মোফান বই দোকানের প্রতিষ্ঠাতা চিয়াং স্যুনের গল্প
  2016-10-22 15:56:17  cri

বেইজিংয়ে ছিয়ানমেন দাশিলা এলাকায় একশ' বছরের পুরনো ভবনে একটি সুন্দর ও ছিমছাম বইয়ের দোকান আছে। দোকানের পরিচালকের নাম চিয়াং স্যুন।

দুই বছর আগে চিয়াং স্যুন এ ভবনটি প্রথম দেখেন। ভবনটি ঠিক কতো সালে নির্মিত হয়েছিল, বলা মুশকিল। তবে, ভবনের গায়ে 'প্রকাশনালয়' শব্দটি লেখা আছে। ভবনের উল্টো দিকে একটি প্রাচীন বইয়ের দোকানও রয়েছে। তাই চিয়াং স্যুন চাইলেন এই ভবনকে একটি বইয়ের দোকানে রূপান্তরিত করতে। কয়েক মাসের চেষ্টায় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চিয়াং স্যুনের বইয়ের দোকান চালু হয়।

বই দোকানের প্রতিষ্ঠাতা চিয়াং স্যুন একজন কবি, চিত্রশিল্পী, ডিজাইনার, সংগ্রাহক ও প্রকাশক। তিনি নিজে দোকানটি সাজিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার বই দোকানটি বেশ কয়েকটি অংশে বিভক্ত। একটি হচ্ছে বিক্রি এলাকা। জায়গাটি খোদাইশিল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে। এর পেছনে চা-পানের জায়গা। দ্বিতীয় তলায় একটি পরিদর্শনকেন্দ্র আছে। আছে, সদস্যদের বসার জায়গা। আমি একশ' বছর আগের মতো করে দোকানটি সাজিয়েছি। প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ও আমি উপেক্ষা করিনি। আশা করি, আমি অতিথিদেরকে জন্য একটি প্রাচীন পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছি।'

তিনি বলেন, তাঁর বইয়ের দোকানটি যেন ইন্টারনেট যুগে একি দ্বীপের মতো, বিচ্ছিন্ন। ইন্টারনেটের এই যুগে বই পড়া এখন আর আগের মতো জনপ্রিয় নয়। তথাপি এ ধরনের বইয়ের দোকান থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমি একবার মুদ্রিত বইয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর একটি ভাষণ দিয়েছিলাম। বর্তমানে ওয়েবসাইটের যুগে কাগজের তথা মুদ্রিত বই কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। তাই বইয়ের বিশেষ ডিজাইনের মাধ্যমে মানুষকে আকৃষ্ট করতে হবে। আর বই দোকানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সুন্দর পরিবেশ। তারপর বই দোকানে বিশেষ ও সুখপাঠ্য বই থাকাও দরকার। আমার মনে হয়, আমার মোফান বই দোকান এ দু'টি শর্ত পূরণ করেছে।"

দোকানে কাঠের আলমারিতে চিয়াং স্যুন নিজের ডিজাইনকৃত বই রেখেছেন। দোকানে থরে থরে সাজানো শিল্প, স্থাপত্য, ডিজাইন, দর্শনশাস্ত্র ও মনোবিজ্ঞানের বইগুলো বিভিন্ন পন্ডিত ও বিশেষজ্ঞের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এ সম্পর্কে চিয়াং স্যুন বলেন, "গত বছর আমি নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী মো ইয়ান সাহেবের জন্য একটি হাতের কাজ করা বই ডিজাইন করেছি। আমি প্রাচীন চীনা বৈশিষ্ট্যময় করে বই ছেপেছি। আমি নিজের ডিজাইন ও প্রাচীন ডিজাইনকে সমন্বিত করেছি।"

১২ বছর বয়স থেকে চিয়াং স্যুন এ পর্যন্ত ৩০ হাজারেরও বেশি বই ছাপার খোদাইকৃত কাঠ তৈরি করেছেন। ২০০০ সালে তিনি 'বৃষ্টিসিক্ত পাহাড়ি ঘর' নামের চিত্রশালা প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে তিনি প্রাচীনকালে যেভাবে বই প্রকাশের জন্য খোদাইকৃত কাঠ ব্যবহার করা হতো, ঠিক সেভাকে খোদাইকৃত কাঠ তৈরি করে থাকেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'প্রাচীন প্রযুক্তিকে নতুন করে উপস্থাপন করাটা জরুরি। প্রাচীন বৈশিষ্ট্যকে ধারণ কারা পাশাপাশি আধুনিক বৈশিষ্ট্যকেও যোগ করতে হবে। আমার নিজের তৈরি এ ধরণের সাংস্কৃতিক পণ্যের চাহিদা ভালো।"

দোকানের দ্বিতীয় তলায় শোরুমে বিভিন্ন পণ্যের প্রদর্শনী। প্রাচীন এসব পণ্য চিয়াং স্যুনের সংগ্রহ। তিনি তাঁর বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতদের প্রায়ই নিজের সংগ্রহ পরিদর্শন করতে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, 'মোফান বই দোকান প্রচলিত জনপ্রিয় দোকানের মতো নয়। আমরা মূলত বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতদেরকে সেবা দিয়ে থাকি। এখানে কাঁচপত্র ও চীনামাটিসম্পর্কিত বই আছে। আমরা বছরে চার থেকে ছয় বার ঐতিহ্যবাহী এসব পণ্যের প্রদর্শনীর আয়োজনও করে থাকি।"

আসলে দোকানটি এখন অনেক জনপ্রিয়। দোকানটি ইয়াংমেইচুসিয়ে সড়কে অবস্থিত। সড়কটি পর্যটকদের প্রিয় জায়গা। তাই দোকানে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। চিয়াং স্যুন তার দোকানে তরুণ-তুরুণীদের আগমনে সবচেয়ে বেশি খুশী হন। তাঁরা বিভিন্ন ধরণের বই কিনে থাকে। চিয়াং স্যুন বলেন, 'আমি মনে করি, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়ছে। তাঁদের সুন্দর কবিতা ও গল্পে বেশি আগ্রহ। সম্প্রতি আমি অনেক কবিতার বই বিক্রি করেছি। অনেক তরুণ-তরুণী ও ছাত্রছাত্রী আমার দোকানে এসে কবিতার বই খোঁজে। তাঁরা জানায়, কবিতা পড়তে তারা ভালোবাসে।'

বই পড়ার প্রতি আধুনিক প্রজন্মকে আকৃষ্ট করা এবং প্রাচীন ঐতিহ্যকে তুলে ধরা মোফান বই দোকানের আসল লক্ষ্য। মোফান বই দোকানের প্রতিষ্ঠাতা চিয়াং স্যুন হলেন প্রাচীন সংস্কৃতিতে বসবাস করা একজন আধুনিক মানুষ।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040