বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতি অত্যন্ত ধীর গতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে এবং এই প্রক্রিয়ায় ভারসাম্যহীনতাও লক্ষ্যণীয়। এমনি একটা সময়েও ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে এবং দেশগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। গত সেপ্টেম্বরে হাংচৌ জি-টোয়েন্টি শীর্ষসম্মেলন চলাকালে ব্রিকসভুক্ত দেশের নেতৃবৃন্দ একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। সেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য নতুন পদ্ধতি সৃষ্টি করা, বৈশ্বিক পর্যায়ে উন্নয়ন ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখা, এবং যৌথভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রশাসনিক দুর্বলতা দূর করার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়। সে বৈঠকের এক মাস পরই ব্রিকসভুক্ত পাঁচটি দেশের নেতারা গোয়াতে অষ্টম শীর্ষসম্মেলনে মিলিত হতে যাচ্ছেন। এ সম্পর্কে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লি বাও তুং সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন,
"গোয়া সম্মেলন থেকে ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একতা ও সহযোগিতার বার্তা পুনরুচ্চারিত হওয়া উচিত। হাংচৌ জি-টোয়েন্টি শীর্ষসম্মেলন চলাকালে ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর নেতারা একাধিক ইস্যুতে মতৈক্যে পৌঁছেছিলেন। ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো জি-টোয়েন্টিরও সদস্য। আশা করা যায়, গোয়া সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক গভীরতর করা ও পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করার তাগিদ অনুভব করা যাবে।"
তিনি আরও বলেন, ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক ও সহযোগিতার মান আরও উন্নত করা জরুরি। গোয়া সম্মেলন চলাকালে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে আর্থ-বাণিজ্য ও দক্ষ জনশক্তি খাতে সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণ করার আগ্রহ দেখাবে চীন। আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে আদান-প্রদান ও সমন্বয় জোরদার করে অভিন্ন স্বার্থ রক্ষা করা এবং এতদঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংলাপ ও সহযোগিতা জোরদার করার আগ্রহও গোয়া সম্মেলনে দেখা যাবে বলে চীন আশা করে।
গোয়া সম্মেলনে পাঁচটি দেশের নেতৃবৃন্দ ব্রিক্স বাণিজ্য ও শিল্প পরিষদের প্রতিনিধিদের সাথে সংলাপ করবেন। এ সংলাপ হবে এমন একটা সময়ে যখন ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দশ বছর পূর্তি হয়েছে। বিগত ১০ বছর ধরে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে আর্থ-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতায় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ব্রিক্সের দেশগুলো 'নতুন উন্নয়ন ব্যাংক' ও জরুরি তহবিল গঠন করেছে। তা ছাড়া, একদিকে রাজনৈতিক নিরাপত্তা খাতে ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা যেমন গভীরতর হচ্ছে, তেমনি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক নিরাপত্তা ইস্যু নিয়েও কার্যকর সংলাপ হচ্ছে। এ সম্পর্কে লি বাও তুং বলেন,
"সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তথ্য ও ইন্টারনেট নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা গভীরতর হয়েছে এবং বিশেষ কর্মদল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সন্ত্রাসদমনে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক হট ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় বজায় রেখে এসেছে পাঁচ দেশের নেতৃবৃন্দ। এ ব্যবস্থাপনা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ইতিবাচক ভুমিকা পালন করেছে এবং করবে।"
ভারতে ব্রিক্স শীর্ষসম্মেলনে অংশ নেওয়ার আগে ক্যাম্বোডিয়া ও বাংলাদেশ সফর করবেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। সফরকালে তিনি দু'দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা দলিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এ সম্পর্কে চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোং স্যুয়ান ইয়ো বলেন, ক্যাম্বোডিয়া ও বাংলাদেশ চীনের সুপ্রতিবেশী। চীন সরকারের উত্থাপিত 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশলের ব্যাপারে দু'দেশই ইতিবাচক আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি'র আসন্ন সফর এই দু'দেশের সাথে চীনের সহযোগিতার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,
"প্রেসিডেন্ট সি'র ক্যাম্বোডিয়া ও বাংলাদেশ সফরকালে 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশলের কাঠামোতে পারস্পরিক সহযোগিতা ইস্যুটি গুরুত্ব পাবে। কারণ, এ দুটি দেশ 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশলের সমর্থক এবং এতে অংশ নিতে আগ্রহী। সফরকালে এ দু'টি দেশের সাথে ভবিষ্যত সহযোগিতার নতুন ধারণা তুলে ধরবেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।" (সুবর্ণা/আলিম)