সুর ও বাণী : তিব্বতে প্রবেশ করুন
  2016-09-21 21:30:00  cri


সম্প্রতি আমার কয়েকজন সহকর্মী কাজের জন্য তিব্বতে গেছেন। তাদের তোলা ছবিগুলো দেখে সত্যি মনমুগ্ধ হয়েছি। তিব্বত সবার কাছে 'পৃথিবীর ছাদ' নামে পরিচিত। দূ:খের বিষয়, আমি কখনো তিব্বতে যাই নি। যাওয়ার বড় ইচ্ছে আছে। বন্ধুরা, চলুন, সংগীতের তালে তালে আজ আমরা তিব্বতে প্রবেশ করি। সেখানকার অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করি সকলে এক সাথে।

বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন গায়িকা থান ওয়েই ওয়েইয়ের গাওয়া 'তিব্বতে প্রবেশ' নামে একটি গান। এ গানটি 'খোং ফান সেন' নামের  টিভি নাটকের থিম সং। এ গান তিব্বতী সংস্কৃতি সম্প্রচারে বিশেষ অবদান রেখেছে। গানটিতে তিব্বতের মোহিনীশক্তি ফুটে উঠেছে। এ গানে বলা হয়েছে, 'তিব্বতে প্রবেশ করলে ভ্রমণের আদর্শ খুঁজে পাবেন। তিব্বতে প্রবেশ করলে স্বর্গ দেখা যেতে পারে। তুষার আবৃত পাহাড়ের দিকে যাই। মালভূমির দিকে যাই। সূর্যালোকের দিকে যাই। তিব্বতে যাই।'

চীনা ভাষায় তিব্বত উচ্চারণ 'সি চাং'। ছিং রাজবংশের কেন্দ্রীয় সরকার এ আনুষ্ঠানিক নামকরণ করেছে। চীন গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫১ সালের ২৩ মে তিব্বত মুক্তি পায়। ১৯৬৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ অঞ্চলের আয়তন ১২ লাখ ২২৩০ বর্গকিলোমিটার। চীনের মোট আয়তনের প্রায় আট ভাগের এক ভাগ তিব্বত। আয়তনের দিক থেকে চীনের সব প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যে কেবল সিনচিয়াংয়ের পরে এর অবস্থান। তিব্বত চীনের একটি অবিচ্ছেদ অংশ। তিব্বতী জাতি চীনা জাতি পরিবারের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বন্ধুরা, এবার শুনুন 'তিব্বতের প্রেম' নামের সুরটি।

'তিব্বত' শব্দটি ইংরেজী 'Tibet' থেকে এসেছে। কারণ প্রাচীনকালে টার্কস এবং মঙ্গোলীয়রা তিব্বতী জাতিকে 'তুবেট' ডাকতো। তিব্বত উত্তর দিকে সিনচিয়াংয়ের সঙ্গে যুক্ত। এর পূর্ব দিকে সিছুয়ান প্রদেশ। উত্তর-পূর্ব দিকে ছিংহাই এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ইয়ুন নান। তিব্বতের আশেপাশে মিয়ানমার, ভারত, ভুটান, নেপালসহ নানা দেশের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। এ অঞ্চলের স্থল সীমা ৪০০০ কিলোমিটারের বেশি। তিব্বত দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের গুরুত্বপূর্ণ দরজা।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, এবার শুনুন 'আমি তিব্বতকে ভালোবাসি' নামের গানটি। গেয়েছেন ইয়াং চিন লান চে। তিনি গেয়েছেন, 'তিব্বত পৃথিবীর পবিত্র স্থান ও শাংরিলা। তিব্বত পৃথিবীর স্বর্গ এবং মনের খোড়াক। আমি তিব্বতের নীল আকাশ, উচু তুষার আবৃত পাহাড় ভালোবাসি। আমি তিব্বতের পরিচ্ছন্ন সূর্যালোক ও ফুলের সুগন্ধ ভালোবাসি। আমার গান ও শুভ কামনা তোমাকে দিতে চাই তিব্বত। দিন রাত তুমি আমার মনের গভীরে থাকো।'

