২০০৫ সালে ওয়েস্টার্ন রান্না শেখার পর চু ইউয়ান বেইজিংয়ে কেম্পিনস্কি হোটেলে তাঁর প্রথম কাজ শুরু করেন। তিনি ভাবলেন, অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হওয়ার পর নিজের দোকান খুলবেন। ২০০৮ সালে চু ইউয়ান তাঁর একজন শিক্ষকের সঙ্গে যৌথভাবে বেইজিংয়ের শহরতলীতে একটি হুথংয়ে তাঁর প্রথম ডেজার্ট দোকান খুলেন। ব্যবসা ভালোই চলছিল। কিন্তু দু'জনের মতবিরোধের কারণে সেটি একসময় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি আরেকটি হোটেলে কাজ শুরু করেন। ২০১১ সালে চু ইউয়ান পুনরায় নিজের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বেইজিংয়ের বিখ্যাত্ ব্যবসায়িক এলাকা সানলিথুনে 'ক্রিম পাইল' নামের একটি ডেজার্ট দোকান খুলেন। পাইল হল চু ইউয়ানের ইংরেজি নাম এবং ক্রিম হল তাঁর স্ত্রীর ইংরেজি নাম।
'দামী দামী হোটেলে যেসব ডেজার্ট পাওয়া যায়, সে ধরনে ডেজার্ট আমি সাধারণ মানুষের সামনে পেশ করতে চেয়েছিলাম। এই ধারণা নিয়ে আমি এ ব্যবসা শুরু করি। আমি আমার দোকানের মেনুতে নতুন প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করেছি। প্রায়ই আমরা নতুন কিছু দিতে চাইতাম। এ ব্যবসা কঠিন, তবে আমি বরাবরই বন্ধুদের সাহায্য পেতাম। কেউ যখন আমাদের তৈরি ডেজার্টের প্রশংসা করতেন, তখন বেশ ভালো লাগত।'
চু ইউয়ানের ডেজার্ট দোকান মাত্র তিন বছর ধরে চলে। চু ইউয়ান বরারবই খাদ্যের মানের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কিন্তু উত্পাদনখরচ ও দোকান ভাড়া দিন দিন বাড়ার কারণে তার খরচও বেড়ে যায়। তার পোষাচ্ছিল না। একসময় বাধ্য হয়ে তিনি দোকান বন্ধ করে দেন। তিনি আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে মন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
'দোকান ভাড়া বেড়ে যাওয়া ছিল একটি বড় কারণ। তবে শুধু এ কারণেই আমি এ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছি, তা নয়। আমি ও আমার স্ত্রী চাচ্ছিলাম, আরও বেশি মানুষের মধ্যে আমাদের জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে। আমরা ডেজার্ট রান্নার কৌশল অন্যদের শেখাতে চাইলাম। সেই ভাবনা থেকেই একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলে বসি।'
২০১৪ সালের শেষ দিকে 'ক্রিম পাউল' ডেজার্ট দোকান বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ক্রিম পাইল ডেজার্ট বেকারি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। এখানে এক মাসের প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেন তিনি। তিনি বলেন, 'এ পর্যন্ত আমরা আটটি ব্যাচকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রতি ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার। তাঁরা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন। তারা নিজেদের দোকান খুলতে চান। আমাদের ডেজার্ট দোকানের পুরাতন কাস্টমারদের অনেকেই আমাদের এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বাকিরা ওয়েবসাইট ও পরিচিতদের মাধ্যমে আমাদের কথা জেনেছেন। আসলে আমি কোনো প্রচার চালাইনি।'
২০১৫ সালে ফ্রান্সের একটি চকলেন্ট ব্রান্ডের আমন্ত্রণে চু ইউয়ান জাপানে এক সপ্তাহব্যাপী ডেজার্ট প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে এশিয়ান পেস্ট্রি কাপে অংশ নেয়ার জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ রাখেন।'২০১৫ সালে আমি জাপানে শিখেছি। জাপানে প্রশিক্ষণে যারা অংশ নিয়েছেন তারা সবাই বিখ্যাত ডেজার্টশিল্পী। আমি সেখানে অনেককিছু শিখেছি। আমি ২০১৫ সালের শেষ দিক থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে এশিয়ান প্যাস্ট্রি কাপে অংশ নেয়ার জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ রাখি।'
২০১৬ সালের ১২ ও ১৩ এপ্রিল চু ইউয়ান চীনের প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য হিসেবে সিঙ্গাপুরে এশিয়ান প্যাস্ট্রি কাপে অংশ নেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'প্রতিযোগিতার সময় ছিল ৮ ঘন্টা। এ সময়ে ১৮টি ডেজার্ট রান্না করতে হয়েছে। আমরা চীনা বৈশিষ্ট্যময় উপাদান দিয়ে ডেজার্ট তৈরি করি।'
চীনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ছিল চু ইউয়ানের বহু বছরের স্বপ্ন। তিনি আরও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি জানতাম আমার চীনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ হবে। প্রতিযোগিতা থেকে আমি অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় আমি আরো ভালো করতে পারবো।'