কিত পোশাক ও দ্রব্য বিক্রি হয়। পোশাক ছাড়াও চুল, মুখোশ এমনকি বিশেষ হ্যালোইন প্রসাধনীও ব্যাপক আকারে বিক্রি হয় এ সময়।

জাপানি ছাড়া অনেক পশ্চিমা পর্যটকরাও জাপানে হ্যালোইন দিবস উদযাপন করে থাকেন। তারা এ দিবসের পর জাপানের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ান।

শিবুয়া, শিনজুকু ও ও ইকেবুকুরো হলো জাপানের জনপ্রিয় শপিং শহরগুলোর অন্যতম। তা ছাড়া, জাপানের রেস্টুরেন্ট, কফিশপ, মিষ্টির দোকানে হ্যালোইন মেনু প্রচার করা হয়, যা তরুণ-তরুণীদের কাছে খুবই প্রিয়।

প্রথমে বড়দিন, তার পর ভালোবাসা দিবস, বর্তমানে হ্যালোইন, আরো অনেক বেশি পশ্চিমা দিবস প্রাচ্যের দেশগুলোতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

আসলে চলতি বছরের হ্যালোইন দিবসটিতে চীনের চান্দ্রপঞ্জিকা অনুসারে চীনের একটি বিশেষ দিন ছিলো। এ দিনটিতে মৃতদের জন্য একটি উত্সব পালন করা হয় চীনে। চীনে মৃতদের জন্য তিনটি দিবস রয়েছে যে দিবসগুলোতে কৃত্যমূলক অনুষ্ঠান পালন করা হয়। হ্যালোইনের দিনে এবার যে দিবসটি পালিত হয়েছে তাকে 'হান ই দিবস' বলা হয়।

কিংবদন্তীতে বলা হয়, এদিন মৃতদের আত্মা পৃথিবীতে তাদের আত্মীয়স্বজনকে খুঁজতে আসে। এ কারণে আত্মীয়স্বজন তাদের জন্য কৃত্যমূলক কিছু কাজ করেন। আত্মারা পৃথিবীতে এসে আত্মীয়স্বজনদের প্রস্তুতকৃত জিনিসপত্র নিয়ে আবার নিজের জগতে ফিরে যায়।

বন্ধুরা, এবারে শুনুন 'আর্জেন্টিনায় চীনা সিমফনি' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ।

চলতি বছর হলো চীন-লাতিন আমেরিকা সাংস্কৃতিকবিনিময় বছর। এর প্রধান একটি অনুষ্ঠান হিসেবে অক্টোবরের শেষদিকে চীনের ছিং তাও সিমফনি দলের একশো সদস্যের একটি প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা সফরের মধ্য দিয়ে লাতিন আমেরিকা সফর শুরু করে।

ছিং তাও সিমফনি দল হলো 'চীন-লাতিন আমেরিকা সাংস্কৃতিকবিনিময় বছরের ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একটি প্রধান প্রকল্প। সফর উপলক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে দলটি। এতে বিখ্যাত ব্যান্ডলিডার ও বেহালাবাদকসহ বিভিন্ন শিল্পী রয়েছেন।

আমি জানি বাংলাদেশিরা সঙ্গীত অনেক পছন্দ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গীত সিমফনির চেয়ে একটু ভিন্ন। অধিকাংশ সিমফনি ভক্তরা ইউরোপিয়ান। আমিও এক সিমফনি ভক্ত। আমার স্বপ্ন হলো ভিয়েনার গোল্ডেন হলে ভিয়েনা ফিলারমোনিক অর্কেস্ট্রার পরিবেশনা দেখা।

আসলে সিমফনি সংশ্লিষ্ট টপিক নিয়ে আমি অনেক বলতে চাই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গীতপ্রিয় অর্কেস্ট্রা আমার প্রিয়। যেমন-ভিয়েনা সঙ্গীতপ্রিয় অর্কেস্ট্রা, জার্মানির ড্রেসডেন, নিউইয়র্ক ফিলারমোনিক, বোস্টন সিমফনি অর্কেস্ট্রা, বার্লিন সঙ্গীতপ্রিয় অর্কেস্ট্রা, চেক সঙ্গীতপ্রিয় অর্কেস্ট্রা, ফিলাডেলফিয়া অর্কেস্ট্রা, রাশিয়ার লেনিনগ্রাদ ফিলারমোনিক অর্কেস্ট্রা এবং জাপানের এনএইচকে সিমফনি অর্কেস্ট্রা।

আপনি জানেন, এসব চমত্কার বিশ্ববিখ্যাত অর্কেস্ট্রাগুলো চমত্কার ক্লাসিক সিম্ফনি পরিবেশন করে থাকে। ওয়েবসাইটে তাদের অনেক ভিডিও আছে। বন্ধুরা সময় পেলে অবশ্যই তা উপভোগ করবেন।

অর্কেস্ট্রা ছাড়া শাস্ত্রীয় সিম্ফনি সঙ্গীতগুলোও আপনাদের কাছে শেয়ার করতে চাই। জার্মানির বিখ্যাত শিল্পী জনান স্ট্রসের নেন ব্লউয়েন দোনাউ, ওয়ালজার, ফ্রুলিংসটিমেন ওয়ালজার, চেক প্রজাতন্ত্রের শিল্পী আন্তন লিওপোল্ড ভোরাকের হুমোরেস্ক, বিশ্ববিখ্যাত বেথোভেনের ফেট সিমফনি, অস্ট্রিয়ার বিখ্যাত মোজার্টের ফোরটিথ সিমফনি ইন জি মাইনোর, রাশিয়ার বিখ্যাত পিটার চাইকোভস্কির সিমফনি নম্বর.৬প্যাথেটিক।

প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com।

চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়ান। (জিনিয়া/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040