খুনমিংয়ে প্রথম 'চীন-বাংলাদেশ উত্পাদন সহযোগিতা ফোরাম' অনুষ্ঠিত
  2016-06-15 17:05:34  cri


প্রথমবারের মতো চীনের ইয়ুননান প্রদেশের রাজধানী খুনমিংয়ে গত ১৩ জুন বিকেলে 'চীন-বাংলাদেশ উত্পাদন সহযোগিতা ফোরাম' অনুষ্ঠিত হয়। ইয়ুননান প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগ, বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্য চেম্বারস্‌ ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) এবং ঢাকা শিল্প ও বাণিজ্য চেম্বারস্‌ (ডিসিসিআই)-এর যৌথ উদ্যোগে এবারের ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়।

এবারের ফোরামের উদ্দেশ্য হলো উত্পাদন খাতে চীন ও বাংলাদেশের প্রাধান্যের পারস্পরিক পরিপূরকতার মাধ্যমে দু'পক্ষের সহযোগিতা ও জয়লাভ বাস্তবায়ন করা এবং দু'দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা। দু'দেশের প্রায় এক'শ জন শিল্পপতি এ ফোরামে উপস্থিত ছিলেন। ফোরাম শেষে 'ইয়ুননান প্রদেশ ও বাংলাদেশের মধ্যে আর্থ-বাণিজ্য সহযোগিতা কাঠামো চুক্তি' স্বাক্ষরিত হয়।

ইয়ুননান ও বাংলাদেশের দূরত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটারের মতো। চীন সরকার 'এক অঞ্চল, এক পথ' ও 'বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণ' এর প্রস্তাব উত্থাপনের পর ইয়ুননান ও বাংলাদেশের আদানপ্রদান দিন দিন আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ইয়ুননানের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে জানার আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাংলাদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করাও জরুরি একটি চাহিদায় পরিণত হয়েছে। ২০১৫ সালে ঢাকায় ইয়ুননানের বাণিজ্য কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে। এটা ইয়ুননানের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করার সুষ্ঠু ভিত্তি স্থাপন করেছে।

ইয়ুননান প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগের উপ-প্রধান চৌ শুয়ে ওয়েন

এ প্রসঙ্গে ইয়ুননান প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগের উপ-প্রধান চৌ শুয়ে ওয়েন বলেন, "২০১৬ সালে চীন ভারতকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের পর দু'দেশের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে। 'এক অঞ্চল, এক পথ' ও বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর নীতির সমর্থনে ইয়ুননান ভৌগোলিক প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আদানপ্রদান বিকাশ করে আসছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ইয়ুননানের বাণিজ্যিক মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২০ কোটি মার্কিন ডলার।"

এখন ইয়ুননান গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক উত্পাদন ক্ষমতা ও সাজসরঞ্জাম নির্মাণকে কেন্দ্র করে ধাপে ধাপে 'এক অঞ্চল, এক পথ' বরাবর দেশগুলোর সঙ্গে সুষ্ঠু সহযোগিতা করার প্রবণতা গড়ে তুলেছে।

ইয়ুননান প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগের বৈদেশিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান পাও ওয়েন থাও

ইয়ুননান প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগের বৈদেশিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান পাও ওয়েন থাও জানান, "বাংলাদেশের বাজারে বিনিয়োগের সুপ্ত শক্তি বিশাল। বাংলাদেশের অবস্থা ও ইয়ুননানের শিল্প কাঠামো মিলিয়ে সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতের সহযোগিতা জোরদার করা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের শাকসবজি, ফল, দুগ্ধজাত খাদ্যের চাহিদা বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। কৃষিজাত দ্রব্য উত্পাদনে ইয়ুননানের প্রাধান্য আছে। তা ছাড়া, বাংলাদেশে বিদ্যুত্ ঘাটতি রয়েছে, ফলে নতুন জ্বালানি বিনিয়োগে দু'পক্ষ সহযোগিতা করতে পারে।"

এফবিসিসিআই-এর চেয়ারম্যান আব্দুল মতলুব আহমেদ

ফোরামে এফবিসিসিআই-এর চেয়ারম্যান আব্দুল মতলুব আহমেদ চীনা শিল্পপতিদের কাছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিবেশের পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "চীনের অনেক প্রযুক্তি বিশ্বে উন্নত মানের। যদি আমরা এ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারি, বাংলাদেশের অর্থনীতিও দ্রুত বিকশিত হবে। ফলে আমরা চীনের সঙ্গে উত্পাদন খাতের সহযোগিতা করার প্রত্যাশা করি। আজ ইয়ুননান প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। পরবর্তীকালে আমরা চীনের উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারি, দু'দেশের উত্পাদন ক্ষমতার সহযোগিতা বাস্তবায়িত হবে। এতে কেবল বাংলাদেশের কল্যাণ হবে তা নয়, বরং চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও সুযোগ বয়ে আনবে। দু'পক্ষ এতে লাভবান হবে।"

চিন চিং বস্ত্র লিমিটেড কোম্পানির প্রধান হান চিং ছাও দু'দেশের সহযোগিতার ভবিষ্যত সম্বন্ধে মন্তব্য করেন যে, "বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশ 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ দেশ। গত দশ বছরে বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণ ও বস্ত্র শিল্প দ্রুত বিকশিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালে মাঝারি পর্যায়ের দেশে উন্নত করা, ১ কোটি কর্মসংস্থান ও ৪০ বিলিয়ন ইউয়ান সমমূল্যের শিল্প উত্পাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এটা বিরাট বাণিজ্যিক সুযোগ। ইয়ুননানের বৈদেশিক বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে আমার দায়িত্ব হলো, ইয়ুননানের শ্রেষ্ঠ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাংলাদেশকে সুপারিশ করা।"

আমরা বিশ্বাস করি, এ ফোরামের মাধ্যমে আরো বেশি চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অবস্থা জানতে পেরেছে। ভবিষ্যতে দু'দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার সুযোগ আরো বাড়বে। (ইয়ু/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040