দূরন্ত শিশুকে পরিচালনার কৌশল
  2016-06-12 10:46:23  cri

শিশু মানেই দুরন্ত, চঞ্চল। পৃথিবীর সমস্ত চঞ্চলতা যেন তাদের মাঝে ভর করে পৃথিবীকে প্রাণচঞ্চল করে তোলে। অনেকেই শিশুদের দুষ্টুমি ও চঞ্চলতা নিয়ে আক্ষেপ করলেও চঞ্চলতাই কিন্তু প্রতিটি প্রি-স্কুল শিশুর বৈশিষ্ট্য।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রি-স্কুল বা প্রাক-বিদ্যালয়গামী শিশুর বয়সসীমা সাধারণভাবে আড়াই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত। অনেকের মতে, ৩-৫ বছর বয়সীকে প্রাক-বিদ্যালয়গামী শিশু বলা হয়ে থাকে।

শিশু পরিচালনায় জন্য প্রতিটি বাবা-মার সঠিক ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকার প্রয়োজন। শিশুকে আদেশ বা নির্দেশ যাই দেয়া হোক না কেন তা নেতিবাচক বলা যাবে না, ইতিবাচক বলতে হবে। যেমন-শিশু ঘর নোংরা করলে তাকে বকা বা নিষেধ না করে ঘর ময়লা করার পর তাকে নিয়েই ঘর পুনরায় গোছানো যেতে পারে। এর থেকে শিশু সৌন্দর্য সম্পর্কেও ধারণা পাবে।

এ বয়সী শিশুকে সব কিছু হাতে হাতে শেখানোর চেয়ে তাকে ছেড়ে দিতে হবে। শিশু তার চাহিদা অনুযায়ী গ্রহণ করবে। যেমন, মা শিশুর পিছনে দুধের বোতল নিয়ে ঘুরবে না। বরং শিশু নিজেই মায়ের কাছে দুধের বোতল খুঁজবে।

শিশুর সঙ্গে এমন কোনো আচরণ করা যাবে না যা তাকে লজ্জিত করবে বা ভীত করবে। অনেক অভিভাবক মনে করেন লজ্জা দিলে শিশু কোনো কাজ দ্রুত শিখে। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। যেমন, শিশু রাতে ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করে দিলে সকালে উঠে যদি তিরস্কারের মুখে পড়ে তবে সে ভীত হয়ে পড়বে। লজ্জা দিলে শিশুর ব্যক্তিত্বে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। শিশুরা সাধারণত দুর্বল চরিত্রের হয়।

আমরা জানি প্রতিটি শিশু আলাদা। প্রতিটা শিশুর রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট। তাই তাদের আলাদাভাবেই চিন্তা করতে হবে। প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার জন্য কখনোই অন্যের সঙ্গে তাদের তুলনা করা যাবে না। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়।

নিজেদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের মধ্যে থেকে যতদূর সম্ভব শিশুকে তার নিজের পছন্দ অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে। যেমন, শিশু যদি নিজের পছন্দের কবিতা পড়তে চায় তাহলে নতুন কবিতা নিয়ে তাকে চাপ দেয়া যাবে না।

চারু ও কারুকলার কোনো ধরণের জিনিস শিশুর সামনে মডেল হিসেবে আনা যাবে না। কারণ মডেল দেখলে সে অনুকরণ প্রিয় হয়ে উঠবে। আর তার সৃজনশীল কাজে বাধা আসবে। যেমন-তাকে বৃত্ত, ত্রিভুজ এই জাতীয় জ্যামিতির চিত্রের মডেল না দিয়েই বলতে হবে গোল করে আঁক, লম্বা একটা দাগ দাও প্রভৃতি।

শিশুদের স্বনির্ভর করার জন্য ন্যূনতম সাহায্য করতে হবে। যেমন-শিশু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চাইলে তাকে উঠতে দিতে হবে। কিন্তু তার সুরক্ষার জন্য পিছনে থাকা বা একটা হাত ধরে থাকতে হবে। যেন শিশু পড়ে গিয়ে ব্যথা না পায়।

