চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং-এর বাংলাদেশ সফর নিয়ে সাধারণ মানুষের মূল্যায়ন
  2016-10-18 15:23:02  cri


নতুন ইতিহাসে বাংলাদেশ-চীন। মহামান্য চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং-এর 'ঐতিহাসিক' বাংলাদেশ সফরে 'সফল' দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের 'নতুন দিগন্ত' উন্মোচিত হয়েছে।

শি চিন পিংয়ের এই সফরের মধ্য দিয়ে চীন ও বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক 'কৌশলগত সম্পর্কে' উন্নীত হয়েছে।

'ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড' নীতি ধরে এগিয়ে যাওয়া চীনের সহযোগিতা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের এই ঢাকা সফর।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের রাষ্ট্রপ্রধানের এ সফরকে সম্পর্কের 'নতুন যুগের সূচনা' বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সফরের সময় চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং বলেছেন, আমি খুব খুশি ছয় বছর পর বাংলাদেশের মতো একটা সুন্দর দেশ সফর করতে পেরেছি। চীন ও বাংলাদেশ ভাল প্রতিবেশী, ভাল বন্ধু এবং ভাল অংশীদার। এ সফর সামগ্রিকভাবে দুই দেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থার সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা প্রস্তুত। দুই দেশের সহযোগিতার সম্পর্ককে আমরা আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, আমরা এক চীন নীতিতে আমাদের জোরালো সমর্থন দিয়েছি। আমরা খুবই ঘনিষ্ঠভাবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভাবে পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।

ব্যবসা-বাণিজ্য, সমুদ্র সহযোগিতা, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিভিন্ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে ২২ ঘণ্টার সফরকালে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দুই দেশ। একই সঙ্গে উদ্বোধন করা হয়েছে ৬টি প্রকল্পের।

১৪ই অক্টোবর চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

এর আগে দুই নেতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল কক্ষে একান্ত বৈঠক করেন এবং পরে চামেলি কক্ষে দুই দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বৈঠকে অংশ নেন। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক 'সফল' হয়।

এদিকে ৩০ বছর পর চীনা প্রেসিডেন্টের প্রথম বাংলাদেশ সফরকে ঘীরে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্স এবং অনলাইন মিডিয়ায় ব্যাপক গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মনেও গভীর ছাফ ফেলে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরটি।

সাধারণ মানুষ চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরটিকে কিভাবে গুরুত্ব দিয়েছে, কিংবা তারা কিভাবে মূল্যায়ন করেছেন আমি তা জানার চেষ্টা করি বিভিন্ন শ্রেণী পেশার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে।

আমি কথা বলেছি, বাংলাদেশ-চীন গণমৈত্রী সমিতির আজীবন সদস্য এবং ইউএন কমিটি অন দ্যা রাইটস অফ পারসন্স উইথ ডিজেবিলিটিস-এর প্রাক্তন সদস্য মনসুর আহমেদ চৌধুরী, সিআরআই লিসনার্স ক্লাব অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউল করিম বেলাল, সাবেক সংসদ সদস্য আসমা জেরিন ঝুমু, কবি ও লেখক শ্বাশত ওসমান, 'ব্যাংক, বীমা ও অর্থনীতি' পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ওয়াহেদ হোসেন এবং সিআরআই লিসনার্স ক্লাব অব বাংলাদেশের মহাসচিব জিল্লুর রহমান জিলু'র সাথে।

শি চিন পিং ১৪ই অক্টোবর সকালে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে উষ্ম স্বাগত জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রীয় এই অতিথিকে ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। লাল গালিচা সংবর্ধনার সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল তাকে গার্ড অফ অনার দেয়। বাজানো হয় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত।

বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে চীনের প্রেসিডেন্ট মোটর শোভা যাত্রার মাধ্যমে হোটেল লা মেরিডিয়ানে পৌঁছান। বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেন চীনের প্রেসিডেন্ট।

এরপর চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং হোটেলে ফিরলে সেখানে তার সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন দুই রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ ও শি চিন পিং। সফররত প্রেসিডেন্টের সম্মানে নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।

চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা-বেজিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়বে।

১৫ই অক্টোবর শনিবার সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর চীনা প্রেসিডেন্ট ঢাকা ত্যাগ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং-কে বিদায় জানান।

দিদারুল ইকবাল

চীন আন্তর্জাতিক বেতার

বাংলাদেশ।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040