20160622yinyue.mp3
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দি বেইজিং থেকে আপনাদের জন্য পরিবেশন করছি 'সুর ও বাণী' আসর। এ পর্বে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো চীনের বিখ্যাত গীতিকার লি হাই ইংয়ের সাথে। শোনাবো তার কয়েকটি প্রতিনিধিত্বশীল গান।
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন গীতিকার লি হাই ইংয়ের সৃষ্ট গান 'অর্ধচন্দ্র'। গেয়েছেন লিউ হুয়ান। এ গানটি চীনের পপ সংগীতের জগতে একটি প্রতিনিধিত্বশীল কাজ। গানটিতে সাফল্যের সঙ্গে পপ সংগীতের প্রাচীন ও জাতিগত উপাদান মিশেছে।
গীতিকার লি হাই ইং
লি হাই ইং জানিয়েছেন, তিনি বাসায় বসে টেলিভিশন দেখার সময় এ গানটি লিখেছেন। মাত্র আধা ঘন্টা সময় লেগেছে গানটি লিখতে। আমরা এ গানটি শুনেছি মাত্র পাঁচ মিনিট। কিন্তু এ গান চীনের সংগীত জগতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। এ গানে বলা হয়েছে, 'সুদূরের রাতের আকাশে অর্ধচন্দ্র থাকে। সে চাঁদের নিচে এক ছোট্ট সেতু রয়েছে। সে ছোট্ট সেতুর পাশে একটি ক্ষুদ্র নৌকাও ছিলো। আচিয়াও সে নৌকা চালাতে চালাতে বড় হয়েছে। তার গান বাতাসে ভেসে আমার কানে আসে। জন্মস্থানের চাঁদ দেখে আমার বুক বেদনা ভরে উঠেছে।'
লি হাই ইং ১৯৫৪ সালে চীনের কুয়াংচৌ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছোটবেলা থেকে সংগীত ভালোবাসেন। ১৯৭০ সালে তিনি ১৬ বছর বয়সে কুয়াংচৌ ইয়ুন অপেরা দলে যোগ দেন। নিজেকে বেহালাবাদক ও সুরকার হিসেবে গড়ে তোলেন। পাঁচ বছর পর তিনি চীনের নৌবাহিনীর দক্ষিণ চীন সাগর রণতরীর সংস্কৃতি দলের বেহালাবাদক ও সুরকার নিযুক্ত হন। ১৯৮২ সালের শেষ দিক থেকে ১৯৯৭ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি কুয়াংতোং গীতি দলে সুরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালের এপ্রিল থেকে তিনি কুয়াংতোং টেলিভিশন কেন্দ্রের প্রধান সংগীত পরিচালক নিযুক্ত হন।
'অর্ধচন্দ্র' গানটি লি হাই ইংয়ের প্রথমদিকের সৃষ্টি করা সুরের মধ্যে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। এরপর তিনি আরো অনেক জনপ্রিয় সংগীত সৃষ্টি করেছেন। ১৯৯৯ সালে ম্যাকাও চীনের অধিকারে আসে। চীনা কেন্দ্রীয় টেলিভিশন এ বিষয়ে 'ম্যাকাওয়ের সময়' নামে একটি সিরিজ অনুষ্ঠান করে। এ টিভি অনুষ্ঠানের থিম সং ছিল চীনের বিখ্যাত কবি ওয়েন ঈ দোর কবিতা 'সাত সন্তানের গান-ম্যাকাও'। এ গানের সুর করার দায়িত্ব লি হাই ইংকে দেয়া হয়। ওয়েন ঈ দোর কবিতা দেখে লি হাই ইং খুব উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কারণ ম্যাকাওয়ের সাথে তার বিশেষ আবেগ জড়িত। তার বাবার বাড়ি ম্যাকাওয়ের খুব কাছে। ছোটবেলায় তিনি ম্যাকাওতে গিয়েছিলেন। ম্যাকাওয়ের বাচ্চাদের গান তার শৈশবের স্মৃতি।
ওয়েন ঈ দোর কবিতা এ রকম, "তুমি কী জানো, 'ম্যাকাও, আমার আসল নাম নয়। মা, আমি তোমার কোল ত্যাগ করেছি বহু দিন আগে। কিন্তু তারা কেবল আমার শরীর নিয়ে যেতে পারে। তোমার কাছে আমার আত্মা রয়েছে। তিন শ বছর ধরে আমি জেগে থাকলে বা স্বপ্ন দেখলেও কখনো মাকে ভুলে যাইনি। আমার ডাক নাম ধরে ডাকো। আমাকে আওমেন বলো দয়া করে। মা, মা, আমি ফিরে আসতে চাই তোমার বুকে।' এ গানের সুর করতে লি হাই ইং চল্লিশ দিন সময় নিয়েছেন। তারপর তার সৃষ্টি করা গান 'ম্যাকাওয়ের সময়' টেলিভিশনে প্রচারের সাথে সাথে কোটি কোটি চীনা মানুষের মন জয় করে। বিশেষ করে ম্যাকাওতে প্রবল জনপ্রিয় হয়। চীনের কোলে ম্যাকাওয়ের প্রত্যাবর্তন সম্পর্কিত নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গায়ক-গায়িকারা এ গান পরিবেশন করেন। পাশাপাশি রাস্তায় ও নানা দোকানে প্রায় শোনা যায় এ গানটি। এমন কি এ গান চাং ও উপগ্রহের সঙ্গে মহাকাশেও গেছে।