শিক্ষণ দ্রুত করার জন্য পুরস্কার একটি মাধ্যম। যেমন, আপনার একটি ছোট হাসিও শিশুর জন্য পুরস্কার হতে পারে। শিশু যাই করুক না কেন তাকে হাত তালি দিয়ে, মুচকি হেসে, সাবাশ বলে, কোলে তুলে নিয়ে, গালে চুমু দিয়ে উৎসাহিত করতে হবে।

যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য অভিভাবকদের দুরদর্শিতা খুবই প্রয়োজন। যেমন, শিশুর কাছাকাছি বিপদজনক কিছু থাকলে আগেই মাকে সতর্ক থাকতে হবে। ঘরে সুইচ বোর্ড শিশুর নাগালের মধ্যে হলে মাকে বিপদ সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা করে রাখতে হবে। সেখানে টেপ বা ফার্নিচার জাতীয় কিছু রাখতে হবে যেন শিশু তা দেখতে না পায়।

কোনো কাজে যদি সীমারেখা নির্দেশ করতে হয় তাহলে শিশুকে একদম স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। যেমন-ছাঁদের কিনারায় শিশু যেতে পারবে না তা তাকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। আর এমন অবস্থায় শিশু যেন তার কথা শুনে তার জন্য অন্য বড় সদস্যাদেরও একই নিয়ম মানতে হবে।

সবসময় শিশুর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথা সবার প্রথমেই মনে রাখতে হবে। যেমন-শিশু পানি নিয়ে দুষ্টামি করতে চাইলে তার স্বাস্থ্য হানীর সম্ভাবনা থাকলে তাকে পানির পরিবর্তে অন্য কিছু দিয়ে খেলতে দিতে হবে।

পর্যবেক্ষণ করে শিশুকে বুঝতে হবে যে শিশুর আকাঙ্ক্ষা কি, তার চাহিদা কি। শিশুর যে কোনো ধরনের অযাচিত আচরণের পিছনের কারণ কি। এসব বিষয়গুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে অভিভাবককে। যেমন-শিশু রাগ দেখাচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই। এই ক্ষেত্রে আদরের ভাষা দিয়েই কেবল শিশুকে বোঝা সম্ভব।

শিশু এমন অনেক কিছুই করতে চায় যা দেখে বড়রা মনে করেন শিশুর জন্য এটা ঠিক নয়। এমন ক্ষেত্রেও 'না' কথাটি এড়িয়ে তাকে অন্য কিছু করতে উৎসাহ দিতে হবে। শিশুর সঙ্গে কোনো বিষয়ে পেড়ে না উঠলে বকা, মারধর দেবেন না। শিশুর জন্য ক্ষতিকর কাজ ছাড়া অযথা অন্যান্য কাজ থেকে তাকে ফিরানোর চেষ্টা করবেন না।

যেমন-শিশু গেট খুলতে গেলে আপনি বারণ করছেন। রিমোট হাতে নিলেও আপনি তা নিয়ে নিচ্ছেন। হয়তো শিশুর পছন্দের চ্যানেলটিই ছেড়ে দিলেন। শিশু ঘর ময়লা করছে তাই তাকে খেলতে দিলেন না। এ সকল কাজে শিশুর কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল না। তবুও আপনি তাকে বাঁধা দিলেন।

এরপর দেখা যাবে শিশু ছুরি ধরলে তখনও আপনি বাঁধা দিলেন। বিদ্যুত বোর্ডে হাত দিলে ধমক দিলেন। এ সব কাজে বাধা দেয়ার পরও শিশু এ থেকে কিছুই শিখতে পারলো না। কারণ তাকে সকল কাজেই বাধা দেয়া হয়। তাই তার জন্য ক্ষতিকর কোনটি তা সে বোঝে না। আর এসবের কারণে শিশুর মেজাজ হয় খিটখিটে, মারমুখী।

শিশুর যে কোনো আচরণের জন্য শিশু দোষী নয় বরং তার পরিবেশ দায়ী। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার সব সময়ই হয়। কিন্তু তাই বলে শিশুকে উত্যক্ত করে বা নিজের মন মত পরিচালনা করে সুদূর প্রসারী কোনো ফল পাওয়া সম্ভব নয়।

(উর্মি/মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040