বাংলাদেশে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা
  2016-07-02 16:19:30  cri


মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি উত্সবের একটি ঈদ-উল ফিতর। এ উত্সবটি তারা ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য্যের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকেন। এখন চলছে পবিত্র রমযান মাস। ৩০দিন সিয়াম সাধনার পর আসছে পবিত্র ঈদ-উল ফিরত। আর এই ঈদকে সামনে রেখে ও ঈদ উত্সবকে বরণ করতেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিপণী-বিতানগুলোতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাট। ঈদকে সামনে রেখে বড় বড় বস্ত্র বিপণন কেন্দ্র আর অভিজাত দোকানগুলোতে ইতিমধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। মার্কেটগুলোতে আলোকসজ্জা করে নবরূপে সাজানো হয়েছে।

সকাল থেকেই গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বিপনী বিতানগুলোতে চলছে কেনাকাটার উৎসব। দিনের শুরু থেকেই ক্রেতা সমাগমে ভরপুর মার্কেটগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উৎসব।

ঈদে প্রিয়জনকে নতুন পোষাক উপহার দিতে সকলেই ছুঁটছেন সাধ্যমত কেনাকাটা করতে। বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটগুলিতে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ তাদের পরিবার নিয়ে আসছে ঈদের কেনাকাটা করতে। মার্কেটগুলোতে প্যান্ট, শার্ট, বাচ্চাদের বাহারী পোশাক, থ্রি পিস, লেহেঙ্গা, শাড়ী ও লুঙ্গিসহ দেশী বিদেশী বিভিন্ন ধরনের পোশাক বিক্রী হচ্ছে। ভারতীয় কিরণমালা, গঙ্গা, জিপসি, লাসা, ল্যাহেঙ্গাসহ বিভিন্ন পোশাকের চাহিদা দেশী পোশাককে ছাড়িয়ে গেছে।

শুধু তাই নয় মার্কেটগুলোতে মূল্যছাড়ের পাশাপাশি ক্রেতা আকর্ষনের জন্য লটারি ও নির্দিষ্ট অংকের কেনাকাটায় উপহার সামগ্রী প্রদানের প্রতিশ্রুতিও চলছে। বহুল পরিচিত পোষাক ও কাপড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা তাদের শো-রুমে নিত্যনতুন ও বাহারী পোষাকের সমারহ ঘটিয়েছে। জমা করেছেন পর্যাপ্ত পরিমানের দেশী ও বিদেশী পোষাকসহ অন্যান্য পন্য সামগ্রী।

এবার ভাল মানের শাড়ি সাড়ে ৮ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা, বিভিন্ন ডিজাইনের থ্রি-পিস দেড় হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, ল্যাহেঙ্গা ৮ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা, পাঞ্জাবী ৬ শ' থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা, প্যান্ট ৮শ' থেকে ৫ হাজার টাকা, ফতুয়া ৫'শ থেকে ১৮'শ টাকা, বিভিন্ন ধরনের শার্ট ৮শ' থেকে ৪ হাজার টাকা, জুতা ১৫শ' থেকে ৭ হাজার টাকা ও বাচ্চাদের বিভিন্ন পোষাক ৭ শ' থেকে ১৫ শ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে।

অভিজাত মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা যেমন জমে উঠেছে তেমনি মার্কেটের বাহিরে ফুটপাতে শাড়ী, কাপড়, তৈরী পোষাকসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দোকানগুলোতেও কেনাকাটায় ক্রেতাদের ভির লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের ঈদের কেনাকাটাও জমে উঠছে ফুটপাতের দোকানগুলোতে। এছাড়া মার্কেটে জুতা স্যান্ডেলের দোকানগুলোতেও বেচা-কেনা জমে উঠেছে। চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষি। বাহারী ডিজাইন আর নামের পোশাকের মধ্য থেকে ক্রেতারা বেছে নিচ্ছেন তাদের পছন্দের কেনাকাটা। অন্যদিকে টেইলার্সগুলোতে তৈরী পোশাক বানাতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে দর্জি কারিগররা। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে শিশুদের নিত্য নতুন পোষাকের জুড়ি নেই। শিশুরাও তাদের পছন্দের পোষাক সামগ্রী কিনতে পরিবারের সাথে বিপণী-বিতানগুলোতে আসছে। আর কিনে নিচ্ছে তাদের কাঙ্খিত ও পছন্দের পোষাক। তবে বিক্রেতারা বলেছেন, বর্তমানে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে ঠিক। কিন্তু এখনও ঈদ আসতে ৯ দিন বাকি। আমরা আশা করছি ২২ রোজার পর থেকে ঈদের বেচাকেনা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং আরো বেশি উৎসবমূখর হয়ে উঠবে ঈদের কেনাকাটা।

মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা কয়েকজন বলেন................

