0921
|
গত ২ জুন বেলজিয়ামের ব্রুগেলে শহরের পেইরিডেইজা চিড়িয়াখানায় একটি ছেলে-সন্তানের জন্ম দেয় পান্ডা হাও হাও। মা হাও হাও বেলজিয়ামের তথ্যমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে এবং সেসূত্রে দেশটির মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছে। তার প্রথম সন্তানের জন্মটাও ছিল বেলজিয়ামে একটি বড় ঘটনা। বেলজিয়ামবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই শিশু-পান্ডা। গত ১৫ সেপ্টেম্বর জন্মের শততম দিনে শিশু-পান্ডাটির নামকরণ করা হয়। এ উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের। আজকের 'পুবের জানালা'য় আমরা হাও হাও ও তার নবজাতক শিশু-পান্ডার গল্প বলবো।
আগেই বলেছি, ১৫ সেপ্টেম্বর ছিল নবজাতক পান্ডার জন্মের শততম দিন। শিশু-পান্ডার পিতা-মাতার জন্ম কিন্তু চীনে। মার নাম হাও হাও এবং বাবার নাম সিং হুই। দু'জনই ৭ বছর বয়সী। চলতি বছর চীনের বাইরে জন্ম নেওয়া প্রথম শিশু-পান্ডা এটি। তার জন্মের শততম দিনে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তার নামকরণের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তিন মাস ধরে শিশু-পান্ডার কোনো নাম ছিল না। বেলজিয়ামবাসী এ সময় তাকে আদর করে 'বাচ্চা' বলে ডাকতো। ১৫ সেপ্টেম্বর সে একটি নাম পায়। তার নাম 'থিয়ান পাও'। অনলাইন ভোটের মাধ্যমে এ নাম বাছাই করা হয়। 'থিয়ান পাও' মানে পেইরিডেইজা চিড়িয়াখানার বাচ্চা। বেলজিয়ামবাসীর জন্য নামের উচ্চারণও সহজ।
পেইরিডেইজা চিড়িয়াখানার প্রধান এরিক ডোম্ব নামকরণ অনুষ্ঠানে পান্ডা সংরক্ষণের ব্যাপারে চীন-বেলজিয়াম সহযোগিতা চুক্তি, চীন থেকে হাও হাও ও সিং হুইয়ের বেলজিয়াম গমন, এবং থিয়ান পাওয়ের জন্মসহ অনেক তথ্য শেয়ার করেন। তিনি বলেন,
"পান্ডাসংশ্লিষ্ট গবেষণাকাজে চীন সবচেয়ে অভিজ্ঞ। পান্ডা লালনপালন বিষয়ে চীনা বিশেষজ্ঞরা আমাদেরকে অনেক তথ্য দিয়েছেন। তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ। থিয়ান পাওয়ের জন্ম আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে। পান্ডার এই প্রজাতিটি বেলজিয়ামে দীর্ঘকাল টিকে থাকবে বলে এখন আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমরা এ প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম। আসলে. পান্ডা একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে। একদিকে পান্ডা দুর্বল প্রাকৃতিক পরিবেশকে প্রতিনিধিত্ব করে, অন্যদিকে দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রতিনিধিত্ব করে। পান্ডা সংরক্ষণ করা মানে সব প্রাণী ও উদ্ভিদকে সংরক্ষণ করা।"
ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চীনা পান্ডা সংরক্ষণ গবেষণাকেন্দ্র বেশ কয়েকবার বেলজিয়ামে পান্ডা-বিশেষজ্ঞ পাঠায়। চীনা ও বেলজিয়াম বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় হাও হাও কৃত্রিম উপায়ে গর্ভবতী হয়। চীনা পান্ডা প্রজনন বিশেষজ্ঞ উ তেই ফু শিশু-পান্ডা থিয়ান পাওয়ের জন্মের এক মাসে আগে বেলজিয়াম পৌঁছেন। পান্ডার বাচ্চা জন্ম নেওয়ার প্রথম সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিপজ্জনক। দিনরাত ২৪ ঘন্টা বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানের বাচ্চাকে রাখতে হয়। উ তেই ফু বলেন, হাও হাও প্রথমবার বাচ্চান জন্ম দিয়েছে। তবে, গোটা প্রক্রিয়াটি এতো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, যা তারা কল্পনাও করতে পারেননি। উ তেই ফু বলেন,
