এদিন আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞরা চীন-ফিলিপিন্সের মধ্যে বিতর্কের বিষয়, দক্ষিণ চীন সাগরের সালিস নিয়ে চীনের অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক আইনে এ সালিসের প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদদাতাদের প্রশ্নের উত্তর দেন বিশেষজ্ঞরা।
পিমারাজু শ্রিনিভাসা রাও আন্তর্জাতিক আইন কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং বিশ্বের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত অনেক বিতর্কিত মামলার বিচার পরিচালনা করেছেন। চীন ও ফিলিপিন্সের দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্ক নিয়ে তিনি বলেন,
'এ সালিসের শুরুতে ফিলিপিন্স মনে করে তাদের প্রস্তাব সার্বভৌমত্বের বিতর্কের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, তার মানে কোন দ্বীপ চীনের কোন দ্বীপ ফিলিপিন্সের এ বিষয় গুরুত্বপূর্ণ নয়'।
এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ভূভাগের সার্বভৌমত্বের বিষয় আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন চুক্তির আওতায় অন্তর্ভুক্ত হয় নি, তাই এ সালিসের ফলাফলে সার্বভৌমত্ব ও সমুদ্রসীমার বিষয়ে কোনো অধিকার থাকে না।
আন্তর্জাতিক আদালতের সাবেক বিচারক আব্দুল জি কোরোমা জাতিসংঘের তৃতীয় সমুদ্র আইন সম্মেলনের আফ্রিকা প্রতিনিধিদলের প্রধান ছিলেন। ওই সম্মেলনে বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণে ১৯৮২ সালের জাতিসংঘের সমুদ্র আইন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। রাওয়ের মতামত সমর্থন করেন তিনি। ফিলিপিন্সের উত্থাপিত সালিস আসলে কি তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
'ফিলিপিন্সের উত্থাপিত সালিসের উদ্দেশ্য কি? আমার ধারণায় একটি প্রশ্ন নিয়ে পরামর্শ করা। একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে পরামর্শ চাওয়া তা স্বাভাবিক। তবে এ পরামর্শে বিভিন্ন পক্ষের জন্য কোনো আইনগত বাঁধা নেই। এ পরামর্শের ভিত্তিতে বস্তুগত বিতর্কের বিচারের অধিকারও নেই'।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন চুক্তিতে নির্ধারিত হয়েছে যে, ট্রাইব্যুনাল প্রশাসনিক অধিকার ও বস্তুগত ইস্যু নিয়ে বিচার করার আগে সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট দেশের অবস্থান বিবেচনা করতে হবে।
চীনের তাইওয়ান সমুদ্রবিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র আইন গবেষণাগারের অধ্যাপক মাইকেল শেং-দি গাও মনে করেন, দক্ষিণ চীন সাগরের সালিসের ফলাফল গ্রহণ করার দরকার চীনের নেই। তিনি বলেন,
'ফিলিপিন্সের উত্থাপিত দলিল বিবেচনা করলে আপনারা বুঝতে পারেন চীনের সঙ্গে বিতর্কের বিষয় সালিসে দাখিল করা হয় নি। সালিসে কোনো বস্তুগত বিষয় নেই। বিষয়টি এমন যে, একজনের মাথাব্যথা হয়েছে, তাই তিনি মনে করেন তার ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে। তবে চিকিত্সক দেখানোর পর জানতে পারেন ফ্লু'র কারণে তার এমনটি হয়েছে। এ মাথাব্যথার চিকিত্সা সম্ভব নয়'।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারী চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন গবেষক ই সিয়ান হো বলেন,
'আমরা জানি দক্ষিণ চীন সাগর সালিসের উত্স দক্ষিণ চীন সাগরের কিছু দ্বীপপুঞ্জকে নিয়ে। বাস্তবতা বিবেচনা করে ফিলিপিন্সের উচিত দু'দেশের দ্বীপপুঞ্জের বিতর্ক সমাধান করা। সালিসের মূল বিষয় ভূভাগের বিতর্ক। তা ছাড়া, সামুদ্রিক অধিকার ও দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয় দু'পক্ষের সমুদ্রসীমার বিষয়, তাই বলা যায় এ সালিসের মূল বিষয় সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত'। (সুবর্ণা/টুটুল)