সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন মহাশ্বেতা দেবী
  2016-08-07 18:38:14  cri


সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। গুরুতর অসুস্থ হয়ে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে গত ২৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২২ মে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন এই হাসপাতালে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়ে​ছিল ৯০ বছর। মহাশ্বেতা দেবী দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ডায়াবেটিসের জন্য তার দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গিয়েছিল। মহাশ্বেতা দেবী এই হাসপাতালে এর আগে বেশ কয়েকবার ভর্তি হয়ে চিকিত্সা নিয়েছেন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। কিন্তু এবারের মতো এত সংকটজনক অবস্থায় পড়েননি। তাই তার চিকিত্সাও কঠিন হয়ে পড়েছিল। মহাশ্বেতা দেবীর চিকিত্সার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের নিয়ে গড়া হয়েছিল ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড।

বিখ্যাত এই লেখকের মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, 'ভারত একজন মহান লেখককে হারাল। বাংলা হারাল একজন মহিমান্বিত মাকে। আমি আমার একজন পথপ্রদর্শককে হারালাম। মহাশ্বেতার আত্মা শান্তিতে থাকুক।' ২৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টা ​থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মহাশ্বেতা দেবীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ রবীন্দ্রসদনে রাখা হয়। পরে মরদেহ নিয়ে কলকাতায় মহা শোক মিছিল হয়। এরপর দুপুরে কেওড়াতলায় মহাশ্মশানে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

 মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম বাংলাদেশের ঢাকাতে। ১৯২৬ সালের ১৪ জানুয়ারি। মহাশ্বেতা দেবী একটি মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা মনীশ ঘটক ছিলেন কল্লোল যুগের প্রখ্যাত সাহিত্যিক এবং তার কাকা ছিলেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ঋত্বিক ঘটক। মহাশ্বেতা দেবী শিক্ষালাভের জন্য শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে এম এ ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৬৪ সালে তিনি বিজয়গড় কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। এই সময়েই তিনি একজন সাংবাদিক এবং লেখক হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিখ্যাত হন মূলত পশ্চিমবাংলার উপজাতি এবং নারীদের ওপর তার কাজের জন্য। তিনি বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে বিভিন্ন উপজাতি এবং মেয়েদের উপর শোষণ এবং বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন।

 তার লেখা শতাধিক বইয়ের মধ্যে হাজার চুরাশির মা অন্যতম। সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে ২০০৭ খ্রীষ্টাব্দে সার্ক সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। পেয়েছেন সাহিত্য একাডেমি ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কার। আরও পেয়েছেন পদ্মবিভূষণ, রেমন মেগসাইসাই পুরস্কার প্রভৃতি। তার লেখা 'হাজার চুরাশির মা', 'সংঘর্ষ', 'রুদালি'সহ বেশ কয়েকটি উপন্যাসের চলচ্চিত্র হয়েছে। (মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040