ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যু জি মো'র কবিতা ও সাংস্কৃতিক দিবস-২০১৬' ১১ থেকে ১৩ অগাস্ট পর্যন্ত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে পেই তাও, ইয়াং লিয়েন ও ওইয়াং চিয়াং হেসহ বিভিন্ন বিখ্যাত চীনা ও বিদেশি কবি-সাহিত্যিকরা অংশ নেন। তারা কবিতা লেখাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
নিউ মুন স্কুল হলো চীনের কবিতা রচনার একটি প্রতিষ্ঠান। এই স্কুলটির প্রতিনিধি হলেন চীনের বিখ্যাত কবি স্যু জি মো। যখন স্যু ব্রিটেনের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন, তখন তিনি একটি বিখ্যাত কবিতা রচনা করেন। কবিতাটির নাম 'ফেয়ারওয়েল টু ক্যামব্রিজ'। কবি স্যু জি মো চীন ও ব্রিটেনের সংস্কৃতি ও শিল্পের বিনিময়ের ওপর গুরুত্বপূর্ণ ও গভীর প্রভাব ফেলেছেন। এমনকি এখনও সেই প্রভাব রয়েছে।
'ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যু জি মো'র কবিতা ও সাংস্কৃতিক দিবস' ২০১৫ সালে প্রথম বারের মত আয়োজিত হয়। এর লক্ষ্য হলো চীন ও ব্রিটেনের কবিতা ও সাংস্কৃতিক মহলের বিনিময় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজের বিশেষজ্ঞ, এবারের কবিতা দিবসের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন ম্যাকফারলেন বলেন,"স্যু জি মো ব্রিটেনে আসার পর তিনি লন্ডনে থেকেছেন। তার ইংরেজি দ্রুত উন্নত হয়। তখন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিশেষজ্ঞ চীন সম্বন্ধে তেমন বেশি তথ্য জানেন না, তারা চীন সম্পর্কে জানতে অনেক আগ্রহী হন। তাই স্যু বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান। দর্শনশাস্ত্র, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেন স্যু।"
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় স্যু রাজনীতিবিদ, দার্শনিক জি লয়েজ ডিকিনসন এবং চিত্রশিল্পী রজার ফ্রাই সম্পর্কে জানতে পারেন।
অ্যালেন বলেন, "স্যু খুবই ভাগ্যবান। কারণ তখন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ সংস্কৃতি ক্ষেত্রে নিজেকে সেরা কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। স্যু ব্রিটেনে বিপুল পরিমাণে ব্রিটিশ সাহিত্যবিষয়ক বই পড়েছেন।"
অ্যালেন আরো বলেন, "ব্রিটিশ রোমান্টিক কবিতার প্রধান বিষয় হলো প্রকৃতি এবং মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক। এ বিষয়ের প্রধান কবি হলেন উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, এস.টি কলরিজ, জন কিটস এবং পি.শেলি। এসব বিশ্ববিখ্যাত মহান কবির সাহিত্যকর্ম স্যু'র সাহিত্যজীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।"
চলতি বছরের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যু জি মো'র কবিতা ও সংস্কৃতি দিবসে কবিতা ও শিল্প নিয়ে এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ আলোচনাসভার প্রতিপাদ্য ছিলো 'ফুলের বাগান'। সভায় চীনের বিখ্যাত কবি পেই তাও 'সময়ের গোলাপ ফুল' নামের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। কবিতাটি এরকম,
"আয়নার ভেতরের অনন্তকাল জীবনের একটি মুহূর্ত
এ মুহূর্ত যেন আকাশের দরজা।
দরজার পেছনে সাগর আছে
ওই সময়, সময়ের গোলাপ ফুল।"
কবিতা দিবসের প্রেসিডেন্ট অ্যালেনও সভায় স্যু জি মো'র বিখ্যাত কবিতা আবৃত্তি করেন।
"Silently I am going
As silently I came
I shake my sleeves
Not to bring away a patch of cloud."
টুটুল, আপনি কি স্যু জি মো'র কবিতা সম্পর্কে জানেন? আসলে আমিও ব্রিটিশ কবিদের কবিতা খুব পছন্দ করি, বিশেষ করে,
The Soul that rises with us
Our life's Star
Hath had elsewhere its setting
And cometh from afar.
আমি বিশ্বাস করি, আপনিও অনেক কবিতা সম্পর্কে জানেন। আজ কি বন্ধুদের জন্য আপনার প্রিয় একটি কবিতা আবৃত্তি করতে পারেন?
