0930china
|
'হোং নিয়াং' কে? তিনি কি করেন? বাংলা ভাষায় যাকে বলা হয় ঘটক, চীনা ভাষায় তিনিই হলেন 'হোং নিয়াং'। তিনি অবিবাহিত ছেলে-মেয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং তাদেরকে পরস্পরের পরিচিত মানুষ করে তোলেন। কেন ঘটককে 'হোং নিয়াং' বলা হয়? এর পিছনে রয়েছে একটি চমৎকার গল্প।
সাতশ' বছরেরও বেশি আগে চীনে সবাই হোং নিয়াংয়ের নাম জানতো। তিনি হলেন ইউয়ান রাজবংশের নাটক 'সিসিয়াংজি'র একটি চরিত্র। এ চরিত্রটি হলো একটি চাকরানির। তখনকার চীনে ছেলেমেয়েরা স্বাধীনভাবে মেলামেশা করতে পারত না। তবে নাটকে 'চাংগুং' নামে একজন শিক্ষার্থী তখনকার প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে 'ছুই ইংইং'র প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে যায় এবং গোপনে গোপনে তারা পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ করে ও একে অপরকে ভালোবাসে। 'হোং নিয়াং' হলেন 'ছুই ইংইং'র চাকরানি, শুরুতে সেও এমন স্বাধীন মেলামেশা সমর্থন করে না।
পরবর্তীতে সে বুঝতে পারে, তারা পরস্পরকে অনেক ভালোবাসে। সে আরো বুঝতে পারে, কোনোভাবেই তারা ছুই ইংইংয়ের মায়ের স্বীকৃতি পাবে না। এমন অবস্থা দেখে 'হোং নিয়াং' তাদেরকে সহানুভূতি জানায়। হোং নিয়াংয়ের মনে হয়, ছেলেটি অনেক বুদ্ধিমান এবং মেয়েটি অনেক সুন্দর; তারা পরস্পরের জন্য অনেক উপযোগী। তাই 'হোং নিয়াং' তাদেরকে পরস্পরের চিঠি আদান প্রদান ও দেখার ব্যবস্থা করতে সাহায্য করে। পরে ছুই ইংইংয়ের মা এটি জানতে পারে। সে রেগে গিয়ে হোং নিয়াংকে চাবুক মারেন। কিন্তু হোং নিয়াং শরীরের ব্যথা উপেক্ষা করে ছুই ইংইংয়ের মাকে তাদের গভীর ভালোবাসার কথা জানায় এবং তাকে ছুই ইংইং ও চাংগুংর বিয়ের অনুমতি দেয়ার অনুরোধ জানান। তখন তার মা বাধ্য হয়ে বলেন, যদি চাংগুং সরকারি কর্মকর্তা নির্বাচনের পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেন অর্থাত্ 'চুয়াং ইউয়ান' হতে পারে, তাহলে তিনি তাদের বিয়ের অনুমোদন দেবেন। অবশেষে হোং নিয়াংয়ের সাহায্যে চাংগুং চুয়াং ইউয়ান হন এবং ছুই ইংইংকে বিয়ে করে।
নাটকে হোং নিয়াংয়ের চরিত্র শুধু সৎই নয়, বরং অনেক বুদ্ধিমান। তাই পরবর্তীতে লোকেরা ঘটককে 'হোং নিয়াং' বলে ডাকা শুরু করলো। বর্তমানে শুধু ছেলেমেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রেই নয়, সমাজ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের সবাইকে 'হোং নিয়াং' বলে ডাকা হতে থাকে।