সুর ও বাণী : চীনে ভারতীয় সংগীতের প্রভাব
  2016-06-29 23:14:59  cri


ভারতিয় সিনেমা 'আওয়ারা' ১৯৫৫ সালে চীনে প্রথম প্রদর্শিত হয়। সে বছর চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় চীন প্রতিষ্ঠার ষষ্ঠতম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশটি শহরে ১৭ থেকে ২৩ অক্টোবর 'ভারতীয় চলচ্চিত্র সপ্তাহ' আয়োজন করা হয়। তখন ভারতের 'দুই বিঘা জমি', 'ঝড়বৃষ্টি' এবং 'আওয়ারা'-এ তিনটি সিনেমা দেখানো হয়। তবে এ সিনেমাগুলোর প্রচার খুব সীমিত ছিলো বলে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে পড়ে নি।

১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। বিদেশী এসব সিনেমার মধ্যে ছিলো ভারতিয় সিনেমা 'আওয়ারা'। এরপর থেকে এ সিনেমার থিম সং চীনে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন এ সিনেমার থিম সংটি। 'আওয়ারা' দেখে চীনা দর্শকরা ভারতীয় সংগীত সম্পর্কে কিছু ধারণা পান। অনেকে ভারতীয় গান পছন্দ করেন। এরপর চীনা শিল্পীরাও ভারতীয় স্টাইলের কিছু গান পরিবেশন করেন। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে আমি আপনাদের এমন কয়েকটি গান শোনাবো।

লি লিং ইয়ু

বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন 'পশ্চিম দেশ অভিমুখে ভ্রমণ' নামে টেলিভিশন নাটকের একটি গান। এ গানের নাম 'ভারতীয় মেয়ে'। গেয়েছেন লি লিং ইয়ু। এ গানে বলা হয়েছে, 'কে তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়েছে? সে গোলাকার উজ্জ্বল চাঁদ নাকি? কে তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়েছে? সে আকাশের উজ্জ্বল তারা নাকি? আমি পুরোপুরি মন দিয়ে গভীরভাবে তোমাকে ভালোবাসি'।

দক্ষিণ এশিয়ার রহস্যময় সংস্কৃতি চীনাদের কাছে খুব আকর্ষণীয়। এখন বেইজিংয়ের রাস্তায় দক্ষিণ এশীয় স্টাইলে পোশাক পরা চীনা মেয়েদের দেখা যায়। বেইজিংয়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার খাবার রেঁস্তোরা রয়েছে। চীনের কিছু সিনেমায় দক্ষিণ এশিয়ার ভাবও রয়েছে।

চাং শুয়ে ইয়ো

প্রিয় বন্ধুরা, এখন শুনুন হংকংয়ের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী চাং শুয়ে ইয়োর কণ্ঠে 'এ পথ' নামে একটি গান। এ গানটি ছিল 'আকস্মিক গুপ্তচর' নামক সিনেমার থিম সং। এ গানে বলা হয়েছে, 'শক্তি খুঁজি। অপরিচিত দেওয়াল খুঁজি। সঠিক দিক খুঁজি। খোঁজাখুজির মাধ্যমে সম্পর্ক আরো অটুট হয়। কে জানে, এ পথে আহত হলে কি হবে! দ্রুত হাঁটা বা মন্থর গতিতে হাঁটার চূড়ান্ত পর্যায়ে একই ফল দেখা যাবে। আমরা এ পথে আসার উদ্দেশ্য হলো এক সঙ্গে পথ খুঁজে বের করা'।

শ্রোতাবন্ধুরা, চীনের সিন চিয়াংয়ের একটি প্রাচীন নগরের নাম লো লান। প্রাচীনকালে লো লান ছিল রেশমপথের এক গুরুত্বপুর্ণ সংযোগস্থল। সেখানে অনেক সংখ্যালঘু জাতির মানুষ বসবাস করে। তাদের ভাষা, পোশাক, জীবন-যাপনের রীতিনীতি আমাদের চেয়ে ভিন্ন। সেখানকার বাসভবনগুলোর স্টাইল মুসলমানদের বাসস্থানের সঙ্গে মিল আছে। আপনি ওখানে গেলে দেখবেন ছেলে-মেয়েরা সবাই শিল্পীর মতো নাচ-গান করতে পারে।

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এখন শুনছেন 'লো লানের মেয়ে' নামে একটি গান। গেয়েছেন ইয়ু চিং। গানের সুর করেছেন ফু লিন, কথা লিখেছেন ইয়াং হাই ছাও। এ গানের কথা এমন, 'লো লানের মেয়ে, তুমি কোথায় যাবে? তুমি আমার স্বপ্ন নিয়ে গেছো। তোমার চলার পথে প্রচণ্ড বাতাস আসবে। তুমি আমার ঘরের সামনে থেমে গেলে ভালো হয়'।

১৯৯৩ সালে হংকংয়ের পরিচালক শু খ্য  'সবুজ সাপ' নামে একটি ছবি বানান। সে ছবির শুরুতে ভারতীয় মেয়েদের নৃত্য দেখানো হয়েছে। তার সাথে যে সুর বাজানো হয়েছে তা খুবই শ্রুতিমধুর। সুরকার ও গীতিকার সবাই চীনা। তবে সুরের মধ্যে ভারতিয় সংগীতের কিছু ভাব রয়েছে। শুনুন একটু।

