তেলশহর কারামের গল্প
  2016-11-12 19:36:30  cri

গত শতাব্দের ৫০-এর দশকে চীনের পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে একটি বিশাল তেলক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়। এ তেলক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে একটি নতুন শিল্পশহর কারামে (Karamay)। গত ৬০ বছর ধরেই গড়ে উঠেছে এ শহর। সাম্প্রতিকালে কারামে শহরে নতুন শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।

চীনে কারামে'কে 'পশ্চিমাঞ্চলের মুক্তা' বলে ডাকা হয়। আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমি আপনাদেরকে এ নতুন তেলশহর সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানাবো।

প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে এ গানটির মাধ্যমে গোটা চীনে কারামে শহরের পরিচিতি তুলে ধরা হয়। উইগুর ভাষায় 'কারামে' অর্থ 'কালো তেল'। গত শতাব্দের পঞ্চাশের দশকে যখন প্রথম এখানে তেল আবিষ্কৃত হয়, তখন এখানে কোনো ঘাস, পানি, এমনকি পাখিও ছিল না। তেল উত্তোলক চাং ইয়ংছিং তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, 'কারামের আগের পরিস্থিতি ছিল বর্ণনাতীত। তখন গোটা এলাকাটি ছিল মরুভূমি; যেদিকে দু'চোখ যায়, শুধু বালি আর বালি।'

এত কঠিন পরিবেশেও তেল উত্তোলক কর্মীরা নির্ভয়ে কাজ করেছেন। ১৯৫৫ সালে প্রথম তেলক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। তখন থেকেই প্রতি বছর কারামে থেকে গড়ে এক কোটি টনেরও বেশি তেল এবং ৩০০ কোটি বর্গমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্পন্ন হতে থাকে। এই তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে কারামে শহর। শহরের মেয়র ও কমিউনিস্ট পার্টির উপ-সম্পাদক চাং হংইয়ান মনে করেন, বিগত ৬০ বছরে কারামে গড়ে উঠেছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে। তিনি বলেন, 'কারামের সংস্কৃতি তেলের সাথে সম্পৃক্ত। এ সংস্কৃতি হচ্ছে তেল উত্তোলন ও সরবরাহের সংস্কৃতি।'

তেলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কারামে শহর ক্রমাগত টেকসই উন্নয়নের পথ ধরে এগিয়ে গেছে। ১৯৯৩ সালে কারামে শহরের তেলক্ষেত্রকে ডিজিটাইজ করা প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০০৯ সালে কারামে শহরের তেলক্ষেত্রকে আরও স্মার্ট করার কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। তার পরের কয়েক বছরে কারামে তেলক্ষেত্র ডিজিটাল থেকে স্মার্টারে রূপান্তরিত হয়। সিনচিয়াং তেল কোম্পানির উপাত্ত কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার লিউ ছিংহুই বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতি থেকে স্মার্টার পদ্ধতিতে রূপান্তর ছিল একটি প্রযুক্তিগত সংস্কার। তেলশিল্পের ঐতিহ্যবাহী উত্পাদন ও পরিচালনা পদ্ধতি পরিবর্তন করার মাধ্যমে তেলক্ষেত্রের উত্পাদনক্ষমতা বেড়েছে, বেড়েছে কার্যকারিতা। তিনি বলেন, 'তেলক্ষেত্রকে ডিজিটাল করার মাধ্যমে আমাদের দুই পা ও দুই হাত মুক্ত হয়। তখন থেকে আমরা অফিসে বসেই গোটা উত্পাদন-ব্যবস্থা পরিচালনা করতে শুরু করি। তবে তেল উত্পাদন-ব্যবস্থাকে 'স্মার্টার' করার মাধ্যমে আমরা আমাদের মাথার কিছু অংশকেও মুক্ত করি। এতে তেলক্ষেত্রের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তও গ্রহণ করতে পারে। এতে আর্থনীতিক দিক দিয়েও আমরা অধিক লাভবান হচ্ছি।'

তেলক্ষেত্রের আধুনিকায়ন একটি স্মার্ট শহরের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। এখন কারামেতে শুধু একটি মোবাইলের মাধ্যমে একজন বাস, হাসপাতাল ইত্যাদি সম্পর্কে যে-কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। চায়না মোবাইল কোম্পানির কারামে শাখার অতিথি ডেপুটি ম্যানেজার চাং চি বললেন, 'তিন-চার বছর আগে কারামে সরকার এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, শুধু তেলক্ষেত্রের উন্নয়ন যথেষ্ট নয়। সে থেকে আমরা এখানকার তথ্যপ্রযুক্তি, পর্যটন ও ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নেও কাজ করতে থাকি। স্মার্টার শহর হওয়ায় এখানে বিনিয়োগ বাড়ছে। আমাদের নিজস্ব শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোও এতে আরও উন্নত হচ্ছে।'

কারামের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়নেও সমান দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে কারামে 'চীনের সভ্য শহর', 'জাতীয় পরিবেশবান্ধব আদর্শ শহর', 'জাতীয় স্বাস্থ্য শহর', 'জাতীয় উদ্যান শহর', 'চীনের উত্কৃষ্ট শহর' ইত্যাদি বিভিন্ন স্বীকৃতি পেয়েছে। এখানকার অধিবাসীরা নগরজীবনের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। তারা একটি সুখী জীবন যাপন করছেন। শহরের একজন নাগরিক এ সম্পর্কে বললেন, 'কারেমেতে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। আমি এখন রাতে সুন্দর স্বপ্ন দেখে সকালে ঘুম থেকে জেড়ে উঠতে পারি। কখনও ভাবিনি, এমন সুন্দর ও সমৃদ্ধ জীবন হবে আমার।'

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040