সুর ও বাণী : শরত্কাল এসেছে
  2016-09-11 14:29:34  cri


সেপ্টেম্বর মাসে বেইজিংয়ের আবাহাওয়া খুব আরামদায়ক। সোনালি শরত্কাল শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মকালের মতো খাঁ খাঁ রোদ থাকে না এ সময়। বসন্তকালের মতো অতি দ্রুত শেষ হয় না রোদ। শীতকালের মতো হাড়াকাঁপানো শীতও পড়ে না। শরত্কাল ঘরে বসে সময় কাটানোর ঋতু নয়। এ সময় বাইরে গিয়ে প্রকৃতি উপভোগ করার সূবর্ণ সুযোগ রয়েছে আমাদের।

বন্ধুরা, বুঝতেই পারছেন, আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে আপনাদের শরত্কাল সম্পর্কিত কিছু গান শোনাবো। এখন আপনারা শুনছেন ফ্রান্সের পিয়ানোবাদক রিচার্ড ক্লাইডারম্যানের বাজানো 'শরত্কালের গোপণীয় কথা' নামে একটি শ্রুতিমধুর সুর। চীনে রিচার্ড ক্লাইডারম্যানের বাজানো সুর খুবই জনপ্রিয়। তিনি চীন ও ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন।

শরত্কাল বললে অনেকের হয়তো সঙ্গে সঙ্গে হংকংয়ের কণ্ঠশিল্পী থান ইয়োং লিনের একটি পুরোনো গানের সুর মনে পড়বে। সে গানের নাম, 'শরত্কালের গভীর প্রেম'। এ গানের নামটি খুবই রোমান্টিক। আসলে এ গানে এক প্রেমিকজুগলের বিদায়ের কথা বলা হয়েছে। 'একবার প্রেম দিলে তা আর ফেরত নেয়া যায় না। আমরা বিদায় নিলেও আমার মনে তুমি সবসময় লাবণ্যময় স্মৃতি হয়ে থাকবে। তোমাকে বিদায় বলতে চাই না। আন্তরিকভাবে তোমার সারা জীবনের শুভকামনা করি আমি।'

বন্ধুরা, আপনারা নিশ্চয় জানেন, বসন্তকাল হচ্ছে রোপণ করার মৌসুম এবং শরত্কাল হচ্ছে ফলনের মৌসুম। বেইজিংয়ের শরত্কালে গাছের পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে। শরত্কালে বাতাসে উড়তে থাকা পাতা দেখে অনেকের মনে একটু দুঃখ হয়। তারা নিজেদের প্রয়াত স্বজন বা দূরে চলে যাওয়া বন্ধুদের কথা মনে করে কষ্ট পায়। শরত্কাল যেন স্মৃতি জাগানিয়া এক ঋতু। শরতের আবাহাওয়া মনে করিয়ে দেয় অতীত।

প্রিয় বন্ধুরা, এবার শুনুন 'শরত্কালের গভীর ভাব' নামে একটি গান। গেয়েছেন চাং শুয়ে ইয়ো। এ গানটি শুনে মনে হয়, শরত্কালে কেউ যেন আপনার কানের পাশে হালকাভাবে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলছে।

ইতালির সুরকার আন্টোনিও লুসিও ভিভালডি ছিলেন বারোক সঙ্গীতের সবচেয়ে বিখ্যাত সুরকারদের অন্যতম। তার নাম গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে। তার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সংগীত কর্ম হলো 'চার ঋতু'। এ সংগীত কর্মে 'শরত্কাল' নামে একটি অংশ রয়েছে। তাতে তিনি আনন্দময় ও প্রাণবন্ত সুর দিয়ে ফলন মৌসুমে কৃষকদের আনন্দ বর্ণনা করেছেন। এ গানের সুরে চেলোর আওয়াজ শরত্কারের বাতাসের মতো শোনা যায়। বেহালার আওয়াজ শরত্কালের সূর্যালোকের মতো উষ্ণ। এ সুর শুনে, আমাদের চোখের সামনে শরত্কালের দৃশ্য ভেসে ওঠে।

শ্রোতাবন্ধুরা, চীনে বছরে চারটি ঋতু আছে। কেউ হয়তো প্রতিটি ঋতুকে পছন্দ করেন না। কে কোন ঋতু পছন্দ করেন, তার বিশেষ কারণ থাকতে পারে। হয়তো কোনো বিশেষ স্মৃতির জন্য একটি ঋতুকে কেউ বেশি ভালোবাসেন। হয়তো বিশেষ কোনো ঋতুতে কোনো বিশেষ জায়গায় যেতে চান। শরত্কালে আপনার কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতা আছে কি? বন্ধুরা, এখন শুনুন 'আমার শরত্কাল' নামে একটি গান এবং চিন্তা করুন, আপনার শরত্কালের কোনো বিশেষ গল্প আছে কিনা। আপনার কোনো হৃদয়স্পর্শী গল্প থাকলে আমাদের জানালে খুব খুশি হবো।

তাইওয়ানের গায়ক শিয়াও হুয়াং ছি 'শরত্কালে তোমাকে মিস করি' নামে একটি গান লিখেছেন। গানে তিনি বলেছেন, 'প্রতি বছর শরত্কাল এলে তোমাকে খুব মিস করি। আমাদের অতীতের সুন্দর দৃশ্যগুলো আবার মনে পড়ে। তোমার হাত ধরে একসাথে হেঁটেছি অনেক জায়গায়। তারা ভরা রাতে আমরা সমুদ্রতীরে বসে গান শুনেছি। তোমার আনন্দ, বেদনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা সব আমার মনে আছে। তোমার পারফিউম, তোমার ছবি এবং তোমার সকল কিছু আমার হৃদয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত আছে। আমি তোমাকে মিস করি, কিন্তু তা তুমি জানো না। আমি বলতে চাই, আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি, আমার কোনো পরিবর্তন হয়নি'। বন্ধুরা, শুনুন এ রোমান্টিক গানটি।

প্রিয় বন্ধুরা, ছোটবেলায় বাবা-মা, শিক্ষক বা আত্মীয়-স্বজন প্রায় আমাদের জিজ্ঞেস করতেন, 'তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?' তখন বাচ্চাদের উত্তর নানা রকমের হতো। আমি চিন্তা করেছিলাম, আমি একটি বড় গাছ হয়ে বনে সূর্যের আলোর নিচে সোজা হয়ে দাঁড়ালে কেমন হবে? হয়তো পাখিরা এসে আমার ডালে বসে গান গাইবে। কাঠবিড়ালি এসে খেলতে পারবে ডালে ডালে। এ গাছ হবে আমার স্বাধীন বিশ্ব।

বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন 'আমি শরত্কালের একটি গাছ' নামের গানটি। চোখ বন্ধ করে চিন্তা করুন, আপনার স্বপ্ন কী? সেটা কী ভাবে বাস্তবায়িত হবে?

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে শরত্কাল সম্পর্কিত কয়েকটি গান শোনালাম আপনাদের। কেমন লাগলো আপনাদের? ইমেইলে আপনাদের অনুভুতি জানালে খুশি হবো। শ্রোতাবন্ধুরা, 'সুর ও বাণী' আসর আজকের মতো এখানে শেষ হলো। ভালো থাকুন সকলে; কল্যাণে থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040