বিষন্নতা আসলে কী?
ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা একটি রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ কোটি ডিপ্রেশনের রোগী আছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ বিষন্নতা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রোগে পরিণত হবে।
প্রতিবছর ডিপ্রেশনের কারণে ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে।
চীনে ৯ কোটি ডিপ্রেশনের রোগী আছে।
প্রতিবছর চীনে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ডিপ্রেশনের রোগী।
চীনে ডিপ্রেশনের রোগীদের ১০ শতাংশের কম মানুষ ডাক্তারের কাছে যায়।
ডিপ্রেশন বা বিষন্নতার কারণ
১. ওষুধের প্রভাব
দীর্ঘকাল ধরে কোন ওষুধ ব্যবহার করলে ডিপ্রেশন সৃষ্টি
হতে পারে: যেমন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ অথবা অস্থিসন্ধিপ্রদাহ বা পারকিনসন'স রোগ প্রতিকার করার ওষুধ।
২. মনোভাব ও চাপ
লেখাপড়া বা চাকরির চাপ, পারিবারিক অশান্তি, বন্ধুর সাথে মতবিরোধ, বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা, কর্মচ্যুতি, আর্থিক দুরবস্থা ইত্যাদি।
৩. দুর্বল মানসিক অবস্থা।
৪. ধূমপান, মাদকদ্রব্য সেবন বা মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের মতো খারাপ অভ্যাস।
কোন ধরনের মানুষ সহজে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়?
১. নারী: গর্ভধারণ, গর্ভপাত, প্রসবের পর বা ম্যানোপজের মতো পর্যায়গুলোতে নারীরা ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হতে পারেন। ডিপ্রেশন আক্রান্ত নারীর সংখ্যা পুরুষের দ্বিগুণ।
২. পিতা-মাতার ডিপ্রেশনের রোগী হলে, তাদের সন্তানদের এতে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা ২৫ শতাংশ।
৩. বয়:সন্ধিকালেও মানুষ ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হতে পারে।
৪. চাপ বা তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত মানুষ।
৫. মাদকদ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল মানুষ।
৬. দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত মানুষ
৭. সামাজিক ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার মানুষ।
ডিপ্রেশনের অভিব্যক্তি
১. মন খারাপ, আগ্রহ কম, অসহায় বোধ করা, নিজেকে অযোগ্য মনে করা।
২. চিন্তা-চেতনায় ধীর গতি।
৩. দৈনন্দিন জীবনাচারে শৈথিল্য, হতোদ্যম হওয়া, আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধব থেকে দূরে থাকা, সামাজিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলা।
৪. স্মরণশক্তির অবনতি, মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা কঠিন হয়ে পড়া, কথাবার্তায় স্বচ্ছন্দ না-হওয়া।
৫. ঘুম সমস্যা: সহজে ঘুম না-আসা, ঘুম গভীর না-হওয়া, রাতে হঠাত ঘুম ভেঙে গেলে আর ঘুম না-আসা।
ডিপ্রেশন এড়ানোর উপায়
১. নিজের লক্ষ্যকে অযথা কঠিন করে তুলবেন না বা অসম্ভব কোনো লক্ষ্য নিজের জন্য স্থির করবেন না। একা সবকিছু করার চেষ্টা করবেন না।
২. যেটা পারবেন, সেটা করুন।
৩. মানুষের সঙ্গে বেশি করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন। একা থাকবেন না।
৪. খেলাধুলা করুন, চলচ্চিত্র বা টিভি দেখুন, ঘুরে বেড়ান।
৫. নিজের রোগ নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না। বিশ্বাস করুন, দেরিতে হলেও রোগ ভালো হয়ে যাবে।
৬. চাকরি পরিবর্তন, বিয়ে বা বিবাহবিচ্ছেদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো হুট করে নেবেন না।
৭. নিজের অনুভূতি লিখে রাখুন বা অন্যের সঙ্গে শেয়ার করুন।
কিভাবে ডিপ্রেশনের রোগীদের সাহায্য করবেন?
১. সহানুভূতি দেখান, উত্সাহ দিন। কঠিন সময়ে পাশে থাকুন। তাদের প্রতি ঘৃণা, অসন্তোষ বা বৈরিতা প্রকাশ করবেন না।
২. তাদের অনুভূতি উপলব্ধি করুন এবং তা প্রকাশ করুন।
৩. ডিপ্রেশন রোগীদের গ্রুপ কার্যকলাপে অংশ নিতে উত্সাহ দিন বা তাদের সঙ্গে অংশ নিন। সহজ কাজ দিয়ে তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করুন। তাদের প্রশংসা করুন। (প্রেমা/আলিম)