আপনি কি প্রায়ই বাসা থেকে বের হওয়ার সময় চাবিবা প্রয়োজনিয় টাকা নিতে ভুলে যান? প্রিয়জনের জন্মদিন বিবাহ বার্ষিকী কিংবা বিশেষ কোনো দিনে শুভেচ্ছা জানাতে মনে থাকে না আপনার? স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বলছে, আমাদের মস্তিষ্ক রোজ হাজার হাজার কোষ হারায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ হার বেড়ে যায়। সব কিছু মনে রাখা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে যদি খুব বেশি ভুল হতে থাকে তা হয়ত বাজে প্রভাব ফেলবে আপনার ব্যক্তিজীবনে। অনেক ক্ষেত্রে এ আচরণ আপনাকেও হতাশ করে ফেলতে পারে। তাই বরং আসুন কয়েকটি নিয়ম মেনে মনকে ফিরিয়ে আনি মনের কোরিডোরে!
প্রযুক্তি নির্ভরতা কমিয়ে ফেলুন :
অন্যমনস্কতা দূর করতে সবার প্রথমে প্রয়োজন মস্তিষ্ক সচল রাখা। আপনি কি খেয়াল করেছেন, হয়তো অতি পরিচিত একটি বানান ভুলে গেছেন। কারণ আজকাল দেখবেন, টাইপ করার সময় প্রয়োজনিয় শব্দের বানানটি চলে আসে আপনার স্মার্টফোনের অ্যাপসে? অবাক হচ্ছেন? যুক্তরাজ্যের লন্ডনের গোল্ডস্মিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোক্তা মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক প্যাট্রিক ফগান বলেন, 'প্রযুক্তি আমাদের মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যপ্রনালী বদলে দিচ্ছে।' পেশায় মনোবিজ্ঞানী সুজান গেস্ট মনে করেন, মানুষের উচিত মনে রাখার বিষয়গুলোর দায়িত্ব প্রযুক্তিকে না দিয়ে নিজেই চেষ্টা করা। নতুবা সে দিনে দিনে অন্যমনস্ক হতে থাকবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে :
মনোযোগ বাড়াতে ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিতভাবে! যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ২০ মিনিট শরীরচর্চা আপনার মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে। ভারতিয় নিউরো সাইকোলজিস্ট ড. অশোক জানসারির মতে, 'শরিরচর্চা মনোযোগের উপর দারুণ প্রভাব ফেলে। এতে শরীর ভাল থাকে এবং শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এতে মস্তিষ্ক দ্রুত বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে।' সুইডিশ আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম শারীরিক কার্যকলাপ শেখার ক্ষমতা এবং মনে রাখার শক্তি বাড়ায়।
সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে :
গবেষকরা বলছেন, মানুষ একা থাকলে বিষন্নতায় ভোগে। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো মনোযোগ একাগ্র রাখতে সাহায্য করে। বন্ধুদের সঙ্গে থাকা বা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানো তাকে অনেক দিকে মনোযোগী হতে বাধ্য করে। কারণ তখন একজন মানুষ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে বাধ্য হয়। কথা বলতে বা বন্ধুদের মন রাখতে তাদের দিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য হয়।
নিয়মিত খেলাধুলা করতে হবে :
আজকাল অনেকই মোবাইলের কিংবা কম্পিউটারে বিভিন্ন গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু এসব খেলা নয়, বাস্তবে খেলাধুলা করতে হবে। ইন্টারনেটের যে খেলাগুলো দাবি করে যে সেগুলো মনোযোগ বাড়ায় সেগুলো আসলে কতটা কার্যকরী তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে। এসব খেলা বাদ দিয়ে খেলতে পারেন চমতকার সব খেলা, যেমন দাবা। দাবা এমন একটি খেলা যা আপনাকে চিন্তা করতে বাধ্য করবে। মস্তিষ্ক কাজে লাগাতে, কৌশলী হতে বাধ্য করবে। এছাড়া শব্দ নিয়ে খেলা, গান নিয়ে খেলাসহ আরো অনেক খেলা আছে যা মনকে একাগ্র করে।
বাদ্যযন্ত্র বাজানো, ভাষা শেখা মনকে সচল করে :
সঙ্গীত মানুষের মনের খোরাক। শ্রুতিমধুর সঙ্গীত মনকে প্রশমিত করে; শান্তি দেয়। সঙ্গীতের মাধ্যমে মনের ভাবকে প্রকাশ করা যায়। বস্তুনিষ্ঠ কথা এবং চমত্কার সুরের একটি সঙ্গীত হৃদয় জয় করে বেঁচে থাকে যুগের পর যুগ। সঙ্গীতের একটা নির্দিষ্ট তাল আছে। নিয়ম আছে। তাই নিয়মিত কোন বাদ্যযন্ত্রের অনুশীলন মনকে প্রশান্ত করবে, মস্তিষ্ককে এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত করবে। ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ এর গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন করে কোনো বাদ্যযন্ত্রের শিক্ষা মনের বিভাজন কমায়। একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে এই প্রচেষ্টা চালানো যেতে পারে। যদি সঙ্গীত আপনার প্রিয় না হয়, সেক্ষেত্রে ভাষা শিখতে পারেন। নতুন একটি ভাষা আপনার কাজেও লাগবে আবার মনোযোগও বাড়াতে সাহায্য করবে।
(ওয়াং হাইমান উর্মি/মান্না)