একজন চীনা তরুণের ইসরাইলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার গল্প
  2016-11-12 19:36:32  cri
আপনারা জানেন কি ইসরাইলে বিদেশিদের জন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ আছে? হ্যা, ইসরাইল ছোট দেশ, এর জনসংখ্যাও বেশি নয়। কিন্তু বিদেশিরা চাইলে এখানে ব্যবসা করতে পারেন সহজেই। ইসরাইলের সাবেক এক প্রধানমন্ত্রী তার 'স্টার্ট-আপ নেশন' নামক বইয়ে তার দেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তো, সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন বহু বিদেশি ব্যবসায়ী। চীনা তরুণ ল্যু ইয়ৌ তাদের একজন। আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমি আপনাদেরকে চীনা তরুণ ল্যু ইয়ৌর ইসরাইলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার গল্প বলব।

ল্যু ইয়ৌ'র কোম্পানি তেলআবিবের বিখ্যাত্ ব্যাংকিং সড়কে অবস্থিত। তাঁর কোম্পানির নাম ইসরাইল ভাদি ভেনটুরেস। কোম্পানিটি ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিতে তিন জন ইসরাইলি কর্মী রয়েছেন। তাঁরা চীনা ভাষা জানেন। কোম্পানি গড়ে তোলা সম্পর্কে ল্যু ইয়ৌ বলেন, "২০১১ সালে আমি প্রথম ইসরাইলে আসি। ২০১৪ সাল থেকে চীনা ব্যবসায়ীরা অধিক হারে ইসরাইলে বিনিয়োগ করতে শুরু করে। আসলে বিদেশে ব্যবসা করতে গেলে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। কারণ, দু'দেশের সংস্কৃতি ভিন্ন। আমি একটি যৌথ কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দু'দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি সেতু গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম।"

তার কোম্পানির লোগোয় একটি ফনীমনসা রয়েছে। ল্যু ইয়ৌ বলেন, এর দু'টি অর্থ রয়েছে। এক. ইসরাইলে বিনিয়োগের সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিসহ অন্যান্য স্থানের চেয়ে বেশি। এখানে তুলনামূলকভাবে কম অর্থ বিনিয়োগ করে ভালো কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা যায়। দুই. ইসরাইলে পূর্ব ইউরোপ ও রাশিয়া থেকে আসা প্রবাসীর সংখ্যা বেশি। এখানকার সংস্কৃতি বহুমূখী।"

এদিকে, ইসরাইলিরা 'ফনীমনসা' নামে পরিচিত। কারণ তাঁরা সহজ-সরল অথচ মরুভূমির ফনীমনসার মতো কষ্টসহিষ্ণু। চীন ও ইসরাইলের মধ্যে সংস্কৃতিগত পার্থক্য রয়েছে। আবার দু'দেশের মধ্যে অভিন্ন বিষয়ও রয়েছে। যেমন, চীনের শিক্ষাদান পদ্ধতির সাথে ইসরাইলি পদ্ধতির মিল আছে। ইহুদিবাদে নবায়ন ও উদ্ভাবনকে উত্সাহিত করা হয়, যা চীনা সংস্কৃতিরও বৈশিষ্ট্য। এ সম্পর্কে ওয়াদি কোম্পানির ইসরাইলী কর্মী লিমর বেন মোশে বলেন, "ইহুদি ধর্ম অনুযায়ী আমরা শিশুসহ সবাইকে প্রশ্ন করতে উত্সাহ দেই। ক্লাসে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করতে উত্সাহ দেন। ইহুদিরা সব সময় নতুন কিছু আবিস্কার করতে চায়।"

যদিও ওয়াদি কোম্পানির কর্মী বেশি না, তবুও ব্যবসা ভাল। কোম্পানিটি চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শকের কাজ করে থাকে এবং ইসরাইলে শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া, কোম্পানিটি প্রতি বছর রাজধানী তেল আবিবে চীন-ইসরাইল বিনিয়োগ ফোরাম আয়োজন করে থাকে। লিমর বেন মোশে জানান, আগামী বছর অনুষ্ঠেয় চীন-ইসরাইল বিনিয়োগ ফোরাম থেকে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমরা ইসরাইলের সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে দশটি শীর্ষ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করবো। প্রযুক্তি, বিনিয়োগ, বাজারের ভবিষ্যত ইত্যাদি ফ্যাক্টর বিবেচনায় রেখে তালিকাটি তৈরি করা হবে। প্রতিবেদনটি চীনা বিনিয়োগকারীদেরকে জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে।"

চীনা কোম্পানির ইসরাইলে বিনিয়োগ করা বিষয়ে ল্যু ইয়ৌ বলেন, নিজেদের প্রয়োজন অনুসারেই বিনিয়োগের ক্ষেত্র নির্ধারণ করা উচিত। বিশেষ করে যেসকল ঐতিহ্যবাহী শিল্প-প্রতিষ্ঠান আধুনিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চায়, সেগুলোকে ঝুঁকির কথা মাথায় রাখতে হবে। এ সম্পর্কে ল্যু ইয়ৌ বলেন, "আমার মনে হয়, প্রতিজন বিনিয়োগকারীর উচিত নিজের সামর্থ্য ও প্রত্যাশ্যাকে বিবেচনায় রাখা। অনেক শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। এর মধ্যে অধিকাংশই হল ঐতিহ্যবাহী শিল্প-প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশে নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চায়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাই নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগে দশটি কোম্পানির মধ্যে দু'টির সফল হবার সম্ভাবনা থাকবে।"

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040