পুবের জানালা: একবিংশ শতাব্দির সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী
  2016-11-02 11:07:43  cri



চলতি বছরের কুয়াং তুং একবিংশ শতাব্দির সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী গত ২৭ থকে ৩০ অক্টোবর কুয়াং তুং প্রদেশের তুং কুয়ান শহরের কুয়াং তুং আধুনিক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রদর্শনকেন্দ্রের আয়তন ৭০ হাজার বর্গমিটার এবং দেশ-বিদেশের ১৫২৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবার প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। প্রদর্শনীতে ৭০০টির বেশি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।প্রদর্শনী চলাকালে প্রদর্শনীর সংগঠক কর্তৃক পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, ৯৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এবার প্রর্দশনীর মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং ৮৯ শতাংশ উত্তারদাতা বলেছেন যে, তারা আগামী প্রদর্শনীতেও অংশ নিতে ইচ্ছুক। আজকের পুবের জানালা অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমরা কুয়াং তুং একবিংশ শতাব্দির সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীসম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন শুনব।

কুয়াং তুং একবিংশ শতাব্দির সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর প্রথম আয়োজন হয়েছিল ২০১৪ সালে।কুয়াং তুং বাণিজ্য প্রমোশন কমিটির উদ্যোগে কুয়াং তুং প্রদেশ, কুয়াং চৌ শহর ও তুং কুয়ান শহরের সরকার যৌথভাবে এ প্রদর্শনী আয়োজন করে। বিগত প্রদর্শনীগুলো ছিল তিন দিনে। এবারের প্রদর্শনী ছিল চার দিনের। এবার এক লক্ষ ৯৮ হাজার দর্শক প্রদর্শনীতে এসেছেন। তাদের মধ্যে আবার ২৫ হাজার ৩০০ জন ছিলেন সরাসরি ক্রেতা।

প্রদর্শনী আয়োজন কমিটির মহাসচিব, কুয়াং তুং বাণিজ্য বিভাগের উপ-প্রধান উ চুন বলেন, "এবার প্রদর্শনীতে ৭০০টির বেশি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব চুক্তির মোট আর্থিক মূল্য ২০ কোটি ৬৮ লাখ ইউয়ান, যা গত বছরের চেয়ে ২.৫ শতাংশ বেশি। এ চুক্তিগুলোর মধ্যে আছে বিনিয়োগ প্রকল্প ১৮৭টি, বিদেশের প্রকল্প ৬৩টি এবং বাণিজ্য প্রকল্প ৪৫০টি। একবিংশ শতাব্দির সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী এখন একটি বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে, যেখানে মানুষ ব্যবসা করে, ক্রয়-বিক্রয় করে। এ প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে কুয়াং তুং প্রদেশ ভ্রমণকারীর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।"

বিদেশী প্রদর্শক ও ক্রেতা আকর্ষণের জন্য, প্রদর্শনী শুরুর আগে আয়োজক কমিটি বিভিন্ন দেশে রোডশোসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রদর্শনীর পক্ষে প্রচারণা চালায়। তা ছাড়া, প্রদর্শনী চলাকালে আয়োজক কমিটি প্রদর্শকদের জন্য বিনামূল্যে খাবার ও বাসস্থান সরবরাহ করেছে। প্রদর্শকরা বিমানবন্দর, হোটেল ও প্রদর্শনকেন্দ্রের মধ্যে ফ্রি বাসে যাতায়তের সুযোগ পেয়েছেন। তা ছাড়া, প্রদর্শনীভবনে তাদের জন্য বিনামূল্যে স্টলও দেওয়া হয়েছে।

তুং কুয়ান বাণিজ্য বিভাগের উপ-প্রধান হুয়াং চাও তুং বলেন, "প্রদর্শনীতে স্টলের জন্য কোনো টাকা দিতে হয়নি প্রদর্শকদের। তাদের জন্য বিনামূল্যে খাবার ও বাসস্থানের ব্যবস্থাও করেছি আমরা। আমরা রোডশো'র মাধ্যমে প্রদর্শনীকে দেশে-বিদেশে পরিচিত করানোর চেষ্টাও করেছি। আমরা রেশমপথসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পণ্য চীনে আনতে চাই এবং চীনা কোম্পানিগুলোর সাথে সেসব দেশের ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ করিয়ে দিতে চাই। এটা একটা উইন-উইন সিচুয়েশান। এর মাধ্যমে দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ও ঘনিষ্ঠতর হতে পারে। আমরা বিনামূল্যে সবকিছু সরবরাহ করি। দৃশ্যত এটা আমাদের ক্ষতি। কিন্তু বিষয়টাকে শুধু অর্থের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে হবে না। আমাদের উদ্যোগ দু'পক্ষের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর করবে। ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাড়বে। এতে দু'পক্ষই লাভবান হবে। বিদেশিরা কেবল তাদের পণ্য নিয়ে এখানে আসছেন এবং তা বিক্রি করছেন, তা কিন্তু নয়। তারা এখানে এসে আমাদের বিভিন্ন পণ্যও কিনছেন। ফলে আমরা সবাই উপকৃত হচ্ছি।"