এদিকে দেশীয় পোশাক তৈরী ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ভাবিয়ে তুলছে বিদেশী পোষাকের সমাগম। বিদেশী কাপড় আর তৈরী পোশাকের আগ্রাসনে এবার ঈদ বাজারে দেশীয় কাপড় বা তৈরী পোশাক মার খাবে এমটাই আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। বিগত সময়ের মতো এবারও বড় বড় বিপণীবিতান ও অভিজাত মার্কেটগুলোতে দেশীয় কাপড় ও তৈরী পোশাকের চেয়ে অনেক বেশী প্রদর্শন হচ্ছে বিদেশী তৈরী পোশাক। অবৈধ পথে আসা ভারতীয় বিভিন্ন সিনেমার নায়ক/ নায়িকাদের নামের তৈরী পাঞ্জাবি ও থ্রীপিস, আরো রয়েছে ভারতীয় বিভিন্ন নাটকের সিরিয়ালের মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক। প্রতিবছরের মতো এবারও অভিজাত মার্কেটে বিদেশী পোশাকের কাছে মার খাচ্ছে দেশীয় তৈরী পোশাক।

ফুটপাত থেকে কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, মার্কেটে এবার তৈরী পোষাকের দাম বেশী। একই পণ্য ফুটপাতে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে বলে তারা এবার ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করছেন। তারা বলেন, মার্কেটের লাইটিং আর আলোকসজ্জার কারনে ভাল পোষাক চেনার উপায় থাকেনা। সব সময় মার্কেটে কেনাকাটা করে ঠকেছি তাই এবার সব বাহিরের ফুটপাত থেকে কিনছি। মধ্য এবং নিম্ন আয়ের লোকেরা মার্কেটে পোষাকের দাম বেশী হওয়ায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভির করছেন কেনাকাটা করার জন্য।

ফুটপাতের একাধিক বিক্রেতার সাথে আলাপকালে তারা বলেন, এবারের ঈদকে সামনে রেখে আমরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের পোষাক এনেছি। গত বারের তুলনায় পোষাকের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। দোকানে ক্রেতারাও ভির করছে এবং বিক্রিও ভাল হচ্ছে।

অপরদিকে বর্তমানে অনলাইন দুনিয়াতেও লেগেছে ঈদের ছোঁয়া। মাউসের ক্লিকেই কেনাকাটা করা যাচ্ছে ঘড়ে বসে। এসবই হচ্ছে প্রযুক্তির আশীর্বাদে। ক্রেতাদের আগ্রহকে মাথায় রেখে বাংলাদেশের ই-কমার্সে ওয়েবসাইটগুলোতেও এসেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। চলছে ঈদ নিয়ে আলাদা আয়োজন। জানা গেছে বেশ কয়েকটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটে ঈদের পণ্য বিকিকিনির ধুম চলছে।

আজকেরডিল ডটকম : এক কথায় বলতে গেলে যেসব পণ্যে মূল্যছাড় আছে, সেসব পণ্যই আজকেরডিল ডটকমে প্রদর্শিত হয়। এটিই এই সাইটের ভিন্নতা। কুপন কেনার ক্ষেত্রে আপনি পূর্ণ বা আংশিক মূল্য পরিশোধ করে কুপন হাতে পেলে তা নিয়ে নির্ধারিত দোকানগুলোতে গিয়ে বাকি অর্থ পরিশোধ করে পণ্য বুঝে নিতে পারবেন। ঈদ উপলক্ষে তারা পুরুষ-মহিলার পাশাপাশি ছোট বাচ্চাদের পোশাক প্রদর্শন করছে। এ ছাড়া খাবার এবং উপহারসামগ্রীও পাবেন এই সাইটে।

এখনই ডটকম : এখানে ক্রেতারা এক জায়গায় তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য বিভিন্ন বিক্রেতার কাছ থেকে একই ওয়েবসাইটে ঘরে বসে কিনতে পারেন। এখানে মূলত ছাড়ে পণ্য কেনা যায়, যাকে 'ডিল সাইট' বলা হয়। এখনই ডটকমের মূল পাতায় ঈদ আয়োজন নিয়ে আলাদা অংশ দেখা গেছে, যেখানে পোশাকের প্রাধান্য বেশি হলেও ঘড়ি, সুগন্ধি, অলঙ্কার ও চামড়ার পণ্য রয়েছে। এখনই ডটকম বিভিন্ন পরিমাণ টাকার গিফট কার্ডের ব্যবস্থা করেছে যা দিয়ে নিজেও পণ্য কেনা যাবে, আবার প্রিয়জনকে উপহারও দেওয়া যাবে। এই গিফট কার্ডগুলো দিয়ে ওয়েবসাইটটির যেকোনো বিক্রেতার পণ্য নির্দিষ্ট ছাড়ে কেনা যাবে। কেনার পর অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই পণ্য পৌঁছে যাবে দোরগোড়ায়।

বিডি ডটকম: কাছে কিংবা দূরে, যেখানেই থাকুন, এই ঈদে প্রিয়জনকে উপহার পাঠাতে পারবেন উপহার বিডি ডটকমের মাধ্যমে। ঈদ উপলক্ষে গিফট প্যাকেজও পাওয়া যাচ্ছে এখানে।

ইউশপ ডটকম ডটবিডি: ছেলেদের পাঞ্জাবি ও শার্ট এবং মেয়েদের সালোয়ার-কামিজের সম্ভার দিয়ে ঈদ উৎসব পালন করছে ইউশপ ডটকম ডটবিডি ঠিকানার ওয়েবসাইটটি।

সব মিলিয়ে ই-কমার্স ভিত্তিক বেচাকেনাও ভালই জমে উঠেছে।

দিদারুল ইকবাল

চীন আন্তর্জাতিক বেতার

বাংলাদেশ।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040