"৩০ বছর পর চীনের কোনো প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করবেন। এটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি ঐতিহাসিক মূহুর্ত। সি'র সফর দু'দেশের সহযোগিতা ও মৈত্রীর জন্য নতুন দরজা খুলবে।"
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ ও চীন পরস্পরের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। কুটনৈতিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার পর গত ৪১ বছর ধরে দু'দেশের সরকার ও জনগণের যৌথ প্রয়াসে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সম্পর্ক ক্রমশ সামনে এগিয়েছে। তিনি বলেন,
"চীন-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষা উত্তীর্ণ। আমার পিতা ১৯৫২ সালে চীন সফর করেছিলেন। তারপর তত্কালীন চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ঢাকা সফর করেন। ১৯৫৭ সালে আমার পিতা জাতীয় সংসদের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে আবার চীন সফর করেন। ১৯৯৬ সালে আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চীন সফর করি। জনাব সি চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেছেন। নেতৃবৃন্দের এ ধরনের সফর বিনিময় দু'দেশের মৈত্রীর জন্য সহায়ক। তা ছাড়া, অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানিসম্পদ ও কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতাও ব্যাপক।"
শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে বিশ্বাসী বাংলাদেশ। বাংলাদেশ চীনের উন্নয়নপথকে সম্মান ও সমর্থন করে এবং একচীন নীতিতে বরাবরই অটল।
সাম্প্রতিক কালে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাজসরঞ্জাম পর্যন্ত চীনে উত্পাদিত প্রায় সবধরনের পণ্যই বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায়। চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করছে। পদ্মাসেতু নির্মিত হলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি এলাকার সাথে ঢাকার যোগাযোগ সহজতর হবে বলেও শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন।
চীন সরকারের উত্থাপিত 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশল বাস্তবায়ন এবং 'বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর' নির্মাণকাজে অংশগ্রহণ করতে বাংলাদেশ আগ্রহ প্রকাশ করে এসেছে গোড়া থেকেই। এ সম্পর্কে হাসিনা বলেন,
"পারস্পরিক যোগাযোগ ও বিনিময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর নির্মিত হলে স্থল বা রেলপথের মাধ্যমে এতদঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপিত হবে। তখন খুনমিং থেকে মিয়ানমার, ভারত ও বাংলাদেশে সড়কপথে পৌঁছানো যাবে, যা আঞ্চলিক অর্থনীতির জন্য অনেক সহায়ক হবে। এর পাশাপাশি আমরা ভুটান, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি স্থলযোগাযোগ স্থাপনের জন্যও চেষ্টা করছি।"
শেখ হাসিনা আরও বলেন, চীনের সাথে সম্পর্ককে উচ্চপর্যায়ের গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণে চীনের আন্তরিক সাহায্যের জন্য তিনি বেইজিংয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। প্রেসিডেন্ট সি'র এবারকার সফর বাংলাদেশ ও চীনের ঐতিহ্যিক মৈত্রীকে আরও সুসংবদ্ধ ও জোরদার এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করবে বলে বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (সুবর্ণা/আলিম)