স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলা চীনা তুরুণ ইয়ান দে জিয়াও
  2016-11-05 15:23:21  cri

তরুণ ইয়াং দে জিয়াও চীনের ইউননান প্রদেশের মানসিতে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় মা'র প্রভাবে সংগীতের প্রতি তার মনে আগ্রহ জন্মে। পরে তিনি স্বপ্ন দেখা শুরু করেন বুলাং জাতির সংস্কৃতি প্রচারের। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি ২০০৬ সালে চায়না কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটিতে টেলিভিশন স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের ভ্রমণ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। তিনি বলেন, "আমি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সংগীত শিখিনি। আমার মা হলেন সিশুয়াংবাননা'র মেংহাই জেলার বুলাং জাতির সংগীতের উত্তরাধীকারী। তিনি প্রধানত প্রাকৃতিক গান গান। ছোটবেলা থেকে মা'র প্রভাবে সংগীতের প্রতি আমি আকৃষ্ট হতে থাকি। বড় হওয়ার পর আমি মনে করি, আমার উচিত নিজের জাতির সংগীত প্রচারের দায়িত্ব পালন করা। সেজন্য আমি চায়না কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই।"

বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় ইউয়ান দে জিয়াও শানসি, শানদং, তিব্বত ও ইউনান প্রদেশের সাংগ্রি-লার ওপর ভিডিওচিত্র তৈরির কাজে অংশ নেন। এরপর তিনি নিজে বুলাং জাতির ওপর একটি ভিডিওচিত্র তৈরি করতে চাইলেন। নিজের প্রচেষ্টায় বুলাং জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি প্রচার করার গুরুত্ব তার কাছে অনেক। ২০১২ সাল থেকে তিনি বুলাং জাতিসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির ওপর তথ্যচিত্র তৈরি করা শুরু করেন। তিনি তাঁর জন্মস্থানের ঐতিহ্যবাহী শিল্প, সংগীত ও নাচও শেখেন। তিনি বলেন, "আমার সংগীতে আগ্রহ বেশি। আমি সংগীতের জন্য সবকিছু ছেড়ে দিতে পারি। এখন আমি আমার জাতির জন্য সবকিছু ছেড়ে দিতে পারি। আমি এখন এ কাজ করছি। আসলে, যারা একসময় আমাদের জাতির ঐতিহ্যবাহী শিল্প, সংগীত ও নাচ সম্পর্কে সব কিছু জানতেন, তারা মারা গেছেন। এখন কিছু মানুষ কিছু কিছু জানেন। তাঁদের বয়সও ৭০ থেকে ৮০ বছর হয়েছে। যদি আমি এখন এ কাজ না-করি, তবে আমাদের সন্তানদের আমলে এটুকু করাও সম্ভব হবে না। তখন আমাদের জাতির ঐতিহ্যবাহী জিনিস চিরতরে হারিয়ে যাবে।"

ইয়ান দেজিয়াও'র তথ্যচিত্র তৈরির পর্যায় তিনটি। তিনি শুধু ইউননান প্রদেশে সাক্ষাত্কার নেন না, বরং মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে বুলাং জাতির মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "শুরুর দিকে আমি শুধু হস্তশিল্প সংগ্রহ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরে খরচ কমানোর জন্য সংগীত ও নাচ নিয়েও একই সাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেই। এর মধ্যে আমি দালুও, বুলাং, মেংহাই, বাওশান ও লিনছাং ইত্যাদি এলাকায় কাজ করেছি। পরবর্তীকালে আমি মিয়ানমারে বুলাং জাতির সংস্কৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবো। এর পর আমি এ কাজে যাবো থাইল্যান্ড।"

জাতীয় ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি প্রচারের পথে ইয়ান দে জিয়াও বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হন। কিন্তু কোনোকিছুই তাকে তার পথ থেকে দূরে সরাতে পারেনি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আসলে অনেক সময় আমি ক্লান্তি অনুভব করি। আমার মনে হয়, মানুষ আমাকে সহজে বুঝতে পারে না। তাঁরা মনে করে, আমি এ কাজ করে লাভবান হব না। অথচ আমার কাছে এ কাজের ভিন্ন তাত্পর্য রয়েছে। নিজের জাতির সংস্কৃতি সুরক্ষার কাজ অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা যায় না।"

তথ্যচিত্র তৈরি ছাড়াও তিনি নিজের জাতির সংগীত চীনের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে পরিবেশন করার চেষ্টা করছেন। ২০১৩ সালে তিনি বুলাং জাতির প্রাকৃতিক সংগীত বেইজিং টেলিভিশন কেন্দ্রের যুব-চ্যানেলে পরিবেশন করেন। ২০১৬ সালে তিনি আরেকবার তাঁর জাতির সংগীত চীনা জাতীয় টেলিভিশন কেন্দ্র (সিসিটিভি)-এ পরিবেশন করেন। বেইজিংয়ে গণমাধ্যমে কাজ করা প্রথম বুলা জাতির ছেলে তিনি। সেজন্য এখানে তাকে বুলাং জাতির রাজকুমার বলে ডাকা হয়। তিনি নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাচ্ছেন বুলা জাতির সংগীত ও সংস্কৃতি প্রচারে। তিনি বলেন, "আমার বর্তমান ফ্যানের সংখ্যা প্রায় এক লাখ। যদিও খুব বেশি না, তবুও এর কিছু প্রভাব তো আছে। আমি আশা করি, নিজের প্রচেষ্টায় বুলাং জাতির সংস্কৃতির প্রতি আরও অধিক চীনা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবো। শুধু টেলিভিশনের মাধ্যমে নয়, নতুন গণমাধ্যমের মাধ্যমেও বুলাং জাতির সংস্কৃতি প্রচার করার চেষ্টা করছি আমি। বুলাং জাতির একজন হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। আমি বলি, পরজনমেও আমি বুলাং জাতির মানুষ হতে চাই। আমি আমার জাতির সংস্কৃতির জন্য আজীবন কাজ করে যাবো।"

বর্তমানে বুলাং জাতির মাত্র ২৯ জন সদস্য বেইজিংয়ে বসবাস করেন। ২০১৬ সালে বেইজিং বুলাং জাতি সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। সমিতির আওতায় তারা একে অপরকে সহায়তা করেন। ইয়ান দে জিয়াও নিজের বিশ্বাস ত্যাগ করেননি। তিনি তাঁর জাতির সংস্কৃতি প্রচারের কাজকে মিশন হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040