বন্ধুরা, গত সপ্তাহে আমরা আমার একজন বন্ধুর জাপান ভ্রমণের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। তিনি টোকিও, ওসাকা ও কিওটোয় গিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাপানের বৈশিষ্ট্য খুঁজেছেন। গত সপ্তাহে আমরা জাপানের বইয়ের দোকান, জাপানের সেবাশিল্প, জাপানের 'সুবিধাজনক' দোকান এবং জাপানের 'অন্ধদের জন্য বিশেষ রাস্তা'সহ চারটি দিক নিয়ে কিছু তথ্য শেয়ার করেছি। এখন আমরা আবারো জাপান ভ্রমণ করবো।
একটি বৈশিষ্ট্যময় বিষয় হলো জাপানের রাস্তায় কোনো ডাস্টবিন দেখা যায় না, কিন্তু রাস্তায় কোনো আবর্জনা নেই! হ্যাঁ, জাপান হলো বিশ্বের সবচেয়ে পরিষ্কার দেশ। দেশটির নাগরিকরা আবর্জনা সম্বন্ধে ব্যাপক সচেতন।
আসলে বর্তমানে চীনের অধিকাংশ শহরের রাস্তাও খুব পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন। রাস্তায় কোনো আবর্জনা নেই, কিন্তু পাশাপাশি এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, জনগণকে আবর্জনা সম্পর্কে আরো সচেতন হতে হবে।
টুটুল, বাংলাদেশে আবর্জনা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কি ধরনের প্রচেষ্টা আছে?
তার পর জাপানের রেলপথ। জাপানের রেলপথ খুবই উন্নত। জাপানের শিনকানসেন দ্রুতগতির রেলপথ চীনের দ্রুতগতির রেলপথের চেয়ে ৪০ বছর আগে নির্মিত হয়েছে।
টুটুল, আমরা জানি, চীন ও বাংলাদেশ উভয়ের বন্ধুত্বপূর্ণ অংশীদার। দু'দেশের মধ্যে অনেক সহযোগিতা প্রকল্প আছে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেলপথবিষয়ক সহযোগিতা। আপনার মতে বাংলাদেশের রেলপথের উন্নয়ন কেমন?
আমরা জানি, পূর্ব এশীয় দেশগুলোর মাতৃভাষা ইংরেজি নয়। কিন্তু উন্নত দেশ জাপানের বড় শহর, যেমন ওসাকা ও কিওটোর অধিকাংশ সেবা শিল্পের মানুষও ইংরেজি বলতে পারেন না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো ইংরেজি বুঝতে পারেন, কিন্তু তাদের ইংরেজি আমরা বুঝতে পারবো না। তবে, রাজধানী টোকিও'র অবস্থা একটু ভালো।
টুটুল, আমরা সবাই জানি, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষাও ব্যাপকভাবে প্রচলিত। বাংলাদেশে ভাষা ব্যবহার করার অবস্থা কেমন? শহর, গ্রামে মানুষ দৈনন্দিন জীবনে কী কী ভাষা ব্যবহার করে থাকেন?
তার পর ফল! জাপানের ফল খুবই দামি। যেমন একটি কলা পাঁচ ইউয়ান, একটি পিচফল ১৫ ইউয়ান, একটি তরমুজ ৮০ ইউয়ান! টুটুল, বাংলাদেশের ফলের বাজার আর দামের কী অবস্থা?
তার পর পানি। জাপানের অধিকাংশ ডাইনিং হলে গরম পানি পাওয়া যায় না। শুধু ঠাণ্ডা পানি পাওয়া যায়। অন্যদিকে, চীনে কিন্তু গরম পানি, ঠাণ্ডা পানি, এমনকি লেবুর রসযুক্ত পানিও আছে।
টুটুল, এ বিষয়ে বাংলাদেশের কী অবস্থা? বাংলাদেশে গরম পানি না থাকলে তো দুধ চা তৈরি করা যাবে না, তাই না? হাহাহা...
আচ্ছা, এতক্ষণ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কবিতা উত্সব ও জাপান সম্পর্কিত কিছু আলোচনা শুনলেন। এখন শুনুন সহকর্মী এনামুল হক টুটুলের উপস্থাপনায় দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক পর্ব।
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com।
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়ান (জিনিয়া/টুটুল)