হতদরিদ্র অবস্থা থেকে চীনের চিসি'র আদর্শ গ্রামে রূপান্তরিত হবার গল্প
  2016-08-20 19:28:41  cri

ফুচিয়ান প্রদেশের ফুদিং শহরের ফানসি থানার চিসি গ্রাম একসময় ছিল চীনের হতদরিদ্র গ্রামগুলোর একটি। অথচ বর্তমানে এটি একটি পর্যটনকেন্দ্র ও আদর্শ গ্রামে পরিণত হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে শুনবেন গ্রামটির বদলে যাওয়ার গল্প।

৩২ বছর আগে ফুদিং জেলার তথ্যবিভাগের পরিচালক ওয়াং শাওজু চিসি গ্রাম পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে ফিরে তিনি গ্রামটি হতদরিদ্র অবস্থা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনে তিনি লেখেন: চিসি'র বাসিন্দারা বলতে গেলে গোটা বছরই আলু খেয়ে থাকেন। শুধু বসন্ত উত্সবের সময় তারা সামান্য কিছু চাল সংগ্রহ করেন এবং ভাত খান। তাদের পোষাক ভালো না। অনেক গ্রামবাসীই খালি পায়ে থাকেন, কারণ জুতো কেনার সামর্থ্য তাদের নাই।

তাঁর এ প্রতিবেদনটি ১৯৮৪ সালের ২৪ জুন 'দি পিপলস ডেইলি' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল: 'হতদরিদ্র গ্রামটি সাহায্য চায়'। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় কমিশন ও রাষ্ট্রীয় পরিষদ যৌথভাবে 'দরিদ্র এলাকাসমূহের অবস্থা পরিবর্তনে সহায়তা'-র প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। তখন থেকেই চীনে দারিদ্র্য বিমোচনের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

চিসি শে জাতির গ্রাম। এটি ফুদিং শহরের থাইলাও পাহাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চরে অবস্থিত। গ্রামের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য এর প্রাকৃতিক সম্পদ ও শে জাতির সংস্কৃতিকে কাজে লাগানো হয়। 'পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতির উন্নয়ন'—এই নীতির আওতায় গ্রামটিকে একসময় বদলে দেওয়া সম্ভব হয়। সিচি পরিণত হয় সুন্দর প্রাকৃতিক গ্রামে। ফলে আয় বেড়েছে গ্রামের, গ্রামের মানুষের। ২০১৫ সালে চিসি গ্রামের আয় ছিল ৩.২ লাখ ইউয়ান বা মাথাপিছু ১৩,৬৪৯ ইউয়ান। চিসি ইতোমধ্যেই স্বীকৃতি পেয়েছে জাতীয় পর্যটনের আদর্শ গ্রাম ও সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম হিসেবে।

চিসি গ্রামের বাসিন্দারা আশা করেন, আরও অধিক সংখ্যায় চীনা মানুষ চিসি'তে বেড়াতে আসবেন। বর্তমান সিপিসি'র ফুদিং শহর কমিশনের প্রচার বিভাগের পরিচালক ইয়াও শুয়াংসিয়া বলেন, "চিসি গ্রাম ফুদিং শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশের আদর্শ। ফুদিং শহর প্রাকৃতিকসম্পদ ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। ফুদিং শহর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের স্বাগত জানায়।"

চিসি গ্রামের পরিবহনব্যবস্থা ভাল। এখানে থাওলাও পাহাড় ও ফুদিং শহরে যাওয়ার সড়ক আছে।

যুক্তিপূর্ণভাবে প্রাকৃতিকসম্পদ ব্যবহারের শর্তে চিসি গ্রামে দু'টি পর্যটন কোম্পানিকে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। এখন চিসি গ্রামে প্রাকৃতিক প্রজাপতি পার্ক আছে। আছে বিনোদনের একাধিক ব্যবস্থা। ২০১৫ সালে চিসি গ্রামে বেড়াতে আসা পর্যটকের মোট সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লাখ।

চিসি গ্রামে পর্যটন খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি, গ্রামবাসীদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে উত্সাহ দেওয়া ব্যবস্থা আছে। দু ইং ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে চিসি গ্রামে ফিরে যান। তিনি গ্রামে চা উত্পাদন ও বিক্রি করেন। কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ করে জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার বিনিময়ে কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এ ব্যবস্থার আওতায় দু ইং ভর্তুকি ও ঋণ পেয়েছেন।

(আগের চিসি গ্রাম)

দু ছুনরুং আগে শহরে কাজ করতেন। তিনি কোনো স্থায়ী কাজ পাননি। কিন্তু গ্রামে ফিরে নিজে পর্যটন ব্যবসা শুরু করে তিনি তার ভাগ্য ফিরিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে। দু ছুনরুং নারী হওয়ায় কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। তাঁর ব্যবসা দিন দিন উন্নত হচ্ছে। তিনি নিজের জন্মস্থান থেকে অন্য কোথাও যাবেন না বলে স্থির করেছেন।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040