পুবের জানালা: চীনের দাতব্য আইন
  2016-09-07 16:21:55  cri



গত পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে চীনে আনুষ্ঠানিকভাবে বলবত হয়েছে 'দাতব্য আইন'। আইন অনুসারে, চীনে প্রতিবছর ৫ সেপ্টেম্বর পালিত হবে 'দাতব্য দিবস'। দাতব্য আইন চালু হওয়ায় চীনে দাতব্যকাজ ও এ সংশ্লিষ্ট সকলকিছু আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। আজকাল চীনে দাতব্যকাজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এর পরিধি। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন আইন চীনে দাতব্যকাজকে একটা সর্বজনীন শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসবে। প্রিয় শ্রোতা, আজকের পুবের জানালা অনুষ্ঠানে আমরা চীনের দাতব্য আইন ও প্রথম দাতব্যদিবস পালন নিয়ে কথা বলবো।

চীনে দাতব্য আইন চালুর পর প্রথম দাতব্য নিবস পালিত হয় গত ৫ সেপ্টেম্বর। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল: 'আইনের সাহায্যে দাতব্যকাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং দারিদ্র্যমুক্ত হওয়া'। এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আরও বেশি মানুষকে দাতব্যকাজে অংশ নিতে উৎসাহিত করা। প্রথম দাতব্য দিবসে চীনের বিভিন্ন স্থানে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। নিখিল চীন দাতব্য সাধারণ সমিতি মনে করে, দাতব্য দিবসের নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন মহলের মানুষকে দাতব্যকাজে অংশ নিতে উৎসাহিত করা সম্ভব হয়েছে। যে কেউ নিখিল চীন দাতব্য সাধারণ সমিতি বা এর শাখার মাধ্যমে অনলাইনে বা অন্য পদ্ধতিতে সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সাহায্য দিতে পারে। তা ছাড়া, চিয়াং সু প্রদেশের নান থুং শহরের চীনা দাতব্য যাদুঘর এ মাসের প্রথম দিকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

দাতব্য আইনের বিধিগুলো বেশ স্পষ্ট ও জনবান্ধব। সাম্প্রতিককালে উইচ্যাটের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এখন দাত্য আইন চালু হওয়া এধরনের কাজ বেআইনী হয়ে যাবে। কারণ, নতুন আইন অনুসারে, কোনো ব্যক্তিমানুষ চাঁদা সংগ্রহ করতে বা চাইতে পারবে না। অন্যভাবে বললে, কোনো ব্যক্তি অন্য মানুষের জন্য বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে চাঁদা চাইতে পারবে না।

অবশ্য, নতুন নিয়ম অনুসারে, কেউ তার নিজের জন্য বা পরিবারের সদস্যদের জন্য অন্যের সাহায্য চাইতে পারবে এবং এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্য নিতে পারবে। কারণ, এ ধরনের সাহায্য চাওয়ার সাথে দাতব্যকাজের কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ যদি নিজে বা তার পরিবারের কোনো সদস্য আর্থিক সংকটে পড়ে, তবে তিনি নিজের জন্য বা তার পরিবারের সদস্যদের জন্য উইচ্যাটের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাহায্যের আবেদন করতে পারবে এবং সাহায্যের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। নতুন দাতব্য আইন একে নিষিদ্ধ করে না।

ব্যক্তি উদ্যোগে দাতব্যকাজের জন্য চাঁদা সংগ্রহ এবং ব্যক্তিগত সাহায্য চাওয়ার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। প্রথমটা অবৈধ এবং দ্বিতীয়টা বৈধ।

যে কোনো দাতব্য সংস্থা ইন্টারনেটের মাধ্যমে চাঁদা সংগ্রহ করতে পারবে বলে আইনে উল্লেখ আছে। তবে শর্ত হচ্ছে, এর জন্য সংশ্লিষ্ট দাতব্য সংস্থাকে বেসামরিক প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে হবে। গত ২২ আগষ্ট বেসামরিক প্রশাসন মন্ত্রণালয় এমন ১৩টি প্ল্যাটফর্মের নামতালিকা প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ কোনো দাতব্য সংস্থাকে চাঁদা চাইতে হলে, এই ১৩টি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ করতে হবে।

বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয় চলতি বছরের প্রথম দিকে প্রকাশ করে ২০১৫ সালে চীনের শ্রেষ্ঠ দাতাদের প্রথম ১০০ জনের নামতালিকা। ২০১৫ সালে এই ১০০ জন দাতা ১২৮০ কোটি ইউয়ান অনুদান দেন। তাদের মধ্যে ২৪ জনের অনুদানের পরিমাণ ১০ কোটি ইউয়ানের বেশি।

আজকাল বিশ্বব্যাপীই ধনীরা বিভিন্ন দাতব্যকাজে সাহায্য করে থাকেন। এটা একটি ভালো প্রবণতা। চীনেও এখন অনেক ধনী লোক আছেন। তারা বিভিন্ন দাতব্যকাজে সরাসরি সাহায্য দেওয়ার পাশাপাশি, চ্যারিটেবল ট্রাস্টও করতে পারেন। দাতব্য আইন অনুযায়ী, চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ট্রাস্টর তার সম্পদ ট্রাস্টির কাছে গচ্ছিত রাখবেন এবং ট্রাস্টি ট্রাস্টরের ইচ্ছা অনুযায়ী সে সম্পদ দাতব্যকাজে ব্যয় করবেন। চীনা রেন মিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চেং কুং ছেং বলেন, চ্যারিটেবল ট্রাস্ট সমাজের নানা মহলের মানুষের দাতব্যকাজে অংশ নেয়ার গুরুত্বপূর্ণূ একটি বাহক এবং দাতব্যকাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি পদ্ধতি। তিনি বলেন,

"ধরা যাক, একজন মানুষ ১০ কোটি ইউয়ান একটি দাতব্য সংস্থাকে দান করলেন। এই দানের পর কিন্তু তার সঙ্গে বা তার পরিবারের সঙ্গে এই অর্থের আর কোনো সম্পর্ক থাকে না। কিন্তু তিনি যদি ১০ কোটি ইউয়ান দিয়ে একটি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট করেন, তবে ট্রাস্টের তহবিল থেকে দীর্ঘমেয়াদি দাতব্যকাজ করা সম্ভব। তখন ট্রাস্টের সাথে তার বা তার পরিবারের সদস্যদের একটা সম্পর্ক থাকবে। আমাদের দেশে এ ধরনের চ্যারিটেবল ট্রাস্টকে উৎসাহ দেয়া উচিত্। এটা দাতব্যকাজের জন্য সহায়ক।"

দাতব্য আইন অনুযায়ী, দাতব্যকাজ অর্থ কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক স্বেচ্ছায় দরিদ্র মানুষের জন্য কল্যাণকর কোনো কাজ করা। প্রবীণ, অনাথ, রোগী, প্রতিবন্ধীদেরকে সাহায্য দেয়া; প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত মানুষ ও আকস্মিক কোনো বিপর্যয়ে সাধারণ মানুষের পাশে সাহায্য নিয়ে দাঁড়ানো; শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়াসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করা; দুষণ মোকাবিলা, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয় দাতব্যকাজের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তেং কুও ফেং বলেন,

"দাতব্যকাজের সঙ্গে জড়িত সব বিষয়ই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাতব্যকাজে গতি আসবে। এ আইন দাতব্যকাজে অংশগ্রহণকারীদেরকে সুরক্ষা দেবে এবং দাতব্য সংস্থাগুলো এর ফলে তাদের ভূমিকা আরও ভালোভাবে পালন করার সুযোগ পাবে।" (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040