বেইজিংয়ের চং কুয়ান ছুন ইচুয়াং উন্নয়ন এলাকায় জিংদংফাং গ্রুপের পণ্যদ্রব্য প্রদর্শিত হচ্ছে। এখানে স্বচ্ছ স্মার্টার রেফ্রিজারেটার ডিসপ্লে, এলসিডি, বিশেষ স্ক্রিনসহ বিভিন্ন নতুন জিনিষ প্রদর্শিত হয়। এসব তৈরি হয়েছে কেন্দ্রের নিজস্ব গবেষণাগারে।
অথচ দশ বছর আগেও চীনে কোনো এলসিডি উত্পাদিত হতো না। ২০০৫ সালে জিংদংফাং এর নিজস্ব গবেষণাগারে পঞ্চম প্রজন্মের টিএফটি-এলসিডি উত্পাদন করা শুরু করে। তখন থেকেই চীন নিজস্ব প্রযুক্তিতে এলসিডি উত্পাদন শুরু করে। এ পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানটি দশটি উত্পাদনকেন্দ্র চালু করেছে এবং এক্ষেত্রে এটি চীনের বৃহত্তম এলসিডি উত্পাদনকারী শিল্প-প্রতিষ্ঠান। ২০১৫ সালে জিংদংফাং সারা বিশ্বে পেটেন্ট আবেদনের সংখ্যা, পণ্যের বৈচিত্র্য, স্মার্টার ও ডেস্কটপ পিসির বাজারে শেয়ারের দিক দিয়ে প্রথম স্থানে উঠে আসে। জিংদংফাংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট চাং ইউ মনে করেন, কোম্পানিটির বর্তমান সাফল্য অর্জন করার কারণ হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে নবায়ন ও উদ্ভাবন। এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, '২০০৫ সালে চীনে প্রথম পঞ্চম প্রজন্মের এলসিডি উত্পাদন শুরু হয় এবং ২০১৫ সালের শেষ দিকে সারা বিশ্বে ১০.৫ প্রজন্মের এলসিডি উত্পাদনে আমরা সবার চেয়ে এগিয়ে যাই। আমরা প্রতিবছর গবেষণার কাজে লাভের ৭ শতাংশ ব্যয় করি। গত বছর আমারা গবেষণায় ৩৩০ কোটি ইউয়ান ব্যয় করি।'
চংকুয়ানছুনে জিংদংফাংয়ের মতো আধুনিক প্রযুক্তি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আরও আছে। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান চংসিন আন্তর্জাতিক গ্রুপ। ২০০০ সালে গ্রুপটি প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রুপটি ৬৫ থেকে শুরু করে বর্তমানে ২৮ ন্যানোর চিপ উত্পাদন করছে। গত বছর চংসিন আন্তর্জাতিক গ্রুপ ২৮ ন্যানো চিপ দিয়ে তৈরি প্রসেসর স্মার্টার মোবাইলে ব্যবহার করে। এটি একটি রেকর্ড। বর্তমানে চংসিন গ্রুপ ১৪ ন্যানো চিপের নতুন প্রজন্মের প্রসেসর তৈরির কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। গ্রুপটির ভাইস চেয়ারম্যান চাং সিন জানান, সারা বিশ্বে আইসি খাতে যখন উত্পাদন কমেছে, তখন চংসিন গ্রুপ নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেকসই মুনাফা অর্জন করেছে। এ সম্পর্কে চাং সিন বলেন, 'আমরা ৪৫ মাসেই মুনাফা অর্জনে সক্ষম হই। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মুনাফা লাভের লক্ষ্য আমরা অর্জন করেছি। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাপারটা সহজ নয়।'
বিগত কয়েক বছরে বেইজিংয়ে প্রযুক্তি খাতে নবায়ন ও উদ্ভাবনের কৌশল বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। চংকুয়ানছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এলাকায় ব্যাপকভাবে কৌশলগত নতুন শিল্প-প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, এ পর্যন্ত উচ্চ আধুনিক প্রযুক্তির শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চংকুয়ানছুন-এ ৭০ শতাংশ'রও বেশি।
২০১৫ সালে চংকুয়ানছুন এলাকায় উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় ছিল ৪.০৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ১৩.৩ শতাংশ বেশি। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মুনাফা ও করের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে যথাক্রমে ১২.৩ ও ৯.৬ শতাংশ বেশি। উচ্চ প্রযুক্তি শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূল্য সংযোজন হয় ৫৫৫.৭ বিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ১২.২ শতাংশ বেশি এবং বেইজিং শহরের জিডিপির ২৪.২ শতাংশ।
বর্তমানে চংকুয়ানছুনে শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জৈব ওষুধ, নতুন উপাদান ইত্যাদি খাতে বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত চুংকুয়ানছুন মোট ৫৫৭৬টি স্ট্যান্ডার্ড প্রকাশ করে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মানদন্ড ২০৭টি, জাতীয় ৩১১১টি। চুংকুয়ানছুন পরিচালনা কমিশনের পরিচালক কুও হং বলেন, চুংকুয়ানছুন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করবে।