ভারতের কথা বললে অনেকের মনে পড়বে ইয়োগা। এখন ইয়োগা চীনে জনপ্রিয় ব্যায়ামগুলোর অন্যতম। অনেকে হয়তো স্লিম হওয়ার জন্য ইউগা শিখতে শুরু করেন। ইয়োগা করলে স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং শরীর নমনীয় হওয়ার পাশাপাশি মনেরও প্রশান্তি হয়। বিভিন্ন সময় ভারত থেকে কিছু ইয়োগা মাস্টার চীনে এসে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

ফান ওয়েই বো

২০০৫ সালের জুলাই মাসে গায়ক ফান ওয়েই বো'র প্রকাশিত 'সুপার মাস্টার' নামে একটি অ্যালবামে 'ছান উ বু আর' নামে একটি চীনা গান ছিল। এ গানটি দক্ষিণ কোরীয় শিল্পী ইয়ামি ইয়ামি'র গান অবলম্বনে তৈরি করা হয়। এ গানের তালে তালে ভারতীয় নৃত্যের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বন্ধুরা, শুনুন গানটি।

চীনে মেয়েরা টি-শার্ট, জিন্স, স্কাট বা স্যুট পরে। শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ আমাদের পোশাক নয়। তবে কোনো পার্টিতে অংশ নেওয়ার সময় মজা করে কেউ কেউ শাড়ি পরে যেতে পারে। সবাই মনে করেন শাড়ি খুব সুন্দর। চীনের কিছু অভিনেত্রীও শাড়ি পরার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠান। সামাজিক মাধ্যমে অনেক এসব ছবি দেখে অনেক মন্তব্য লেখেন।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, এখন আপনারা 'অদ্ভূত' নামের একটি গান শুনছেন। ২০০৩ সালে এ গান সিঙ্গাপুরের স্বর্ণ সংগীত পুরস্কার পেয়েছে। গানের কথা লিখেছেন থিয়ান থিয়ান ।  সুর করেছেন লি সি ছোং। লন্ডনে বেড়াতে গিয়ে এ ধরনে গান গাওয়ার অনুপ্রেরণা পান গায়িকা সুন ইয়ান চি।

সুন ইয়ান চি

একবার লন্ডনে বেড়াতে গিয়ে তিনি একটি আধুনিক নাটক দেখেন। নাটকে ব্যবহারিত গানে ভারতীয় গভীর স্টাইল তাকে ভীষণ আকর্ষণ করে। যদিও তিনি প্রথমবারের মত ভারতীয় সংগীত শোনেন নি। তবে একই মঞ্চে দু'দেশের সংগীত নিখুঁতভাবে মিশে গিয়ে এ গায়িকাকে অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। তিনি লন্ডন থেকে তার ডিস্ক কোম্পানির প্রধানকে ফোন করে জানান, এমন একটি মজার গান গাইতে চান। তার সংগীত প্রযোজক লন্ডনের বড় বড় ডিস্কের দোকানে গিয়ে অনেকগুলো ডিস্ক কেনেন। এ ডিস্কগুলো সুরকার লি সি ছোংকে দেন। তারপর 'অদ্ভুত' নামের গানটি সৃষ্টি হয়। গানটি শুনে মনে হয়, আমরা ভারতের গঙ্গা নদীর তীরে দাড়িয়ে আছি। নদী থেকে পানি তুলছে এমন কোনো ভারতীয় মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি। কি যেন এক আশ্চর্য ভাষা কানে ভেসে আসছে। অদ্ভুত সংগীতও ভেসে আসছে বাতাসে। তা শুনে নাচতে ইচ্ছে করছে।

বন্ধুরা, চীনে প্রাচ্য নৃত্যগীতি দল আছে। এ নৃত্যগীতি দল এবং অন্যান্য নৃত্যগীতি দলের মধ্যে পার্থক্য হলো তারা বিভিন্ন ভাষা শিখে বিভিন্ন দেশের লোকসংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। তাদের পরিবেশনা দেখে বোঝা যায় না, তারা চীনা শিল্পী। এ নৃত্যগীতি দলের একজন কণ্ঠশিল্পীর নাম চু মিং ইং। আমার ছোটবেলায় তার সুনাম সারা চীনে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বিশেষ করে আফ্রিকান দেশগুলোর লোকসংগীত ও নাচ সুন্দরভাবে পরিবেশন করতে পারেন। তিনি হিন্দি ভাষার গানও গেয়েছেন। এখন শুনুন তার কণ্ঠে হিন্দি গান 'অজান্তা স্বপ্ন'। প্রিয় বন্ধুরা, চীনা কণ্ঠে হিন্দি গান শুনে কেমন লাগলো? ভবিষ্যতে আপনাদের শোনাবো চীনাদের কণ্ঠে বাংলা গান।

বন্ধুরা, 'সুর ও বাণী' আসর আজকের মতো এখানে শেষ করছি। আশা করছি এ অনুষ্ঠানে প্রচারিত বিবিধ সংগীত শুনে আপনাদের ভালো লাগবে। তাহলে আমি বিদায় নিই। আপনারা ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040