ইউ ছিং জিয়া ও তাঁর জাপানি মিষ্টির দোকানের গল্প
  2016-10-29 18:18:42  cri

২০০৮ সালে বেইজিং নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর, ইউ ছিংজিয়া টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'শহুরে দুর্যোগ' বিষয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। একবার তাঁর জন্মস্থান থেকে দু'শ কিলোমিটার দূরে বেইছুয়ান জেলায় ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। তিনি দু'মাস ধরে দুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণকাজে অংশগ্রহণ করেন। ইউ ছিং জিয়া টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন সাত বছর। এ সময় তিনি স্নাতকোত্তর, ডক্টোরাল, ও পোস্ট ডক্টোরাল ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১১ সালে জাপানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় ইউ ছিংজিয়া দুর্গত এলাকায় গবেষণাকাজ চালান। তিনি বলেন, 'তখন প্রতিদিন কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হতো। একসময় মনে হলো, একটা শখ থাকলে মন্দ হতো ওনা। টোকিওতে তখন আমার বাড়ির কাছাকাছি একটি মিষ্টি তৈরির প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছিল। এটি জাপানে এ ধরনের শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এখানে ৩ থেকে ৪ ধরণের মিষ্টি তৈরি শেখানো হয়। এ ছাড়া, কেন্দ্রটিতে নিরীক্ষণ কার্যক্রম, হিসাবরক্ষণ, স্বাস্থ্য নিয়ম ও উপকরণ জ্ঞানের ক্লাসও রয়েছে। আমি সেখানে দু'বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমি ৪ থেকে ৫শ' ধরণের মিষ্টি তৈরি করতে শিখেছি।'

২০১৫ সালে ইউ ছিং জিয়া পোস্ট ডক্টোরাল ডিগ্রি পাওয়ার পর স্বামীর সঙ্গে চীনে ফিরে আসেন। কিন্তু তিনি নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত কোনো পেশা গ্রহণ করেননি। কারণ, দুর্গত এলাকায় গবেষণা করতে করতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। পাশাপাশি তিনি দেখলেন, বেইজিংয়ে জাপানি মিষ্টির কোনো দোকান নেই। তিনি বেইজিংয়ে নিজে জাপানি মিষ্টির দোকান খুলতে চাইলেন। তিনি দুই মাসের মধ্যে বেইজিংয়ে নানলুওকুসিয়াংয়ের কাছাকাছি জায়গায় একটি ছোটো দোকান খুলেন। ২০১৫ সালের অগাষ্ট মাসে ইউ ছিং জিয়ার 'সিংকুও' নামের দোকানটির উদ্বোধন করা হয়। তিনি বলেন, 'তখন আমার প্রথম দোকানে মাত্র আমি ও আমার স্বামী দুই জন। আমি দোকানে নিজের তৈরি মিষ্টির ছবি তুলে ওয়েবসাইটে দিই। এরপর অনেকেই আমার দোকানে আসতে শুরু করেন। অফিস ছুটির পর অনেকেই ঘন্টা খানেক সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আমার দোকান থেকে জাপানি মিষ্টি কিনতেন। কারণ বেইজিংয়ে আমার দোকানেই আসল জাপানি মিষ্টি পাওয়া যেত।'

ইউ ছিং জিয়া যেমনটা অনুমান করেছিলেন, বাস্তবে তার দোকানের মিষ্টির চাহিদা ছিল তারচেয়ে অনেক বেশি। সেজন্য তিনি আরেকটি নতুন দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে 'সিংকুও-২' খোলা হয়। ইউ ছিং জিয়া বলেন, 'আমি ভাবতেই পারিনি যে আমার প্রথম দোকানটি অতো জনপ্রিয়তা পাবে। তখন শনিবার ও রোববারে বিক্রির পরিমাণ সপ্তাহের বাকি পাঁচ দিনের চেয়ে বেশি ছিল। আমার প্রথম দোকানটি খুব ছোটও। সেজন্য আমি আরেকটি বড় দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিই।'

এখন ইউ ছিং জিয়ার দুই দোকানে কর্মী মোট ১২ জন। প্রথম দোকান খোলার প্রথম দিকে মাত্র চার ধরণের মিষ্টি বিক্রয় হতো। এখন ১০ ধরণের মিষ্টি বিক্রি হয়। কিন্তু তিনি কখনই তার মিষ্টির দাম বাড়াননি। তিনি বলেন, তাঁর অধিকাংশ খরিদ্দার শিক্ষার্থী। তাই তিনি কখনও দাম বাড়াননি। তাঁর দোকানে মিষ্টি তৈরি নিয়মকানুন অনেক কঠোর। তাঁর দোকানের ব্যবসা ভাল, অথচ স্থায়ী কর্মী খুবই কম। এটি হল তাঁর সবচেয়ে কঠিন চ্যালেন্ঞ্জ। তিনি বলেন, 'বস হিসেবে আমার সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো অস্থায়ী কর্মীদের সামলানো। মানসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সেজন্য কর্মীদের ব্যবস্থাপনা আমার জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ।'

তিনি আরও জানালেন, মিষ্টির ব্যবসা করলেও, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা শিখেছেন, তা ভুলে যাননি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমার পরিকল্পনা হচ্ছে, ব্যবসা স্থিতিশীল হলে, কোনো পেশাদার ম্যানেজারের ওপর দোকানের দায়িত্ব ছেড়ে দেব। আমি নিজে তখন মিষ্টির একটি বড় কারখানা প্রতিষ্ঠা করবো এবং ই-কমার্সের দিকে নজর দেবো। তবে, আমি কখনো নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে ত্যাগ করবো না। আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, নিজের একটি বেসরকারি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনার ওপর অর্জিত শিক্ষা কাজে লাগানো।'

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040