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের একটি রেলপথ 'বিশ্বের শতবছর প্রকল্পে' নির্বাচিত হয়েছে। এ রেলপথ বিশ্ব রেলপথ নির্মাণের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এ রেলপথ 'ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ'। রেলপথটি ছিংহাই প্রদেশের সিনিং শহরে শুরু হয়ে তিব্বতের রাজধানী লাসা পর্যন্ত এসেছে। মোট দৈর্ঘ্য ১৯৫৬ কিলোমিটার। এটি তিব্বতে প্রবেশ করার অন্যতম পথ। এ থেকে 'স্বগীয় পথ' বলা হয়। এ রেলপথ চালু হওয়ার পর তিব্বত এবং চীনের মূলভূখন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বেশ সুবিধাজনক হয়েছে। তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে অগ্রসর করেছে এ পথ। তাই স্থানীয় জনগণ এ রেলপথকে 'উন্নয়নের পথ ও সুখের পথ' মনে করেন। বন্ধুরা, শুনুন 'স্বগীয় পথ' নামে একটি গান। গানে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথের প্রশংসা করা হয়েছে।

তিব্বতের রাজধানী লাসা। এ শহর তিব্বতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র এবং তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র স্থান। লাসায় বছরের অধিকাংশ সময় রোদ থাকে। বৃষ্টি খুব কম হয়। শীতকালে তেমন শীত পড়ে না, গরমকালেও গরম হয় না। লাসা খুব আরামদায়ক শহর। ফলে 'সূর্যালোকের নগর' নামে এর সুনাম রয়েছে। লাসা শহর ইউরোপীয় পর্যটকদের সবচেয়ে পছন্দের পর্যটন শহরগুলোর অন্যতম। বন্ধুরা, এবার শুনুন 'রেলগাড়ি চড়ে লাসায় যাই' নামে একটি চমত্কার গান।

লাসা শহরে গেলে একটি জায়গায় যেতে অবশ্যই ভুলবেন না। তা হলো পোতালা প্রাসাদ। এ প্রাসাদ বিশ্বের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের সবচেয়ে উঁচুতে নির্মিত একটি প্রাসাদ। প্রসাদটি দুর্গ ও মন্দির বেষ্টিত। তিব্বতের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন ভবন এটি। এ প্রসাদের প্রধান ভবন 'সাদা প্রাসাদ' এবং 'লাল প্রাসাদ' দুই অংশে বিভক্ত। পোতালা প্রাসাদের উচ্চতা প্রায় ২০০ মিটার। বাইরে থেকে দেখে মনে হয় ১৩ তলা। কিন্তু ভিতরে রয়েছে ৯ তলা। পোতালা প্রাসাদ তিব্বতের দালাই লামার শীতকালীন আবাসিক ভবন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ প্রাসাদ তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান। ফলে প্রতি বছর এখানে অগণিত তীর্থযাত্রী ও পর্যটক আসে। ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে ইউনেস্কো পোতালা প্রাসাদকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারে তালিকাভুক্ত করেছে। বন্ধুরা, এবার শুনুন 'জ্যোত্স্নার আলোয় পোতালা' নামের গানটি।

প্রিয় শ্রোতা, তিব্বতে গত শতাব্দীর ৫০'র দশক পর্যন্ত ইউরোপের মধ্যযুগের মতো সামন্ততান্ত্রিক কৃতদাস প্রথার প্রচলিত ছিল। দালাই লামা এখানকার প্রধান ধর্মীয় নেতা এবং তিব্বত স্থানীয় সরকারের প্রধান।

তিব্বতের মোট জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ ছিল কৃতদাস। তাদের স্বাধীনতা ছিল না। তারা ইচ্ছেমতো ভূমি মালিককে ত্যাগ করতে পারতো না। ভূমি মালিকরা এসব কৃতদাসদের সঙ্গে নির্মম ব্যবহার করতো। শারীরিক ও মানসিতভাবে তাদের ওপর অত্যাচার করা হত। কৃতদাসদের মালিকের ইচ্ছে মত শাস্তি দেওয়া হত, বিক্রি করা হত, উপহার হিসেবে অন্যকে প্রদান করা হত। তিব্বতের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ ভূমি মালিক। তারা তিব্বতের সকল জমি, চারণভূমি, বন, পাহাড় ও গবাদি পশু দখল করে রেখেছিলো। ১৯৫৯ সালের ২৮ মার্চ চীনের কেন্দ্রীয় সরকার তিব্বতের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেয়। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তুতিমূলক কমিটি তিব্বতের স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তিব্বতের বিভিন্ন জাতির জনগণকে নিয়ে গণতান্ত্রিক সংস্কার করা হয়। এর ফলে দশ লাখ কৃতদাস মুক্তি পায়। ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতি বছর ২৮ মার্চকে 'তিব্বতের কৃতদাস মুক্তি দিবস' নির্ধারণ করে।

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে আপনাদের তিব্বত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য জানালাম। তিব্বত সম্পর্কিত কয়েকটি গানও শুনলেন। আশা করি, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের ভালো লেগেছে। এবার আমার বিদায় নেবার পালা। ভালো থাকুন সবাই। সুখ ও আনন্দে থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040