এ চিরায়ত রূপের বাইরে নারীরা বাংলাদেশে আজ সাম্য ও আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে ভূমিকা পালন করে চলেছে। পেশাগত জীবনের সব ক্ষেত্রেই নারী তার অবস্থানকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসা, প্রকৌশল, রাজনীতি, আইন ও বিচার, পুলিশ এমনকি প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আজ নারীদের সগর্ব পদচারণা।
মানুষ হিসেবে নারীর অতীত ইতিহাস বৈষম্যের ও অবহেলার। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে ঘর-গৃহস্থালির কাজে সেই প্রাচীনকাল থেকে নারীর ভূমিকাই মুখ্য। কিন্তু শতকের পর শতক ধরে নারীরা নীরবে নিভৃতে সভ্যতার বিকাশে যে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে এসেছে তার উপযুক্ত স্বীকৃতি তারা কখনোই পায়নি। নানা বঞ্চনা, শোষণ আর অসাম্যের মাঝে সংগ্রাম করে পুরো বিশ্বে নারী আজ সম্মানের আসনে আসীন।
নারী আজ ঘরে-বাইরে, দেশে-বিদেশে উন্নয়নের অংশীদার। বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের নারীরা তাদের যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে দেশে ও বিদেশে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে নারী-পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি সফলতা বয়ে এনেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীরারাখছেন মুখ্য ভূমিকা। সংসদের প্রতিটি টার্মেই নারী সদস্য থাকেন। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯ জন নারী। সংসদের বর্তমানে দুই দলের দুই প্রধান নেত্রী, আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা ও বিএনপির খালেদা জিয়া নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছেন। কখনো সংসদ নেতা হিসেবে, কখনো বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে তারা নারীদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। সংসদে এ দুই নেত্রী যতোটা না নারী হিসেবে তার চেয়ে বেশি বড় দুই দলের শীর্ষ ও জনপ্রিয় নেত্রী হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছেন।
দক্ষিন এশিয়ায় প্রথমবারের মত একই সাথে স্বরাষ্ট ও পররাষ্ট মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন দুজন নারী স্বরাষ্টমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ও পররাষ্টমন্ত্রী ডা : দীপু মনি। এছাড়াও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এবং ঢাকা বিভাগের হূইপ নির্বাচিত হয়েছেন সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। দেশের স্পিকার নারী। শিরীন শারমিন চৌধুরী দু মেয়াদে এ দায়িত্ব মেধা ও যোগ্যতার সাথে পালন করছেন। সংসদে নারীদের জন্য ৪৫টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। সংসদের প্রতিটি স্তরে নারী সদস্যরা ভূমিকা পালন করেছেন।
বর্তমান সরকারের সময়ও এর ব্যত্তয় হয়নি। এবারও সংসদে এবং মন্ত্রী পরিষদে বেশ ক'জন নারী রয়েছেন। সংসদে বিল উত্থাপন, কক্ষে দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব, প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর আলোচনা, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন উত্থাপন, কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন, সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বিদেশ ভ্রমণ, নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন, দলের সংসদীয় পার্টিতে ভূমিকা পালন, হুইপের দায়িত্ব গ্রহণ ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই তারা কাজ করেছেন। নারীর সব গুরূত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে সমান ও যোগ্য অংশগ্রহণের মাধ্যমেই বাংলাদেশে গড়ে উঠবে সফল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।