অনেক প্রদর্শক আগে China Import and Export Fair (Canton Fair)বা China Kunming import and Export Fair-এ অংশ নিয়েছেন এবং তারা প্রথমবারের মতো এসেছেন কুয়াং তুং একবিংশ শতাব্দির সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে। তারা আয়োজক কমিটির কাজে সন্তুষ্ট। তাই প্রদর্শনী চলাকালেই এমন ১৮টি বিদেশি প্রদর্শক আয়োজক কমিটির সাথে এই মর্মে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন যে, আগামী প্রদর্শনীতেও তারা অংশগ্রহণ করবেন।

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক গ্রুপের সংগঠক চিং হুয়া আন্তর্জাতিক ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবস্থাপনা ম্যানেজার ওয়াং সাও পো বলেন, "কুয়াং তুং প্রদেশের একেকটি শহর প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী একেকটি দেশের সাথে যুক্ত হয়েছে। যেমন চাও ছিং শহর বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন তৈরির দায়িত্ব পালন করেছে। প্রদর্শনী শুরুর আগে চাও ছিংয়ের স্থানীয় সরকারের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে সফর করে। প্রতিনিধিদলটি দু'পক্ষের বাণিজ্যিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপায় অন্বেষণ করেন এবং প্রদর্শনীর পক্ষে প্রচারণা চালায়। বাংলাদেশের প্যাভিলয়নের নাম রাখা হয় 'বাংলাদেশ-চাও ছিং'।"

কুয়াং তুং একবিংশ শতাব্দির সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। চীনের মূল ভূভাগের বাইরের অনেক কোম্পানি এখানে সুযোগের সন্ধানে আসছে। এবার ১৫২৬টি অংশগ্রহণকারী কোম্পানির মধ্যে ১০৯৮টি বিদেশি এবং বাকিগুলো হংকং, মাওকাও ও তাইওয়ানের কোম্পানি। বিদেশি কোম্পানি বেশি বলে তাদের সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। যেমন, ইতালি ১২০টি স্টল চেয়েছিল, কিন্তু আয়োজক কমিটি ইতালিকে মাত্র ৬০টি দিতে পেরেছে।

রেশমপথসংশ্লিষ্ট দেশ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশও প্রদর্শনীর ব্যাপারে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ৫২টি দেশ এবার প্রদর্শনীতে স্টল নেয় এবং ৩৯টি দেশ নেয় প্যাভিলিয়ন। মার্কিন-চীন বাণিজ্য সমিতির প্রধান ছাও থিয়ে লিউ বলেন, "একবিংশ শতাব্দির সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে এবং এই প্রদর্শনী চীনের ভবিষ্যত উন্নয়নের দিক নির্দেশ করে। 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশলের মাধ্যমে নানা দেশের মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতা সম্প্রসারিত করছে চীন। আমি আশা করি, 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশল থেকে ইউরোপ ও অতলান্তিক মহাসাগরীয় অঞ্চলও উপকৃত হবে। যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। আমি বিশ্বাস করি, 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশল আমেরিকা ও ইউরোপসহ গোটা বিশ্বকেই যুক্ত করতে পারবে।"

আগামী একবিংশ শতাব্দির সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে ২০১৭ সালের ২৬-২৯ অক্টোবর। তখন প্রদর্শনী অঞ্চলের আয়তন ৭০ হাজার বর্গমিটার থেকে বেড়ে হবে এক লাখ বর্গমিটার। প্রদর্শনীর আয়োজক কমিটির নির্বাহী মহাসচিব চেন ছুং ছিউ বলেন, "২০১৭ সালের একবিংশ শতাব্দির সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে আমরা সেবার মান আরো উন্নত করা চেষ্টা করবো। প্রদর্শনের জন্য যে সব পণ্য বিদেশ থেকে আসবে সেগুলোর পরিবহন ও ক্লিয়ারেন্স বিষয়ে আমরা সুবিধা দেব। প্রদর্শনীকেন্দ্রটিও আগের চেয়ে আরও সুন্দর হবে।"

আগামী প্রদর্শনীর জন্য নতুন একটি প্রদর্শনীকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কেন্দ্রটি এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যেন, বছরের প্রতিটি দিনেই এখানে কোনো না কোনো প্রদর্শনী বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায়। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040