খবরটা গ্রেকো সেদিনই খবরের কাগজের মাধ্যমে জানতে পারেন। প্রেসিডেন্ট মরিসিও গ্রেকোর কোম্পানির জুতো ব্যবহার করে থাকেন। গ্রেকো বলেন, এটা অবিশ্বাস্য।
গ্রেকো গাস্টন ২৭ বছর বয়সী একজন আর্জেন্টাই তরুণ। তিনি বুয়েনেস আইয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নাম 'পোস্কো'।
রাজধানীর পালের্মো এলাকায় অবস্থিত গ্রেকোর শোরুম পোস্কো। শোরুমের তিনটি অংশ। ভেতরে গ্রেকোর অফিস। একটি কড়িডোরের দেওয়ালে প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি আছে। বাইরের সেলস্ সেন্টারে সোফার উপরে রঙিন পশমী কম্বল এবং মাটিতে রঙিন চামড়া। সেন্টারের প্রতিটি স্থান গ্রেকো মনের মতো করে সাজিয়েছেন।
২০১০ সালে গ্রেকো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে প্রথমবারের মতো রাজধানীতে আসেন। তিনি রাজধানীতে আসার শুরুর দিকেই নিজের একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর পরিকল্পনা করেন।
শুরুর দিকে তিনি তার সম্ভাব্য প্রতিষ্ঠানের ধরন নিয়ে চিন্তা করেন। একজন সাংবাদিক তাকে জিঙ্গেস করলেন: 'কেন আপনি জুতা তৈরির ব্যবসা বেছে নিলেন?' তিনি প্রশ্নের উত্তর নি দিয়ে বললেন: 'আপনার কি এমন এক জোড়া জুতো আছে যা যে কোনো পরিবেশ পড়া যায়? এ ধরনের জুতো তৈরি করি আমরা। শুরুতে আমার মনে এই ভাবনাই খেলা করেছে যে, আমি এ ধরনের জুতো তৈরি করবো।'
যাই হোক তিনি দিনের বেলা জুতো তৈরির প্রশিক্ষণকেন্দ্রে জুতো তৈরি শেখেন এবং রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। এভাবে তার দু'বছর কেটে যায়। দু'বছর পর তিনি নিজে প্রথম জুতো তৈরি করেন।
তিনি নিজের গাড়ি বিক্রি করে এবং বন্ধুদের কাছ থেকে কিছু অর্থ ধার করে প্রথম দফা জুতো তৈরি করেন। সেসব জুতো তিনি বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করেন। সময়টা তাঁর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তখন থেকেই তিনি ক্রেতাদের প্রস্তাব ও চাহিদা অনুযায়ী বারবার জুতোর ডিজাইন পরিবর্তন করতে থাকেন। এভাবে কাটে আরও দু'বছর। তারপর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নিজের কোম্পানি 'পোস্কো'। 'পোস্কো' এসেছে 'প্রডাকটস অব সিম্পল কম্পোজিশন' থেকে।
তিনি বলেন, 'পোস্কো' শোরুম তরুণ-তরুণীদের প্রিয় এলাকা পালের্মোয় অবস্থিত। এ এলাকায় অন্যান্য ব্রান্ডের জনপ্রিয় শোরুমও আছে। এখানে তরুণ-তরুণীরা আসতে পছন্দ করেন।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে 'পোস্কো'-র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। একদিন গ্রেকো টিভিতে একটি সাক্ষাত্কার দেখেন। তত্কালীন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মরিসিও সাক্ষাত্কার দিচ্ছিলেন। তিনি জানান, তার ক্যাজুয়াল জুতো পছন্দ। তিনি তার জুতোর মাপও বললেন। গ্রেকো তখনই মরিসিওর জন্য একজোড়া জুতো তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জুতো তৈরি করেন এবং জুতোসহ একটি চিঠি মরিসিওকে পাঠান। চিঠিকে তিনি লেখেন: 'মাননীয় মরিসিও, আমি গ্রেকো গাস্টন। আমার বয়স ২৬ বছর। আমি একজন তরুণ উদ্যোক্তা। আমি জানতে পেরেছি যে, আপনি আরামদায়ক জুতো পরতে পছন্দ করেন। কিন্তু আপনার জুতোর ব্রান্ড যুক্তরাষ্ট্রের বা ইতালির। আমার মনে হয়, আর্জিন্টিনার প্রেসিডেন্টের উচিত এক জোড়া স্বদেশি জুতো পরা। সেজন্য আমি বিশেষ করে আপনার জন্য এই জুতো-জোড়া তৈরি করেছি। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি, কামনা করি সফল জীবন।"
প্রেসিডেন্ট মরিসিও জুতো-জোড়া পড়েছেন এবং এর পর গ্রেকোর দোকানের বিক্রি ছয় মাসে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ছয় মাসে গ্রেকো ৫ হাজার জোড়া জুতো বিক্রি করেন। সালটা প্রদেশের গভর্নরও 'পোস্কো' ব্রান্ডের জুতোর নিয়মিত ক্রেতায় পরিণত হন।
গ্রেকো বিভিন্ন মহলের ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান না। পোস্কো'র বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন দু'জন বুড়োবুড়ি। তিনি বলেন, তাঁরা হলেন আমার দাদা-দাদি।
গ্রেকোর ইচ্ছা, ভবিষ্যতে তিনি পোস্কো ব্রান্ড আর্জিন্টিনার সীমানা ছাড়িয়ে চিলি, ব্রাজিল থেকে শুরু করে চীনে পর্যন্ত ছড়িয়ে দেবেন।