চীনের উইগুর মুসলমানদের একটি পরিবারের রোজার একটি দিন
  2016-06-22 09:57:45  cri



মুসলমানের জন্য রমজান মাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। চীনে এবার রমাজান শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকালে। চীনা সিন চিয়াং স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলে রাতের চেয়ে দিনের সময় দীর্ঘ। সম্প্রতি সি আর আইর একটি সাংবাদিকদল সিন চিয়াংয়ে যায়। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা সিন চিয়াংয়ে একটি সাধারণ মুসলিম পরিবারের রমজান মাসের জীবন দেখতে যাব।

আবুলিজ আব্দুকেরাম ও তার পরিবার সিন চিয়াং উরুমুছি শহরের থিয়ান সান অঞ্চলে বসবাস করেন। আবুলিজ ও তার ছেলে উরুমুছির এক বাজারে গহনার ব্যবসা করেন। তাদের ব্যবসা ভালোই চলছে।

একিদন সন্ধ্যা ৭টায় মাগরিবের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরেছেন আবুলিজ। বাড়িতে তিনি স্ত্রীর বাবা মা ও ছোট বোন এবং তার বিবাহিত ছেলেকে সপরিবারে দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি তার ছেলেকে ফোন করে বাড়িতে খেতে বলেছেন, জানিয়েছেন আজন খাসীর মাংস রান্না হচ্ছে।

আবুলিজ পরিবারের সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ রোজা রাখেন। সূর্যোদয়ের আগে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তারা সর্বেশেষ খাওয়া-দাওয়া করেন, যেটা বাংলাদেশে সেহেরি নামে পরিচিত। তারপর, সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা কিছুই খান না। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন তারা। আবুলিজ জানালেন, রোজা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। তিনি বলেন"রমজান মাসে গোটা পরিবার একসাথে খায়, একসাথে নামাজ করে—এটা খুব আনন্দময় একটি সময়। এই মাসটা আমার খুব আনন্দে কাটে।"

আবুলিজের স্ত্রী ও তার ছোট বোন রান্নাঘরে কাজ করছেন। খাসীর মাংস সিদ্ধ করার পর বের করা হয়, তারপর মাংসের সুপে যুক্ত করা হয় উইগুর জাতির প্রিয় সবুজ rapa, টমেটো এবং নুডলস। এটা তাদের ইফতার।

আবুলিজের মেয়েও রান্নাঘরে মাকে সাহায্য করে। ২৬ বছর বয়সি আদিলা নিজে তুর্কী ভাষা শিখেছে এবং এখন একটি বৈদেশিক বাণিজ্য কোম্পানিতে কাজ করে। আদিলা জানায়, ২০ বছর বয়স থেকে সে রোজা রাখা শুরু করে। সে বললো,"রোজা আমাকে অনেককিছু শিখিয়েছে। গ্রীষ্মমাকলে সহজে খিদে বা তেষ্টা লাগে। তবে যখন রাতে সবাই একসাথে খাই তখন খাবার অনেক বেশি সুস্বাদু মনে হয়। খাদ্য নষ্ট করতেও তখন খারাপ লাগে।"

বৈঠকখানায় বসেছে গোটা পরিবার। চলছে গল্পগুজব। আবুলিজের স্ত্রীর মাতা মালিকরাতের বয়স প্রায় ৮০ বছর। তিনি সৌদি আরবের মক্কায় হজব্রত পালন করেছেন। শারিরীক অবস্থা ভাল না বলে তিনি এবার নিয়ম করে রোজা রাখতে পারছেন না। শরীর ভালো থাকলে রোজা রাখেন, ভালো না-থাকলে ভাঙেন। তিনি জানালেন, রোজা মনকে বিশুদ্ধ করে, ক্ষুধার কষ্ট বোঝা যায়। তিনি বলেন"রোজার মাধ্যমে আমরা ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারি। রোজার সময় স্বাভাবিকভাবেই গরীবদের জন্য মনে বেশি সহানুভূতি জাগে। তখন তাদের জন্য কিছু করার আগ্রহ বাড়ে।"

আবুলিজ মায়ের সাথে একমত। তিনি বলেন, রমজান মাস মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে ভাল কাজ করা উচিত্, অন্য মানুষকে সাহায্য করা উচিত্ এবং পরস্পরের খেয়াল রাখা উচিত। তিনি জানান, গরীবদের জন্য তিনি ইতোমধ্যেই মসজিদে ৩০ ব্যাগ চাল দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে আরও দেবেন।

রাত ১০টা ইফতারের সময় হয়। আবুলিজের আমন্ত্রণে মসজিদের ইমাম সাহেব এসেছেন সবার সঙ্গে ইফতার করতে। ইফতারের আগে সবাই আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানিয়ে মুনাজাত করেন।

টেবিলে খাসির মাংস, ফল, চাসহ নানা খাবার দেওয়া হয়েছে। আবুলিজ জানান, বর্তমানে তার পরিবার বড় এবং স্বচ্ছল। গত বছর তারা ১২০ বর্গমিটার আয়তনে এই নতুন বাড়িতে ওঠেন। তার ছেলেও নিজের গাড়ি ও বাড়ি কিনেছে। আবুলিজ বলেন"এখন আমাদের জীবন খুব সুখি। সবাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও নিরাপদ। আমাদের জীবন এরকম থাকলেই আমি খুশি।"

ইফতারশেষে আবুলিজের নেতৃত্বে সব পুরুষ বাড়ির একটি ঘরে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। আর চীনের উইগুর মুসলমানদের একটি পরিবারের রোজার একটি দিন এভাবে শেষ হয়। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040