বন্ধুরা, এবার শুনুন চাও ফু চিয়ার কণ্ঠে গাওয়া 'সাত সন্তানের গান' নামের গানটি।
লি হাই ইং চীনের কিছু চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকের জন্য সুর করেছেন। তিনি একাই গানের কথা লেখেন এবং সুর করেন। তার গানগুলো প্রচারের পর পর শ্রোতাদের সমাদর পায়।
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন 'আমি বলতে চাই না' শিরোনামে একটি গান। এ গান গেয়েছেন ইয়াং ইয়ু ইং। এ গান 'অভিবাসী মেয়ে' নামে টেলিভিশন নাটকের থিম সং। গানের কথা লিখেছেন চেন সিয়াও ছি, সুর করেছেন লি হাই ইং। এ গান ১৯৯২ সালে চীনের সেরা দশটি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকের গানের পুরস্কার পেয়েছে। এ গানে বলা হয়েছে, 'আমি বলতে চাই না, আমি খুব পবিত্র। তোমার মন আমি বুঝেছি। আমি তোমার হাসি মুখ ভুলে যাবো না। আগামীকাল কী রকম আবহাওয়া হবে তা কোনো ব্যাপার নয়। আমি আগের মতো তোমার সামনে দাঁড়াবো। আমার বিশ্ব তোমাকে ছাড়া সৃষ্টি হবে না।'
লি হাই ইং চীনের জাতীয় ও বিদেশের অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্রের ১৯৮৯ ও ১৯৯৯ সালের বসন্ত উত্সবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সংগীত পরিচালনা করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি রোমানিয়ার দশম আন্তর্জাতিক গোল্ডেন ডিয়ার পপ সংগীত উত্সবে বিচারক ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি কাজাখস্তানের দশম এশীয় কণ্ঠ নামে সংগীত উত্সবে বিচারক ছিলেন। তা ছাড়া তিনি চীনের হালকা সংগীত কমিটির উপ-মহাসচিব। চীনা সংগীত মেধাস্বত্ব সমিতির সদস্য। চীনের চলচ্চিত্র সংগীত সমিতির সদস্য প্রভৃতি।
পপ সংগীতের উন্নয়নের পাশাপাশি লি হাই ইং চীনের লোকসংগীতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার সৃষ্টি করা বাঁশির সুর 'বাঁশ ভবনের প্রেমের গান' বেশ প্রচলিত। চীনের সংখ্যালঘু জাতির বাদ্যযন্ত্র হুলুসি দিয়ে বাজানো প্রতিনিধিত্বশীল একটি সুর। চমতকার এ সুরটি এবার শুনুন বন্ধুরা।
প্রিয় শ্রোতা, লি হাই ইং সব সময় নতুন সংগীত ক্ষেত্র অন্বেষণ করতে পছন্দ করেন। পপ সংগীত সৃষ্টি করার পাশাপাশি তিনি সংগীতবিষয়ক নাটক তৈরি করতে আগ্রহী। পপ সংগীত হলো সংগীত নাটকের প্রধান প্রচার মাধ্যম। দর্শকরা হালকা পরিবেশে তা উপভোগ করেন। ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সাল চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশনের বসন্ত উত্সবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লি হাই ইং 'নদী পাড় হওয়া' এবং 'চিরস্থায়ী' নামে দুটি সংগীতবিষয়ক নাটক পরিবেশন করেন। ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি।
প্রিয় বন্ধুরা, লি হাই ইং অনেক টেলিভিশন নাটকের জন্য গান সুর করেছেন। সে গানগুলোর মধ্যে 'বাতাসের মতো প্রেম' নামের গানটি লি হাই ইংয়ের প্রতিনিধিত্বশীল কাজ নয়। তবে আমার খুব প্রিয়। গানটি গেয়েছেন অভিনেত্রী সুন লি। এ গানের কথা এমন, 'সেপ্টেম্বরে বেশ বৃষ্টি পড়ে। বৃষ্টির পর ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়েছে মাটিতে। ফুলের পাপড়ি চিহ্ন হিসেবে বইয়ের মধ্যে রেখে দেই। আমাদের প্রেম বাতাসের মতো মশ্রিণ। কিন্তু আমি তাও বহন করতে পারি না। যদি তুমি প্রেমের মূল্য না দাও তাহলে তা হারিয়ে যাবে। আমাদের প্রেম বাতাসের মতো ভারি। আমি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে চাই। '
প্রিয় বন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা চীনের গীতিকার লি হাই ইংয়ের সৃষ্টি করা কয়েকটি গান শুনলেন। আজকের 'সুর ও বাণী' আসর এ পর্যন্তই। আমি বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)