"প্রসবের গোটা প্রক্রিয়া সুষ্ঠভাবে চলেছে। মা হবার অভিজ্ঞতা এর আগে হাও হাও-এর হয়নি। তবে আমাদের গভীর তত্ত্বাবধানে এখন মা ও বাচ্চা খুব ভাল অবস্থায় আছে, সুস্থ আছে। এখন প্রধান কাজ হবে পান্ডা মা ও শিশু-পান্ডার যত্ন নেয়া। এসব কাজ চিড়িয়াখানার কর্মীরা নিজেরাই করতে পারবে।"
চলতি মাসের প্রথম দিকে International Union for Conservation of Nature and Natural Resources এক প্রতিবেদনে পান্ডাকে 'বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী' থেকে 'দুর্বল প্রাণী'-তে উন্নীত দেখানো হয়েছে। একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের প্রচেষ্টায় পান্ডার আবাসস্থলের সংরক্ষণ ও প্রসার হওয়ায় চীনে বন্য পান্ডার সংখ্যা ২০০৪ সালের ১৫৯৫ থেকে বেড়ে ২০১৪ সালে ১৮৬৪টিতে দাঁড়ায়।
বেলজিয়ামের জ্বালানি ও পরিবেশমন্ত্রী মেরি ক্রিস্টিন মার্ঘেম থিয়ান পাওয়ের নামকরণ অনুষ্ঠানে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলা এবং রকমারিতা সংরক্ষণ বিষয়ে চীনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তিনি আশা করেন, বেলজিয়াম ও চীন এ বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন,
"অন্য অনেক দেশের মতো বেলজিয়াম বন্যপ্রাণীদের জন্য সবচেয়ে ভাল পরিবেশ বজায় রাখতে চায়। পান্ডা সংরক্ষণের ব্যাপারে বিদ্যমান চীন-বেলজিয়াম সহযোগিতা চুক্তিকে আমি স্বাগত জানাই। বর্তমানে পান্ডা 'বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী' থেকে 'দুর্বল প্রাণী'-তে উন্নীত হয়েছে। আমাদের নবজাতক পান্ডাটিও এ সুখবরের একটি অংশ। তবে আমাদের সজাগ থাকা উচিত। আর এ জন্যই জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে বেলজিয়াম ও চীন সম্ভাব্য সবকিছু করবে। আমরা আশা করি, দু'দেশ যৌথভাবে মানবজাতির সাথে প্রকৃতির সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে যাবে।"
নামকরণ অনুষ্ঠানে বেলজিয়ামে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ছুই সিং চীনের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী পেং লি ইউয়ানের অভিনন্দনপাণী পড়ে শোনান। চিঠিতে পেং লি ইউয়ান চিড়িয়াখানার সকল বিশেষজ্ঞ ও কর্মীদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদুত ছুই বলেন, ২০১৪ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও তার স্ত্রী বেলজিয়ামে রাষ্ট্রীয় সফরকালে বেলজিয়াম রাজা-রাণীর সঙ্গে হাও হাও ও সিং হুইকে দেখার জন্য পেইরিডেইজা চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেন। পান্ডা এখন চীন-বেলজিয়াম সুসর্ম্পকের প্রতীক। ছুই সিং বলেন,
"বেলজিয়ামে জন্ম নেওয়া শিশু-পান্ডার বয়স ১০০ দিন হয়েছে। সে চীন-বেলজিয়াম মৈত্রীর প্রতীক। আমি চিড়িয়াখানার প্রধান এরিক ডোম্বের প্রশংসা করি। তিনি চীনা সংস্কৃতি অনেক পছন্দ করেন এবং এ ব্যাপারে তার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রশংসনীয়। আমি জানি, বেলজিয়ামের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এখন পান্ডা সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা করছে এবং এসব গবেষণা পান্ডা সংরক্ষণ ও এদের বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পান্ডা মানুষকে অনেক আনন্দ দেয়। ১ বছর থেকে ৩ বছর বয়সী পান্ডা সবচেয়ে মজার। পেইরিডেইজা চিড়িয়াখানার শিশু-পান্ডা থিয়ান পাও এখানে রীতিমতো চীনা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।" (শিশির/আলিম)