বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে নারী
  2016-06-12 15:34:12  cri
ব্রিটিশ শাসিত ভারতের (১৭৫৭-১৯৪৭) সরকারি চাকুরিতে নারীদের সংখ্যা সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য নেই। তবু, এমন ধারণা করা যায় যে, ঐ সময়কালে প্রশাসনে তাদের সংখ্যা ছিল নগণ্য। প্রকৃতপক্ষে প্রাথমিক বছরগুলিতে আইনগতভাবেই উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক পদে নারীদের প্রবেশে বাধা দেয়া হতো।

১৯৪৭ সালের পর ব্রিটিশদের সৃষ্ট সরকারি চাকুরির পদ্ধতি পাকিস্তান অপরিবর্তিত রেখেছিল। নারীরা নিখিল পাকিস্তানভিত্তিক কোনো সার্ভিস, যেমন সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) এবং পুলিশ সার্ভিস অব পাকিস্তান (পিএসপি) ইত্যাদিতে যোগদানের অযোগ্য বিবেচিত হতো।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও সব ধরনের পেশায় যোগদানের জন্য উতসাহিত করা হয়। বিশ শতকের সত্তরের দশকের গোড়া থেকেই নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অন্তর্ভূক্তি ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সরকার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আইনের বিধান, নির্বাহী আদেশ, নীতি সংশোধন ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে নারীর সামাজিক পদমর্যাদা উন্নয়ন ও অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য গত তিন দশকে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

এ সব পদক্ষেপের মধ্যে ছিল ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ ঘোষণা, জাতিসংঘ ঘোষিত নারীদশক (১৯৭৫-৮৫), নারীদের বিরুদ্ধে সকল ধরনের বৈষম্যের বিলুপ্তি বিষয়ক জাতিসংঘ সনদ।

বাংলাদেশের সংবিধান যে কোন সরকারি চাকরি ও কর্মে অংশগ্রহণের জন্য নারীদের সমান অধিকার প্রদান করে। প্রশাসনে নারীদের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলোর অন্যতম হচ্ছে সরকারি চাকরিতে নারীদের নিয়োগের জন্য চাকরির কোটা সংরক্ষণ। ১৯৭২ সালে নারীদের জন্য প্রথম কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু করা হয়।

বর্তমানে মেধাভিত্তিক নিয়োগের অতিরিক্ত গেজেটেড পদগুলির ১০ শতাংশ এবং নন-গেজেটেড পদসমূহের ১৫ শতাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তাই মেধা ও লিঙ্গের ভিত্তিতে নারীরা সরকারি চাকরিতে যোগদান করতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা, উপজাতি, আনসার ও ভিডিপি'র জন্য সংরক্ষিত অন্যান্য কোটার মাধ্যমেও তারা সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদের শতকরা ৬০ ভাগ নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখারও একটি বিধান রয়েছে।

সকল খাতে নারীদের সমান প্রতিনিধিত্বের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য শাসনতান্ত্রিক বিধান থাকলেও প্রশাসনে নারীদের নিয়োগের অবস্থা প্রান্তিক পর্যায়েই রয়ে গেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর সরকারি চাকরিতে নারীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত মাত্র ১৪১৭ জন নারীকে ১৫টি ক্যাডারে নিয়োগ করা হয়েছে এবং অধিকাংশ নারীকে এ ক্যাডারগুলির মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার এবং অধস্তন পর্যায়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সরকারি চাকরির বিভিন্ন ক্যাডারে মোট চাকরিজীবীর মাত্র ৪.৮৯ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে এসব নারী। কোটা নীতি প্রচলনের পূর্বে সরকারি চাকরিজীবীর (সরকারি খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেকে) সংখ্যা ছিল ৩,৩১,১৮৯। এর মধ্যে মাত্র ২৩,৪২০ জন মহিলাকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দান করা হয়েছিল। বর্তমানে সরকারি খাতের মোট ৯,৭১,০২৮ জন চাকরিজীবীর মধ্যে আছেন মাত্র ৮৩,১৫৬ জন নারী। প্রায় ৮.৫৬ শতাংশ নারী চাকরিজীবী এবং এদের ৯০ শতাংশের অধিক (৭৪,৮৮৪) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।

অর্থাত সরকারি চাকরিতে বিপুল সংখ্যক নারী নিম্নবেতনভূক ও করণিক পদের কর্মচারি। কিন্তু শীর্ষ প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে অবস্থানরত নারী চাকরিজীবীগণ (শতকরা প্রায় ১০ ভাগ) অপেক্ষাকৃত বেশি মর্যাদা ও বেতন লাভ করলেও তাদের সংখ্যা নগণ্য। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদগুলির ১০ শতাংশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলির ১৫ শতাংশ সংরক্ষিত করা সত্ত্বেও এ ধরনের অবস্থা দেখা যাচ্ছে।

সচিবালয়ে নারী কর্মচারীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলিতে ৮৬১১ জন কর্মচারির মধ্যে মাত্র ৭৮৪ জন নারী (প্রায় ৯.১ শতাংশ)। ২০৭০ জন গেজেটেড কর্মকতার মধ্যে মাত্র ২১২ জন নারীকে ১ম ও ২য় শ্রেণিতে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। ৬৫৪১ জন সরকারি কর্মচারির মধ্যে প্রায় ৫৭২ জন নারীকে নন-গেজেটেড কর্মকর্তা ও কর্মচারি পদে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব ও উপ-সচিব পদে কর্মরত নারীদের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040