বেইজিংয়ে দং মেংহাওয়ের ঐতিহ্যবাহী কফি শপ
  2016-06-09 18:11:15  cri

দং মেংহাও বেইজিংয়ে বসবাস করা তাইওয়ানের মানুষ। তিনি কফি শপের প্রধান, খাদ্য বিশ্লেষক ও লেখক হিসেবে পরিচিত। তিনি 'দান দান ইন বেইজিং' ওয়েবসাইটে খাবার সম্পর্কে অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। তার ফ্যানের সংখ্যা কয়েক লাখ। তিনি 'তাইওয়ান ফ্রি ভ্রমণ' নামে একটি বইও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ নিজের 'কেফি দে সোফা' নামের কফি শপে।

কাজের জন্য দং মেং হাও ২০০০ সালে বেইজিংয়ে আসেন। চীনের মূলভূভাগে তাইওয়ানের মানুষদের জন্য আরও বেশি খাবার ও বসবাসের তথ্য সরবরাহের জন্য তিনি ২০০৩ সাল থেকে খাবার ব্লগ লেখা শুরু করেন। তার প্রবন্ধের কথাগুলো বেশ মজার ও সুন্দর। ২০০৮ সালের শেষ দিকে ছেংদু ও শাংহাই ভ্রমণ শেষে তিনি বেইজিংয়ে বসবাস এবং নিজের ব্যবসা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। তার দাদা বেইজিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেইজিং অনেক পছন্দ করেন এবং তার মা ও বড় ভাই তাইওয়ানের বিখ্যাত্ শেফ। তাই দাদার পুরাতন বাসায় তাইওয়ান বৈশিষ্ট্যময় কফি শপ খোলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'কফি শপ খোলার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এক, বেইজিংয়ে খাবার সমৃদ্ধ। দুই, আমি দাদা এবং দাদির কাছে বড় হয়েছি। দাদার জন্মস্থান হলো বেইজিং। সেজন্য আমি বেইজিংয়ে ফিরে যেতে চাই। তিন, আমি এবং আমার স্ত্রী কফি খেতে পছন্দ করি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, আমার মা ও বড় ভাই তাইওয়ানের বিখ্যাত শেফ।'

কফি শপটি দং মেংহাও নিজে ডিজাইন করেছেন। এখন পর্যন্ত কফি শপটি আগের মতোই রয়েছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি। কফি শপের দেয়ালে সাত বছর আগের ছবি ঝুলছে। তিনি বলেন, আমি আশা করি আমাদের পুরাতন গ্রাহকরা যখন কফি শপে আসবেন তখন বাড়ির অনুভূতি পাবেন। এ ছাড়া আমি একটি শতবর্ষী কফি শপ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কফি শপে এক জন পুরাতন স্টাফ রয়েছে, এটি হল দং মেংহাও'র কুকুর। নাম হল তানচু। দং মেংহাও তানচুর ছবি দিয়ে কফি শপের লোগো ডিজাইন করেছেন। তিনি বলেন, 'তানচু আমার চেয়ে আরও বেশি জনপ্রিয়। আগে আমার কফি শপের লোগোতে ইংরেজিতে লেখা ছিল 'কেফি দে সোফা।' কিন্তু এখন আমি তানচু'র ছবি দিয়েছি। ২০০৯ সাল থেকে তানচু কফি শপে রয়েছে। হয়ত দশ বছর পর তানচু আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু আমি আশা করি, কফি শপ তখনও থাকবে, তানচুর লোগোসহ। আমি চাই আমার কফি শপ একটি ঐতিহাসিক শপে পরিণত হোক। আমার ছেলে অতিথিদের জানাবে কেন 'কেফি দে সোফা'র লোগোতে একটি কুকুর রয়েছে।

কফি শপটি বেইজিংয়ের ডাউনটাউনে অবস্থিত হলেও শপের ভেতরের পরিবেশ অনেক শান্ত। কিন্তু কেফি দে সোফায় কোনো সোফা নেই। দং মেংহাও মনে করেন, সোফা শব্দটির সঙ্গে বিশ্রামের সম্পর্ক আছে। তিনি আশা করেন, অতিথিরা এখানে শান্তি পাবেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমার মনে হয়, কফি শপে সাদা, কাঠের রঙ ও সবুজ এ তিনটি রং রয়েছে, যা জীবনীশক্তির প্রতীক। আমার শপ অনেক ছোট, সেজন্য আমি আয়না, সাদা ও কাঠের রঙ দিয়ে এটি সাজিয়েছি। সবুজ রংয়ে প্রাণশক্তির ছোঁয়া রয়েছে। আর সোফা হলো শান্তি ও বিশ্রামের সঙ্গে জড়িত।'

২০১৪ সালে দং মেংহাও আরেকটি বড় কফি শপ খোলার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বেইজিংয়ের একটি বিরাট শপিং মালে তার দ্বিতীয় কফি শপটি খোলেন। কিন্তু সেখানে তার ব্যবসা লাভজনক হয়নি। তবে তার ব্যর্থতা থেকে তিনি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং সার্বিকভাবে পুরাতন শপে ব্যবসায় কাজে লাগাবার চেষ্টা করেন। তিনি এখন নিজের কফি শপে আরও উন্নত মানের কফি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি কফি খেতে পছন্দ করি। এ ছাড়া আমরা জানি এখন চীনের মূলভূভাগ সারা বিশ্বের কফি শিল্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। চীনের মূলভূভাগের বাজার এখন বেশ শক্তিশালী। এ বাজারের বিরাট সুপ্ত শক্তি রয়েছে এবং চীন হলো বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা দেশ। তাই আমি আমার কফি শপের পেশাগত উন্নয়ন করতে চাই।'

২০১৫ সাল থেকে দং মেংহাও সিয়ামেন শহরের একটি কফি বিন কারখানার সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছেন। তিনি তার কফি ব্যবসা আরও ভালো করতে চান। তিনি বলেন, 'আমার একটি স্বপ্ন হলো, নিজের কফি শপে কফি বিনের বেকারি করি। আগে আমার অর্থের অভাব ছিল। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে বেইজিংয়ের মানুষ কফির মানের ওপর বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই আমি এ ধরণের কফি শপ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

দং মেংহাও'র কফি শপটি সাত বছর ধরে চলছে। তিনি সেবা, মানদণ্ড ও পরিবেশ উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন এবং 'কেফি দে সোফা'কে একটি শতবর্ষী কফি শপে পরিণত করবেন। এটাই তার স্বপ্ন।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040