20160825yinyue.mp3
|
শেং চোং কুও
বন্ধুরা, আজ চীনের বিখ্যাত বেহালাবাদক শেং চোং কুওয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় আপনাদের কাছে তুলে ধরবো।একইসঙ্গে তার বাজানো কয়েকটি বেহালা সুর শোনাবো। এখন শুনছেন শেং চোং কুও'র বাজানো 'মত্স্য নৌকায় চড়ার রাতে'।
শেং চোং কুও ১৯৪১ সালে চীনের চৌছিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেং শুয়ে চীনের বিখ্যাত বেহালা শিক্ষক, আর মা চু পিং একজন কণ্ঠশিল্পী। এ দম্পতি মোট ১১ জন সন্তান লালন করেছেন। তাদের মধ্যে ১০জন সংগীতজগতের পেশাগত শিল্পী। মোট ৯ জন বেহালাবাদক।
শেং চোং কুও হচ্ছেন এ পরিবারটির সবচেয়ে বড় ছেলে। তিনি ছোটবেলা থেকেই দেশি-বিদেশী সংগীত শোনেন এবং এ বিষয়ে কঠোর প্রশিক্ষণ নেন।
পাঁচ বছর বয়সে তিনি বাবার কাছে বেহালা বাজাতে শেখেন। সাত বছর বয়সে তিনি প্রকাশ্যে বেহালা বাজানো শুরু করেন। নয় বছর বয়সে মোজার্ট, বিটোফেন ও শুবার্ট সহ অনেক ধ্রুপদী বেহালার সুর বাজান। তার এসব বাজানো সুর উহান গণবেতারে প্রচারিত হয়। শ্রোতারা তার প্রশংসা করেন 'প্রতিভাময় ও মেবাধী' বলে।
বিশ্ব বিখ্যাত বেহালাবাদক ইয়েহুদি মেনুহিন চীন সফরকালে শেং চোং কুওয়ের সঙ্গে বেহালা পরিবেশন করেন এবং তার প্রশংসা করেন। তিনি মনে করেন, শেং চোং কুও হচ্ছেন চীনে তার সবচেয়ে ভালো সহযোগী বেহালাবাদক। অস্ট্রেলিয়ার এবিসি রেডিও শেং চোং কুওকে 'বিশ্বের সবচেয়ে মহান শিল্পী' এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
বন্ধুরা, এখন শুনুন শেং চোং কুওয়ের বাজানো বেহালা সুর 'পোল্যান্ডের নৃত্য সংগীত'।
শেং চোং কুও আর তার স্ত্রী
১৯৬০ সালে শেং চোং কুও সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কো চেইকোভস্কি সংগীত ইনস্টিটিউটে বেহালা শেখেন। ১৯৬২ সালে মস্কোয় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চেইকোভস্কি বেহালা প্রতিযোগিতায় সম্মানসূচক পুরস্কার পান। ১৯৬৪ সালে তিনি স্বদেশে ফিরে এসে কেন্দ্রীয় অর্কেস্ট্রায় একক বাদক হন।
১৯৮০ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি শহরে টানা ১২টি সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তার পরিবেশনা অস্ট্রেলিয়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং চীন ও অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময় ইতিহাসের মাইলফলকে পরিণত হয়।
বন্ধুরা, শুনুন শেং চোং কুওয়ের বাজানো ভারতের চলচ্চিত্র 'আওয়ারা' এর সুর।
১৯৮৭ সাল থেকে শেং চোং কুও প্রতিবছর জাপানে গিয়ে বেহালা পরিবেশন করেন। তার পরিবেশনার কিছু আয় তিনি জাপানে অধ্যনরত বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীদের চিকিত্সা তহবিলে দান করেন। জাপান সরকার তাকে 'সাংস্কৃতিক দূত' এর খেতাব দেন। চীন-জাপান সাংস্কৃতিক বিনিময়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার কারণে জাপান সরকার ১৯৯৯ সালে তাকে 'পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুরস্কার' প্রদান করে। বিভিন্ন দেশে সংগীতানুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি শেং চোং কুও চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন। তিনি সবসময় সক্রিয়ভাবে চীনের সংগীত উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালান।
বন্ধুরা, এখন শুনুন শেং চোং কুওয়ের বাজানো বেহালা সুর 'রাখালিয়া গান'।
শেং চোং কুও
কয়েক দশক ধরে তিনি আমন্ত্রণে এশিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ এবং হংকং ও ম্যাকাওসহ অনেক অঞ্চলে একক সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তিনি দেশ-বিদেশের সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা, বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক ও সংগীতজ্ঞের সঙ্গে সেবাস্তিয়ান বাখ, মোজার্ট ও বিটোফেনের বিখ্যাত সুর বাজিয়েছেন। তিনি দশ বারোটি ডিস্ক, সিডি ও অডিও টেপ রেকর্ড করেছেন। তার ডিস্ক চীনের ডিস্ক কোম্পানির 'স্বর্ণ ডিস্ক পুরস্কার' লাভ করে।
শেং চোং কুও চীনের জাতীয় গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য, চীনের সামাজিক সংগীত গবেষণা কমিটির সভাপতি, চীনের সংগীতজ্ঞ সমিতির সদস্যসহ অনেক সংগঠনের দায়িত্বে রয়েছেন।
শেং চোং কুও অনেক জনপ্রিয় বেহালা সুর বাজিয়েছেন। এ সুরগুলোর মধ্যে 'লিয়াং শা বো ও চু ইং থাই' সবচেয়ে জনপ্রিয়। তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেন, 'আমি প্রায় দশ হাজার বার 'লিয়াং শা বো ও চু ইং থাই' এ সুরটি বাজিয়েছি। মূল কারণ দর্শকরা এ সুরটি অনেক পছন্দ করেন।' তিনি বেহালা দিয়ে লিয়াং শা বো আর চু ইং থাই এ দু'জনের অন্তর্জগত প্রতিফলন করেছেন। ফলে প্রতিবার একই সুর বাজালেও রেকর্ডিং একই নয়, প্রত্যেকবার তিনি কিছু নতুন অনুপ্রেরণা পান। এ সুরটি শেং চোং কুওয়ের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মেও পরিণত হয়েছে। এমন কি বেইজিংয়ের উপকণ্ঠের একজন কৃষক শেং চোং কুওয়ের বাজানো 'লিয়াং চু' সুরটি এতো পছন্দ করেন যে, এ সুরের ছয়টি টেপ বাজাতে বাজাতে তিনি নষ্ট করে ফেলেছেন।
বন্ধুরা, তাহলে শুনুন 'লিয়াং শা বো ও চু ইং থাই' নামে সুর। এটা চীনের প্রাচীনকালের 'প্রজাপতির প্রেম' নামে কাহিনী থেকে সংগীতে রূপান্তরিত হয়েছে।
বন্ধুরা, সময়ের কারণে 'লিয়াং শা বো ও চু ইং থাই' নামে বেহালা সুর সম্পূর্ণভাবে প্রচার করতে পারিনি। তবে আশা করি, এ সুরের অংশ বিশেষ শুনলেও আপনারা এ সুরের সৌন্দর্য অনুভব করেছেন।
আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে চীনের বিখ্যাত বেহালাবাদক শেং চোং কুওয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেছি এবং তার বাজানো কয়েকটি সুর শুনিয়েছি। তার বাজানো সুর শুনতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn।
বন্ধুরা, এবার তাহলে আমি বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/টুটুল)