বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন ও সাফল্য
  2016-06-19 13:18:50  cri
জাতীয় কবি কাজী নজরূল ইসলামের এ অমর কবিতার বাস্তবায়ন হতে চলেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের নারীরা তাদের মেধা, শ্রম, সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতা আর অনুপম ব্যক্তিত্ব দিয়ে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে গেছে অনেক দূর।

আমাদের সমাজ-সংস্কৃতি ও আচারে মাতৃরূপিণী নারীর বন্দনা আছে। একজন নারী মমতাময়ী মা কিংবা আদুরে কন্যা, স্নেহময়ী বোন কিংবা জীবন সংসারের ভাঙা-গড়ার সঙ্গী স্ত্রী হিসেবে যে চিরায়ত রূপে নিজেকে উপস্থাপিত করেছে, বর্তমানে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসা, প্রকৌশল, রাজনীতি, আইন ও বিচার, পুলিশ এমনকি প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আজ নারীদের সগর্ব পদচারণা।

মানুষ হিসেবে নারীর অতীত ইতিহাস বৈষম্যের ও অবহেলার। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে ঘর-গৃহস্থালির কাজে সেই প্রাচীনকাল থেকে নারীর ভূমিকাই মুখ্য। কিন্তু শতকের পর শতক ধরে নারীরা নীরবে নিভৃতে সভ্যতার বিকাশে যে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে এসেছে তার উপযুক্ত স্বীকৃতি তারা কখনোই পায়নি। নানা বঞ্চনা, শোষণ আর অসাম্যের মাঝে সংগ্রাম করে পুরো বিশ্বে নারী আজ সম্মানের আসনে আসীন।

সব সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে উঠে; মা, বোন, স্ত্রী বা প্রেমিকা হিসেবে সব দায়িত্ব যথাযথ পালন করে নারী আজ ঘরে-বাইরে, দেশে-বিদেশে উন্নয়নের অংশীদার। বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের নারীরা তাদের যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে দেশে ও বিদেশে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণের মনোভাবও এখন পরিবর্তিত হচ্ছে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেককে বাদ দিয়ে যে উন্নয়ন সম্ভব নয় এ ধারণা যেমন সরকার অনুধাবন করতে পেরেছে তেমনি দেশের আপামর জনসাধারণও উপলব্ধি করেছে।

সমাজের সব স্তরে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলায় নিজ নিজ অবস্থা থেকে নারীরা ব্যবসা করছেন। তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাখছেন গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা। ২০০৫ সালের এক জরিপ মতে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে হস্তশিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ শতকরা ৩৭ ভাগ, যেখানে পুরূষের অংশগ্রহণ ২২ ভাগ। তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ে আজ নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। বিকাশমান এ শিল্পের মূল উতপাদক শক্তিই নারী। তৈরি পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। নারীর শ্রম ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এ শিল্পের বিকাশ কাঙ্ক্ষিত পর্যরয়ে আসতে পারতো না। বর্তমানে নারীরা ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে তারা নিজেরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন তেমনি পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য আনয়নে রাখছেন গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা। যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেই গ্রামীণ ব্যাংকের ৯৭ ভাগ ঋণ গ্রহীতা নারী। নারীরাই সময়মতো ঋণ পরিশোধ করে এ সফলতা এনেছেন।

বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে নারীদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। সঙ্গীতে একজন রূনা লায়লা অথবা একজন সাবিনা ইয়াসমিন দেশকে দিয়েছেন অনেক কিছু। সাহিত্য অঙ্গনে পুরূষদের পাশাপাশি যে নামগুলো উচ্চারিত হয় তারা হলেন রাবেয়া খাতুন, রিজিয়া রহমান, সেলিনা হোসেন, নাসরিন জাহান, অদ্বিতি ফাল্গুনি। সাংবাদিকতায় নারীরা আজ পিছিয়ে নেই। গণমাধ্যমের বিভিন্ন শাখায় নারীরা কাজ করে চলেছেন সাফল্যের সঙ্গে। নারী তার মেধা, পরিশ্রম আর সৌন্দর্য দিয়ে উপস্থাপনা, রিপোর্টিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে চলেছেন।

সমাজে আজ নারীরা নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে এবং সামাজিক অগ্রগতি সাধনে নারীরা যে খুবই গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে উপরোক্ত পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। যদি গণমাধ্যমে নারীদের সাফল্যের কাহিনীগুলো সঠিকভাবে উঠিয়ে আনা হয় তাহলে নারীরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে সমাজে আরো অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এই মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে যে বাদ দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয় তা আজ সবাই অনুধাবন করতে পারছে। সামাজিক অগ্রগতিতে নারীরা অবদান রাখার কারণে নারী-পুরূষের ভেদাভেদ কমে গেছে। নারীকে আজ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। নতুন স্বপ্নের এক বিশ্ব গঠনে নারী-পুরূষ এক সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবে এটাই সবার প্রত্যাশা।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040